রাহুল গান্ধীর সঙ্গে ভারত জোড়ো যাত্রায় রণজিৎ মুখোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
মা মারা গিয়েছেন দেড় বছর আগে। সল্টলেকের বাড়িতে একাকী, নিঃসঙ্গ বাবা। বকেয়া পড়ে রয়েছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পারিবারিক কাজ। তা সত্ত্বেও গত ন’মাস ধরে নাগাল্যান্ডের রাজধানী কোহিমাতে মাটি কামড়ে পড়ে রয়েছেন রণজিৎ মুখোপাধ্যায়। লক্ষ্য একটাই— উত্তর-পূর্ব ভারতের ওই রাজ্যের বিধানসভা ভোটে দ্বিতীয় বারও ‘শূন্য’ পাওয়ার লজ্জা থেকে কংগ্রেসকে বাঁচানো। আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি নাগাল্যান্ডে বিধানসভা ভোট। গণনা ২ মার্চ।
ঘটনাচক্রে, রণজিতের বাবা প্রসূন মুখোপাধ্যায় কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার। রাজ্য পুলিশেরও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করেছেন। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মুখ্যমন্ত্রিত্বের সময় তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ’ হিসাবে পরিচিত প্রসূন সিএবি সভাপতি হিসেবে বেশ কিছু দিন বাংলার ক্রিকেট প্রশাসকের দায়িত্বও সামলেছিলেন। কিন্তু তাঁর পুত্র না গিয়েছেন পুলিশে, না এসেছেন ক্রিকেটে। ‘কমিউনিকেশন ম্যানেজমেন্ট’-এ স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী রণজিৎ টানা ১০ বছর কর্পোরেটে চাকরি করার পরে ২০১২ সালে যোগ দিয়েছেন সর্বক্ষণের রাজনীতিতে।
প্রায় এক দশক ধরে ‘টিম রাহুল’-এর অন্যতম সদস্য এখন নাগাল্যান্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত এআইসিসি সম্পাদক। ২০২২ সালের মে মাস থেকেই রয়েছেন সে রাজ্যে। আনন্দবাজার অনলাইনকে রণজিৎ জানালেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত এআইসিসি সাধারণ সম্পাদক অজয় কুমার এবং নাগাল্যান্ড প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি কে থেরি-সহ অন্য নেতাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে প্রার্থী বাছাইয়ের কাজের পাশাপাশি ক্ষমতাসীন এনডিপিপি (ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক প্রোগ্রেসিভ পার্টি)-বিজেপি জোটের বিরুদ্ধে ‘সমমনস্ক’ দলগুলির সঙ্গে বোঝাপড়ার জন্য আলোচনার দায়িত্বও পালন করতে হয়েছে।
রণজিতের কথায়, ‘‘পুরোপুরি না হলেও বিজেপি বিরোধী লড়াইয়ে আংশিক সাফল্য পেয়েছি আমরা। বেশ কিছু আসনে স্থানীয় শাসক জোটের বিরুদ্ধে বিরোধী প্রার্থীর মুখোমুখি লড়াই হচ্ছে।’’ কংগ্রেসের পাশাপাশি আঞ্চলিক দল নাগা পিপলস ফ্রন্ট (এনপিএফ), জেডি(ইউ), এনসিপি রয়েছে ভোটের ময়দানে। এনপিএফ সভাপতি পদে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সুরহোজ়েলি লিজিয়েৎসু একদা বিজেপি জোটে থাকলেও এ বার আলাদা ভাবে লড়ছেন। তবে পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় নাগাল্যান্ডের রাজনৈতিক পরিস্থিতির অনেক ফারাক রয়েছে জানিয়ে তাঁর মন্তব্য, ‘‘এখানে প্রতিটি আসনেই স্থানীয় নানা সমীকরণ রয়েছে।’’ এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন নাগা জঙ্গিগোষ্ঠীগুলির ‘ভূমিকা’ রয়েছে বলেও জানান তিনি।
ঘটনাচক্রে, পশ্চিমবঙ্গের মতোই নাগাল্যান্ডের পরিষদীয় রাজনীতিতেও কংগ্রেস এখন ‘শূন্য’। ২০১৮ সালের বিধানসভা ভোটে সে রাজ্যের ৬০টি আসনের মধ্যে ১৮টিতে লড়ে আড়াই শতাংশের কাছাকাছি ভোট পেয়েছিল রাহুলের দল! অথচ, ১৯৯৩ থেকে ২০০৩ পর্যন্ত টানা এক দশক সে রাজ্যে ক্ষমতায় ছিল ‘হাত’। ২০০৩ এবং ২০০৮-এর বিধানসভা ভোটে সামান্য আসনের ব্যবধানে ক্ষমতা দখল করতে না পারলেও ৩৫ শতাংশের উপর ভোট পেয়েছিল।
এ বারের বিধানসভা ভোটে ২৩টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে কংগ্রেস। রণজিৎ আশাবাদী, তার অন্তত কয়েকটিতে জয় আসবে। তিনি বলেন, ‘‘এ রাজ্যেও বিজেপি এবং তাদের জোটসঙ্গীরা টাকা আর পেশিশক্তির খেলা শুরু করেছে। তবে আশার কথা একটাই— নাগা নাগরিক সংগঠনগুলি এ বার অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সক্রিয় হয়েছে। টাকার খেলা বন্ধ করার জন্য প্রচারে নেমেছে। নাগাল্যান্ডে চার্চের পাশাপাশি নাগরিক সংগঠনগুলির আবেদনেও যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে।’’
৪৪ বছরের রণজিতের উঠে আসা যুব কংগ্রেসের হাত ধরে। কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের এই প্রাক্তনী ২০০৩ সালে পুণে থেকে এমবিএ করেন। ২০১০ সালে নতুন প্রজন্মকে রাজনীতিতে আসার জন্য রাহুলের আবেদনে প্রভাবিত হয়ে বিধাননগর বিধানসভা এলাকা থেকে যুব কংগ্রেসের সদস্য হয়েছিলেন। রাজ্য যুব কংগ্রেসেরও কর্মসমিতির সদস্যপদ পেয়েছিলেন পরের বছরই।
২০১৩ সালে এআইসিসির ‘সোশ্যাল মিডিয়া সেল’-এর সদস্য হয়েছিলেন রণজিৎ। সে সময়ই রাহুলের সঙ্গে পরিচিতি বাড়ে তাঁর। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে কংগ্রেসের সোশ্যাল মিডিয়া সেলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন তিনি। ওই বছরেই তাঁর হাত ধরে পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের সোশ্যাল মিডিয়া সেলের যাত্রা শুরু হয়েছিল। তিনি হয়েছিলেন সামাজিক মাধ্যম শাখার চেয়ারম্যান। তার কিছু দিন আগে থেকেই অবশ্য রণজিৎ চাকরি ছেড়ে দলের পূর্ণ সময়ের কর্মী।
রণজিৎ জানিয়েছেন, বাংলার পাশাপাশি উত্তরপ্রদেশ এবং বিহারেও কাজ করেছেন তিনি। ২০১৭ সালে তাঁকে এআইসিসির গবেষণা বিভাগের সম্পাদক করা হয়েছিল। এর পর ২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে সিকিম এবং নাগাল্যান্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত এআইসিসি সম্পাদক হিসাবে কাজ শুরু করেন। এ বার রাহুলের ভারত জোড়ো যাত্রায় যোগ দিতে কয়েক দিনের জন্য কর্নাটকে গিয়েছিলেন রণজিৎ। এর পর অধীর চৌধুরীর পদযাত্রায় যোগ দিতে বাংলায় গিয়ে সল্টলেকে বাবার সঙ্গে দেখা করে ফের নাগাল্যান্ডে।
নাগাল্যান্ডে বিধানসভা ভোটের পালা মেটার পরে কী করবেন? রণজিৎ বলছেন, ‘‘দল যে দায়িত্ব দেবে, তা-ই করব। ২০২৪ সালে সিকিমে বিধানসভা ভোট হওয়ার কথা। ওই রাজ্যের সাংগঠনিক পর্যবেক্ষকের দায়িত্বও আমাকে দিয়েছেন কংগ্রেস শীর্ষনেতৃত্ব।’’
ঘটনাচক্রে, সিকিমের ভোটের দায়িত্ব পেলে গ্যাংটকেও ‘গন্ডগোলের’ মুখে পড়তে হবে রণজিৎকে। বাংলা, নাগাল্যান্ডের মতোই সেখানকার বিধানসভাতেও কংগ্রেস এখন ‘শূন্য’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy