E-Paper

নিট কেলেঙ্কারি: উদ্ধার আধপোড়া ‘প্রশ্ন’, অ্যাডমিট কার্ডের জেরক্স! হিমশৈলের চূড়া দেখছেন গোয়েন্দারা

তদন্তকারীদের আশা, এনটিএ সাহায্য করলে আরও অনেক কিছুই সামনে আসবে। যদিও সেই সাহায্য মিলছে না বলে দাবি তাঁদের। আর এ নিয়ে রীতিমতো ক্ষুব্ধ তদন্তকারীদের একটা বড় অংশ।

প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০২৪ ০৭:৪৭
Share
Save

কয়েকটি পরীক্ষা কেন্দ্রের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া আধপোড়া কিছু ‘প্রশ্নপত্র’।

পরীক্ষা-মাফিয়াদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া ১১ জন পরীক্ষার্থীর অ্যাডমিট কার্ডের প্রতিলিপি।

অন্তত তিন জন ধৃতের লিখিত স্বীকারোক্তি।

প্রাথমিক ভাবে এই তিন সূত্রের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে বিহার পুলিশের আর্থিক অপরাধদমন শাখার (ইওইউ) তদন্তকারীদের একটি অংশের দাবি, এখনও পর্যন্ত যেটুকু সামনে এসেছে, তা নিট-কেলেঙ্কারি নামক হিমশৈলের চূড়া মাত্র! আজ কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান স্পষ্ট জানিয়েছেন, নিট দুর্নীতিতে আয়োজক সংস্থা এনটিএ-র আধিকারিকেরা যদি জড়িত থাকেন, কাউকে রেয়াত করা হবে না। সে ক্ষেত্রে কড়া পদক্ষেপের ইঙ্গিত দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।

তদন্তকারীদের আশা, এনটিএ সাহায্য করলে আরও অনেক কিছুই সামনে আসবে। যদিও সেই সাহায্য মিলছে না বলে দাবি তাঁদের। আর এ নিয়ে রীতিমতো ক্ষুব্ধ তদন্তকারীদের একটা বড় অংশ। বিহার পুলিশ সূত্রের খবর, অন্তত তিন বার নোটিস পাঠিয়েও এনটিএ-র কাছ থেকে অতি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এবং নথি হাতে পাননি তদন্তকারী ইওইউ-এর আধিকারিকেরা। না মিলেছে মূল প্রশ্নপত্র, না মিলেছে ওই ১১ পরীক্ষার্থী সম্পর্কে কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য, যা রয়েছে নিট-কর্তৃপক্ষের কাছে। ফলে আধপোড়া ‘প্রশ্নপত্র’ই পরীক্ষায় এসেছিল কি না, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারছেন না তদন্তকারীরা। মূল প্রশ্নপত্রের সঙ্গে ওই আধপোড়া প্রশ্নপত্রের মিল পাওয়া গেলে, চলতি বছর নিটে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ প্রমাণিত হবে। আর যে ১১ জন পরীক্ষার্থীর সম্পর্কে বিশদ তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে, তা পাওয়া গেলে গোটা বিষয়টির সঙ্গে আর্থিক কেলেঙ্কারির পরিমাণ সম্পর্কে বহু তথ্য মিলবে। কিন্তু নিট কর্তৃপক্ষ কোনও তথ্যই না দেওয়ায় বিহার পুলিশের তদন্ত কিছুটা থমকে রয়েছে। যদিও তারা হাল ছাড়তে নারাজ। ফের নিট কর্তৃপক্ষের কাছে এই বিষয়গুলি জানতে চেয়ে নোটিস পাঠানোর পরিকল্পনা করেছেন তদন্তকারীরা। সব মিলিয়ে এনটিএ-র ভূমিকা নিয়ে বড় মাপের প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

নিট পরীক্ষার্থীদের একটা অংশ আপাতত বিহার পুলিশের দিকেই তাকিয়ে। তাঁদের আশা, তদন্ত ঠিক পথে এগোলে চলতি বছর নিট কেলেঙ্কারির অনেক কিছুই ফাঁস হবে। পরীক্ষার্থীদের অন্য একটি অংশ আবার শুধু বিহার পুলিশের ভরসায় থাকতে নারাজ। বিপুল সংখ্যক পরীক্ষার্থী এবং তাঁদের পরিবারের দাবি, সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে তদন্ত করুক সিবিআই। পাশাপাশি এ বছরের পরীক্ষা বাতিল করে নতুন করে পরীক্ষা নেওয়া হোক। এনটিএ-র বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন পরীক্ষার্থী এবং তাঁদের অভিভাবকেরা। সব মহলেরই বক্তব্য, গোটা পরীক্ষাপর্বে অনিয়ম এবং প্রশ্নফাঁসের পিছনে এনটিএ-র বড় ভূমিকা আছে।

এরই মধ্যে নিটে‌ কোনও অনিয়ম হয়নি বলে আগাগোড়া দাবি করা কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান এ দিন ফের মুখ খুলে এনটিএ-র বলা কথাই আউড়ে জানিয়েছেন, দু’টি কেন্দ্রে অনিয়ম হয়েছিল। একটিতে ভুল ভাষার প্রশ্নপত্র দেওয়া হয়েছিল এবং অন্যটিতে প্রশ্নপত্র দিতে দেরি হয়েছিল। প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগও ফের অস্বীকার করেছেন তিনি।

কিন্তু একের পর এক ঘটনা বিপুল টাকার বিনিময়ে প্রশ্নফাঁসের দিকেই আঙুল তুলছে। যার ভিত্তিতে আজ বিরোধীরা এনটিএ-র পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকার ও শিক্ষামন্ত্রীকে নিশানা করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, যদি দু’টি মাত্র কেন্দ্রে অনিয়ম হয়, তা হলে বিহার এবং গুজরাতের কেন্দ্রগুলিতে যা হয়েছে তা কি? কেন এনটিএ মূল প্রশ্নপত্র প্রকাশ করছে না? রাজস্থান, হরিয়ানার কয়েকটি কেন্দ্রের একাধিক পরীক্ষার্থীর দাবি, গ্রেস মার্ক পাওয়া পড়ুয়ার সংখ্যা অনেক বেশি। এনটিএ তথা কেন্দ্র যে তথ্য দিয়েছে, তা ভুল। তাঁদের দাবি, পরীক্ষায় পাশ করা প্রথম ১ লক্ষ পরীক্ষার্থীর ওএমআর শিট প্রকাশ্যে আনা হোক। তা হলেই গ্রেস মার্ক পাওয়া প্রকৃত পরীক্ষার্থীর সংখ্যা জানা যাবে।

নিট কেলেঙ্কারি নিয়ে প্রথম দিন থেকেই ডিএমকে, কংগ্রেস, বাম, বিআরএস, শিবসেনা-সহ প্রায় পুরো বিরোধী শিবির এককাট্টা। এ দিন বিরোধীরাও পড়ুয়াদের সঙ্গে গলা মিলিয়ে এ বছরের নিট বাতিল করে নতুন করে পরীক্ষা নেওয়ার দাবি তুলেছেন। আগাগোড়া নিটের বিরোধিতায় সরব ডিএমকে প্রধান তথা তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী স্ট্যালিন ফের রাজ্য স্তরে মেডিক্যাল প্রবেশিকার দাবি তুলেছেন। তাঁর সঙ্গে গলা মিলিয়ে একই দাবি জানিয়েছেন কর্নাটকের উপমুখ্যমন্ত্রী ডি কে শিবকুমারও। পাশাপাশি তাঁদের অভিযোগ,প্রায় ২৪ লক্ষ পড়ুয়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে এ ভাবে ছিনিমিনি খেলার অধিকার কে দিয়েছে কেন্দ্রকে। গোটা বিষয়টিতে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী যে ভাবেএনটিএ-কে আড়াল করতে ব্যস্ত, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। একই সঙ্গে এই মাপের কেলেঙ্কারির পরেও বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নীরবতাকে আক্রমণ করেছেকংগ্রেস। বিরোধী নেতাদের বক্তব্য, প্রায় ২৪ লক্ষ পড়ুয়ার ভবিষ্যৎই শুধু নয়, এ ভাবে টাকা দিয়ে প্রশ্ন কিনে বা অন্য উপায়ে পাশ করে যাঁরা আগামী দিনে ডাক্তার হবেন, তাঁদের হাতে দেশবাসীর স্বাস্থ্য কতটাসুরক্ষিত থাকবে?

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

NEET Central Government

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।