Advertisement
২৪ ডিসেম্বর ২০২৪
Muslim

ভালবাসার টানে বেড়া ভাঙলেন মুসকান 

তিনসুকিয়ায় দীর্ঘদিন থাকার সময় মুসকান বাঙালি তরুণ ধ্রুব মজুমদারকে ভাই পাতান।

পাতানো ভাইয়ের শেষকৃত্যে মুসকান। নিজস্ব চিত্র

পাতানো ভাইয়ের শেষকৃত্যে মুসকান। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৫:১২
Share: Save:

পরিবার থেকেও নেই। এ দিকে ধর্ম আর রক্তের সম্পর্ক না থাকায় সামাজিক ও আইনি বেড়াগুলো দেওয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

শেষ পর্যন্ত ভালবাসা ও মানবিকতার টানে সব বেড়া ভাঙলেন শিবসাগরের মুসকান বেগম। পাতানো ভাইকে আশ্রয় দেওয়ার পরে তাঁর মুখাগ্নিও করলেন তিনি। সেই মানবিকতায় এক দিকে যেমন জুটছে প্রংশসা, আবার অন্য দিকে ইসলাম-বিরোধী কাজ করায় বিরূপ মন্তব্যও শুনতে হচ্ছে তাঁকে।

তিনসুকিয়ায় দীর্ঘদিন থাকার সময় মুসকান বাঙালি তরুণ ধ্রুব মজুমদারকে ভাই পাতান। ছোট বেলায় বাবা-মা হারানো ধ্রুব ঠাকুমার কাছে মানুষ। মুসকানকে নিজের দিদির মতোই দেখতেন। বিয়ের পরে মুসকান শিবসাগরে চলে আসেন। কিন্তু ভাই-বোনে যোগাযোগ নষ্ট হয়নি। ইতিমধ্যে বিয়েও করেন ধ্রুব। মেয়ে হয়। কিন্তু পারিবারিক অশান্তি ও ধ্রুবর অত্যধিক মদ্যপানের জন্য মেয়েকে নিয়ে আলাদা হয়ে যান স্ত্রী। পরিবারের অন্যদের সঙ্গেও বনিবনা ছিল না।

শেষ পর্যন্ত জমি-বাড়ি যেটুকু ছিল সব বিক্রি করে শিবসাগরে মুসকানদিদির কাছে চলে আসেন ধ্রুব। মুসকান ভাইকে নিজের বাড়িতে রাখেন। কিন্তু স্ত্রী ও মেয়ের দুঃখে ধ্রুবর মদ্যপান বেড়ে যায়। মদ খেয়ে রাস্তাঘাটে পড়ে থাকতেন। পাড়ার লোক নিন্দা করত। কিন্তু পাতানো ভাইকে আগলে রেখেছিলেন মুসকান।

তিনি বলেন, “দিন কয়েক আগে দিখৌ নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে ধ্রুব। স্থানীয়েরা বাঁচান। ধ্রুব বলে, স্ত্রী ও মেয়েকে ছাড়া জীবন অর্থহীন ঠেকছে। আমি তাঁকে বোঝাই, দিদির মুখের দিকে তাকিয়ে জীবন নতুন করে শুরু করতে হবে। একে অন্যের কাছে প্রতিজ্ঞা করি, কেউ কাউকে ছেড়ে যাব না।”

২২ সেপ্টেম্বর মুসকান কর্মসূত্রে যোরহাট যান। ফিরে এসে দেখেন, চার বোতল মদ খেয়ে, কাপড় গলায় পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছেন ধ্রুব।

ময়নাতদন্তের পরে সৎকারের জন্য ভাইয়ের দেহ নিতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। জানায়, রক্তের সম্পর্ক বা আইনি সম্পর্ক ছাড়া সৎকার করা যাবে না। মুসকান বলেন, ‘‘তিন দিন ধরে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করি। জ্যাঠা, ভাইরা কেউ আসতে রাজি হননি। স্ত্রীকে অনেক বার অনুরোধ করার পরে আসতে রাজি হলেও জানায় কোনও দায়িত্ব নিতে পারবে না।’’ শুক্রবার মুসকান মর্গ থেকে দেহ নিয়ে শ্মশানে আসেন। ধর্মের তোয়াক্কা না করে নিজেই ভাইয়ের মুখাগ্নি করেন।

জুম্মাবারে, মুসলিম মহিলা শ্মশানে হিন্দুর মুখাগ্নি করছেন— সেই ছবি ভাইরাল হওয়ার পরে প্রশংসা, সমালোচনা দুই-ই শুনতে হচ্ছে মুসকানকে। তাঁকে আক্রমণ করে ফেসবুকে লেখা হচ্ছে, প্রকৃত ইসলাম ধর্মাবলম্বীর মতো কাজ করেননি মুসকান। সস্তা জনপ্রিয়তার জন্য ধর্ম নিয়ে ছেলেখেলা করছেন।

মুসকান ভেঙে পড়ছেন না। তিনি বলেন, “আমি দিদি হিসেবে ভাইয়ের মুখাগ্নি করে শেষ কর্তব্য পালন করেছি মাত্র। আমার একটাই দুঃখ এত ভালবাসা দিয়েও ভাইটাকে ভাল রাখতে, বাঁচিয়ে রাখতে পারলাম না।।”

বিতর্ক নিয়ে তাঁর জবাব, “আমি ঈশ্বর ছাড়া কাউকে ভয় পাই না। কোনও ধর্মও মানি না। শুধু একটাই ধর্ম মানি, তা হল ইনসানিয়ত। শেষকৃত্য যতটা সম্ভব নিয়ম মেনে করছি। মুসলিম মেয়ে হিসেবে কিছু ভুলত্রুটি থাকতে পারে। আমি জানি, তার জন্য ভাই আর ঈশ্বর, ক্ষমা করে দেবেন।”

অন্য বিষয়গুলি:

Muslim Hindu religion Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy