রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। —ফাইল চিত্র।
‘রুট-রিলে ইন্টারলকিং’ ব্যবস্থাকে এত দিন লৌহবাসরের মতোই নিরাপদ বলে জানতেন রেলকর্তারা। কিন্তু, করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার পরে সেই বজ্র-কঠিন ব্যবস্থাতেও এ বার সিঁদ কাটার ভূরি ভূরি নজির সামনে আসতে শুরু করেছে।
এই অবস্থায় শনিবার দিল্লি ডিভিশনের বিভিন্ন কন্ট্রোল রুম পরিদর্শন করে কর্মী এবং আধিকারিকদের সঙ্গে ঘণ্টা তিনেক বৈঠক করলেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব স্বয়ং। ওই বৈঠকের পরে রেলের সিগন্যালিং এবং টেলিকমিউনিকেশন বিভাগের কর্মী এবং আধিকারিকদের ১৫ দফা নির্দেশও দিয়েছেন মন্ত্রী। সিগন্যালিং এবং টেলিকমিউনিকেশন ব্যবস্থা ট্রেন চলাচলের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র হিসাবে পরিচিত।
করমণ্ডল এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনায় ঘুম ছুটেছে রেল প্রশাসনের। রেলকর্মীদের একাংশের দ্রুত কাজ সেরে ফেলার ‘শর্ট-কাট’ মনোভাবের সামনে দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কায় চোখ ছানা-বড়া রেল প্রশাসনের কর্তাদের। রেলকর্তাদের মতে, মরিয়া হয়ে রেলের ম্যানুয়াল উপেক্ষা করে ‘শর্ট-কাট’-এ কাজ করার ওই প্রবণতা ঠেকাতে আসরে নামতে হয়েছে স্বয়ং রেলমন্ত্রীকেই।
রেল সূত্রের খবর, মন্ত্রীর নির্দেশ, সংক্ষেপে কাজ সারার মানসিকতা বর্জন করা ছাড়াও কঠোর ভাবে ম্যানুয়াল অনুসরণ করতে হবে। রক্ষণাবেক্ষণের মতো জরুরি কাজের জন্য ‘ব্লক’ (ট্রেন চলাচল বন্ধ অথবা নিয়ন্ত্রণ করার ব্যবস্থা) নেওয়ার আগাম পরিকল্পনা করার কথা বলেছেন মন্ত্রী। যাত্রীদের হয়রানি এড়াতে বছরের গুরুত্বপূর্ণ রক্ষণাবেক্ষণের ক্যালেন্ডার প্রকাশ করার কথাও রয়েছে নির্দেশে। কোথাও টানা তিন দিনের বেশি রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চললে সেখানে প্রিন্সিপাল পদমর্যাদার অফিসারকে সশরীরে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
সহকারী ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজারদের নিয়মিত ডিভিশনাল কন্ট্রোল রুমে সুরক্ষা বৈঠক করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কাজের বিধিবদ্ধ পদ্ধতি নিয়ে কর্মীদের সচেতন করার পাশাপাশি তাঁরা যাতে চাপের মধ্যে কাজ করতে বাধ্য না হন, তা-ও দেখার কথা বলেছেন রেলমন্ত্রী। কাজে উৎসাহ বাড়াতে ভাল কাজের ক্ষেত্রে কর্মীদের পুরস্কার দেওয়ার কথাও বলেছেন তিনি।
বস্তুত, করমণ্ডল এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনার আগেও যে বিভিন্ন জ়োনে অন্তত এমন পাঁচটি এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, তার নজির সম্প্রতি রেল বোর্ডের এপ্রিল মাসের একটি চিঠিতে উঠে এসেছে। যেখানে সিগন্যালিং এবং টেলিকমিউনিকেশন বিভাগের কর্মীরা রক্ষণাবেক্ষণের কাজ সম্পূর্ণ করার পরে পয়েন্টের অবস্থান পরীক্ষা না করেই তড়িঘড়ি বৈদ্যুতিন ইন্টারলকিং ব্যবস্থার সংযোগ চালু করেছেন। ওই সব ক্ষেত্রে সংযোগের ত্রুটি এবং পয়েন্টের অস্বাভাবিক আচরণের কারণে দুর্ঘটনা ঘটার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল বলে অভিযোগ। যদিও সেই সব দুর্ঘটনা অন্য কারণে এড়ানো সম্ভব হয়েছে।
বিধি উপেক্ষা করে কাজ করার মানসিকতার ফলে নিরাপদ রেল চলাচলের সামনে গুরুতর বিপদের আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে রেলমন্ত্রীর লিখিত নির্দেশে। বহু ক্ষেত্রে কর্মী এবং আধিকারিকদের সতর্ক করা সত্ত্বেও বাস্তবে পরিস্থিতি বদলাচ্ছে না বলে অভিযোগ করা হয়েছে ওই চিঠিতে। রক্ষণাবেক্ষণের কাজ সম্পূর্ণ করার পরেই তাড়াহুড়ো করে তার জুড়ে সিগন্যালিং এবং রুট-রিলে ব্যবস্থাকে সচল করা হয়। এমন কাজ না করে সব কিছু পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়ার পরেই এগোনোর কথা বলা হয়েছে।
এই সব তথ্য উঠে আসার ফলে প্রশ্ন উঠছে, এত দিন যে ভাবে রুট-রিলে ব্যবস্থাকে ত্রুটিশূন্য বলা হয়েছে, তা কি তবে ভুল? রেল কর্তৃপক্ষ এই ব্যবস্থাকে এখনই বাতিল করার কথা বলছেন না। তবে, সর্ষের মধ্যে কী ভাবে ভূত ঢুকল, আপাতত তার সুলুক সন্ধান করতে চান তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy