সনিয়া গান্ধী ও রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে চার্জশিট দায়ের করে নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহেরা গান্ধী পরিবারের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে চাইছেন বলে কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছেন। কংগ্রেসের আশঙ্কা, বিজেপি সরকার আসলে মানুষের মনে একটা ধারণা তৈরি করতে চাইছে যে, গান্ধী পরিবারের বিরুদ্ধে ইডি যখন চার্জশিট দায়ের করেছে, তখন কিছুটা আর্থিক নয়ছয় নিশ্চয়ই হয়েছে। কংগ্রেস নেতারা বলছেন, এর আগে বফর্স কেলেঙ্কারির অভিযোগ ওঠে, ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনের আগে ইউপিএ জমানার কেলেঙ্কারির দিকে আঙুল তোলে বিজেপি। এখন কংগ্রেস যখন সংগঠন মজবুত করে ২০২৯-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, ঠিক সেই সময়ে গান্ধী পরিবারের ভাবমূর্তিতে ফের কালি ছেটানোর চেষ্টা শুরু হয়েছে।
কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতা বলেন, ‘‘ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় ইডি চার্জশিট দায়ের করার পরে শুনানি চললেই বিষয়টি শিরোনামে আসবে। মানুষের মনে গান্ধী পরিবার নিয়ে বিরূপ ধারণা তৈরি হবে। সংগঠন চাঙ্গা করার বদলে রাহুলরা এই মামলার রাজনৈতিক ও আইনি মোকাবিলায় ব্যস্ত রাখতে চাইছে।’’
চার্জশিট দায়ের হলেও তিনি যে পিছু হটবেন না, তা বোঝাতে রাহুল আজ গুজরাতে দলীয় কর্মীদের সম্মেলনে বলেছেন, গোটা দেশ জানে, একমাত্র কংগ্রেসই বিজেপিকে হারাতে পারে। ২০২৭-এ গুজরাতের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে হারানোর প্রস্তুতিতে জোর দিয়ে রাহুল বলেন, কংগ্রেসের সাফল্যের রাস্তা গুজরাতের মধ্য দিয়েই যাবে। এটা শুধু রাজনৈতিক লড়াই নয়। কংগ্রেস ও বিজেপি-আরএসএসের মধ্যে মতাদর্শগত লড়াই।
ইডি সনিয়া-রাহুল-সহ কংগ্রেস নেতাদের বিরুদ্ধে যে চার্জশিট দায়ের করেছে, তাতে আর্থিক নয়ছয় প্রতিরোধ আইনের ৩ ও ৪ নম্বর ধারায় তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। এই ধারায় সর্বোচ্চ সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। কংগ্রেস নেতারা অবশ্য মনে করছেন, সনিয়া বা রাহুলকে গ্রেফতার করার মতো পদক্ষেপ ইডি করবে না। তা করা হলে তিন বছর আগেই করা হত, যে সময়ে তাঁদের ইডি দফতরে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। আসলে ইডি-র হাতে এই মামলায় চার্জশিট দায়ের করার জন্য যে এক বছরের সময় ছিল, তার মেয়াদ ৯ এপ্রিল শেষ হয়ে গিয়েছে। তাই তার আগে চার্জশিট দায়ের হয়েছে। মঙ্গলবার দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ কোর্টের একটি নির্দেশের ফলে বিষয়টি জনসমক্ষে এসেছে।
জমির হাতবদল করে আর্থিক নয়ছয়ের মামলায় আজ ইডি দফতরে ফের রবার্ট বঢরাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। মঙ্গলবার রবার্ট হেঁটেই ইডি দফতরে পৌঁছেছিলেন। আজ তাঁকে স্ত্রী প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা গাড়িতে করে ইডি দফতরে ছেড়ে আসেন। ইডি দফতরে ঢোকার আগে রবার্ট ও প্রিয়ঙ্কা সকলের সামনে পরস্পরকে আলিঙ্গনও করেন। প্রায় ৬ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পরে ইডি রবার্টকে ফের বৃহস্পতিবার হাজির হতে বলেছে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)