—প্রতীকী ছবি।
ছেলেমেয়ের পড়াশোনা বা যাতায়াত কিংবা রান্নার গ্যাস কি বিদ্যুতের বিল নয়। গড়পড়তা বাঙালির এখন সব থেকে বেশি টাকা খরচ হচ্ছে চিকিৎসার পিছনে। তা সে শহর হোক বা গ্রাম। কেন্দ্রীয় সরকারের সমীক্ষা বলছে, খাবারদাবার বাদ দিলে প্রতি মাসে সংসারে যে খরচ হয়, তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের মানুষের চিকিৎসার পিছনে সব থেকে বেশি টাকা চলে যায়। আর খাবারদাবারের মধ্যে গড়পড়তা বাঙালি এখন সব থেকে বেশি খরচ করে রেস্তরাঁ থেকে কেনা খাবার, প্যাকেটবন্দি খাবার, নানা রকম পানীয়ের পিছনে। অর্থাৎ রোগ আর ভোগই কার্যত বলা যায় বাঙালির ট্যাঁক শাসন করছে!
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান মন্ত্রক পারিবারিক খরচ নিয়ে দেশ জুড়ে সমীক্ষার বিস্তারিত রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। ২০২২-এর অগস্ট থেকে ২০২৩-এর জুলাই মাস পর্যন্ত এই সমীক্ষা চালানো হয়েছিল। সেই সমীক্ষাই বলছে, গোটা দেশের মধ্যে চিকিৎসার পিছনে পশ্চিমবঙ্গের শহরাঞ্চলের মানুষের মাথাপিছু খরচ সব থেকে বেশি। আর কোনও রাজ্যে শহরের মানুষকে চিকিৎসার পিছনে এত টাকা খরচ করতে হয় না। গ্রামাঞ্চলে একমাত্র কেরলে পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় চিকিৎসার পিছনে খরচ বেশি। এই বেশি খরচের উৎস কী? রোগভোগের প্রকোপ বেশি হওয়া না কি স্বাস্থ্য পরিষেবার খরচ বেশি হওয়া? অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, এর উত্তর পেতে গেলে আরও গবেষণা প্রয়োজন। শুধুমাত্র খরচের হারের পরিসংখ্যান থেকে এর ব্যাখ্যা পাওয়া সম্ভব নয়।
তবে চিকিৎসার পিছনে খরচের পাশাপাশি খাবারদাবারের মধ্যে পেটরোগা বাঙালি কিন্তু সবথেকে বেশি টাকা খরচ করেন ভুজিয়া-নিমকি-চিপস-নাচোস-নুডলস থেকে কেক-পেস্ট্রি, বিস্কুট, চকলেটের মতো প্যাকেটবন্দি খাবারে। চা-কফি-ঠান্ডা পানীয়-ক্যানবন্দি ফলের রসে এবং রাস্তা থেকে বা রেস্তরাঁ থেকে কেনা খাবারে। অর্থাৎ মাছ-মাংস-ডিমের থেকেও বাঙালির এখন এই সব তথাকথিত ‘অস্বাস্থ্যকর’ খাবারের পিছনে খরচ বেশি। রাজ্যে শহরের মানুষ খাবারদাবারের পিছনে মাসে মাথাপিছু এক হাজার টাকা খরচ করলে, তার মধ্যে ২৫০ টাকা খরচ করে রেস্তরাঁর খাবার, প্যাকেটবন্দি খাবার ও চা-কফি-ঠান্ডা পানীয়ে। ১৮৯ টাকা খরচ করে মাছ-মাংস-ডিম কিনতে। চাল-ডাল-গম কিনতে খরচ করে ১১৪ টাকা।শাকসব্জি কিনতে ১০৮ টাকা। আর দুধ ও দুধের তৈরি জিনিস কিনতেমাত্র ৯৬ টাকা।
এটা পশ্চিমবঙ্গের একার বৈশিষ্ট্য নয়। গোটা দেশের মানুষই এখন রেস্তরাঁর খাবার, প্যাকেটবন্দি ভাজাভুজি ও নানা রকম পানীয়ের পিছনে বেশি খরচ করছেন। তবে উত্তর ও পশ্চিম ভারতের রাজ্যগুলির ক্ষেত্রে মাছ-মাংস-ডিমের জন্য খরচ আরও কম। নিরামিষাশী হওয়ার কারণে তুলনায় দুধ ও দুধের তৈরি জিনিসের পিছনে খরচ বেশি।
কী বলছে ‘হাউসহোল্ড কনজ়াম্পশন এক্সপেন্ডিচার সার্ভে’র রিপোর্ট? সেখানে দেখা যাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গের মানুষ এখন মাস গেলে মাথাপিছু এক হাজার টাকা খরচ করলে তার মধ্যে ৪৫০ টাকা খরচ করে খাবারদাবারে। এটা শহরের ক্ষেত্রে। গ্রামের মানুষের খরচ আর একটু বেশি, এক হাজার টাকায় ৫১০ টাকা। শহর হোক বা গ্রাম, দু’ক্ষেত্রেই জাতীয় গড়ের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গে মানুষের খাবারের পিছনে খরচ বেশি। বাকি সংসার খরচের মধ্যে সবথেকে বেশি টাকা ব্যয় হয় চিকিৎসার খরচে। খাবারদাবারের পিছনে খরচ করার পরে যদি মাথাপিছু সংসার খরচ এক হাজার টাকা হয়, তার মধ্যে ১৫০ টাকা খরচ হয় চিকিৎসায়। এটা শহরের ছবি। গ্রামের ক্ষেত্রে খরচ এক হাজার টাকায় ১৬৮ টাকা।
সমীক্ষা অনুযায়ী, খরচের এই ধরনের নিরিখে গোটা দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ ব্যতিক্রম। কারণ জাতীয় গড় অনুযায়ী, আমজনতার সবথেকে বেশি টাকা খরচ হয় যাতায়াতের পিছনে। তার পরে বেশি খরচ হয় মোবাইল, টিভি, ফ্রিজের মতো জিনিসপত্র কিনতে গিয়ে। পশ্চিমবঙ্গে সবথেকে বেশি খরচ চিকিৎসায়। চিকিৎসার পরে রাজ্যের মানুষের মাথাপিছু সবথেকে বেশি খরচ হয় জ্বালানি ও বিদ্যুতের বিলে। গ্রাম ও শহরে একই চিত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy