Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Uttarakhand

Uttarakhand: বৃষ্টিতে ভাসল নৈনিতাল, আলমোড়া-রানিখেত, ধসের কারণে আটকে বহু, উদ্ধার ১০ বাঙালি পর্যটক

মঙ্গলবার প্রবল বৃষ্টিতে বিপদ আরও বেড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নৈনিতালে বৃষ্টি হয়েছে ৫০০ মিলিমিটারেরও বেশি। যা রেকর্ড গড়েছে।

উদ্ধার করা হচ্ছে বাঙালি পর্যটকদের।

উদ্ধার করা হচ্ছে বাঙালি পর্যটকদের। নিজস্ব চিত্র।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি ও তিরুঅনন্তপুরম শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০২১ ০৭:১৭
Share: Save:

অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহে যখন শীতের আমেজ আসন্নপ্রায়, তখনও পিছু ছাড়ছে না বৃষ্টি। বিলম্বিত বর্ষার দাপটে কমবেশি কাবু উত্তর থেকে দক্ষিণ ভারত। সঙ্গে রয়েছে আরব সাগর আর বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া পর পর নিম্নচাপের কাঁটা। তবে এই মুহূর্তে উত্তরাখণ্ড আর কেরলের পরিস্থিতি সবচেয়ে উদ্বেগজনক।

মঙ্গলবার উত্তরখণ্ডের কালচানাথের কাছে আটকে পড়া ১০ জন বাঙালি পর্যটককে উদ্ধার করে গোপেশ্বরে নামিয়ে আনা হয়। কেদারনাথের ডিএফও অমিত কানোয়ার বলেছেন, ‘‘এঁরা রুদ্রনাথ থেকে ফিরছিলেন। মাঝে বৃষ্টির জন্য কালচানাথে আটকে পড়েন। আমাদের কাছে গত কাল সন্ধ্যায় সাহায্য চেয়ে ফোন আসে। তার ভিত্তিতে আজ উদ্ধারকার্য চালানো হয়।’’ কানোয়ার জানান, কালচানাথে আটকে পড়া পর্যটকেরা হলেন তনুশ্রী চট্টোপাধ্যায়, রানি চট্টোপাধ্যায়, রূপ সনাতন গোস্বামী, টিঙ্কু মিশ্র, সুযাত্রা গোস্বামী, রামপদ জোতদার, রঞ্জিতা জোতদার, স্মৃতি জোতদার। তাঁরা বারাসতের বাসিন্দা। অন্য দিকে চুঁচুড়ার বাসিন্দা বিশ্বজিৎ রায়, তাঁর স্ত্রী, মেয়ে ও দুই প্রতিবেশী আটকে রয়েছেন কেদারনাথে। যোশীমঠে আটকে পড়েছেন উত্তরবঙ্গ রাজ্য পরিবহণ নিগমের কর্মী কিশোর মিত্রের পুত্র, পুত্রবধূ ও তাঁদের দুই সন্তান। তাঁরা উল্টোডাঙার বাসিন্দা।

রবিবার থেকে টানা তিন দিন এক নাগাড়ে বৃষ্টিতে উত্তরাখণ্ডে অন্তত ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। মঙ্গলবার সকালে ধস নেমে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে নৈনিতাল জেলার রামগড়ের একটি গ্রাম। আজ রাজ্যের ডিজিপি অশোককুমার সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, ধসের তলায় চাপা পড়ে মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে। ২৪-২৫ জনের মৃত্যুর আশঙ্কা রয়েছে।

প্রবল বৃষ্টিতে সোমবারেই চার ধাম যাত্রা বন্ধ রাখার কথা ঘোষণা করেছিল রাজ্য প্রশাসন। মঙ্গলবার প্রবল বৃষ্টিতে বিপদ আরও বেড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নৈনিতালে বৃষ্টি হয়েছে ৫০০ মিলিমিটারেরও বেশি। যা রেকর্ড গড়েছে। নৈনি হ্রদ উপচে আজ ভেসে গিয়েছে নৈনিতাল, আলমোড়া, রানিখেতের মতো সাজানো শৈলশহরগুলি। কালাধুঙ্গি, হলদোয়ানি আর ভাওয়ালি— নৈনিতাল পৌঁছনোর তিনটে রাস্তাই ধস নেমে বন্ধ। ফলে বাকি রাজ্যের সঙ্গে নৈনিতালের সমস্ত যোগাযোগ এখন বিচ্ছিন্ন। ভেসে গিয়েছে বিখ্যাত মল রোড আর নৈনি দেবীর মন্দির। চম্পাবত জেলায় চালথি নদীর উপরে নির্মীয়মাণ একটি সেতু ভেঙে ভেসে গিয়েছে স্রোতে। সোশ্যাল মিডিয়ায় বৃষ্টি-বিপর্যয়ের নানা ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়েছে ইতিমধ্যে। তার কোনওটায় দেখা যাচ্ছে, নৈনিতালের জলমগ্ন বিলাসবহুল হোটেলের ছাদে ভিড় করেছেন পর্যটকেরা। কোনওটায় দেখা গিয়েছে জলমগ্ন গাড়ি আর বাড়ির সারি। গওলা নদীতে আটকে পড়া একটি হাতির ভিডিয়ো ভাইরাল হয়। খবর পেয়ে তাকে উদ্ধার করেছেন বন দফতরের কর্মীরা।

বন্যায় ডুবে গিয়েছে গোটা পাড়া। উত্তরাখণ্ডের রুদ্রপুরে।

বন্যায় ডুবে গিয়েছে গোটা পাড়া। উত্তরাখণ্ডের রুদ্রপুরে। ছবি পিটিআই।

শুধু সড়কপথ নয় প্রবল বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রেলপথও। কাঠগোদাম থেকে দিল্লি যাওয়ার রাস্তায় হলদোয়ানির কাছে বেশ খানিকটা রেলপথ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গওলা নদীর উপচে পড়া জলে রেললাইনের তলায় মাটি ধুয়ে বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আপাতত ওই এলাকায় ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।

ধস ও জলের কারণে স্থানীয়দের পাশাপাশি বিভিন্ন হোটেলে আটকে পড়েছেন পর্যটকেরা। দুর্গতদের উদ্ধারে জাতীয় ও রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর পাশাপাশি সেনা ও তাদের তিনটি হেলিকপ্টার নামানো হয়েছে।

বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিংহ ধামি এবং মন্ত্রী অজয় ভট্টের সঙ্গে আজই কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পরে টুইটারে তিনি বলেন, ‘‘উত্তরাখণ্ডে প্রাণহানিতে আমি দুঃখিত। প্রার্থনা করি আহতেরা যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন।’’ খানিকটা স্বস্তি দিয়ে আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, আজ রাত থেকেই প্রবল বৃষ্টি কমতে পারে। তবে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি ও খারাপ আবহাওয়া আরও কয়েক দিন থাকবে বলেই মনে করছেন আবহবিদেরা।

অন্য দিকে টানা বৃষ্টিপাতে বিধ্বস্ত কেরলে দু’টি বড় নদী-বাঁধের জল বিপদসীমা ছুঁয়ে ফেলায় জল ছাড়ার কথা ঘোষণা করেছে মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের সরকার। ফলে রাজ্যবাসীর মনে নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। এশিয়ার বৃহত্তম খিলেন বাঁধ ইদুক্কি এবং ইদামালায়া বাঁধের লকগেট খুলে জল ছাড়ার কথা জানিয়েছে সরকার। দু’টি বাঁধই পেরিয়ার নদী ও তার উপনদীর উপরে তৈরি।

কেরল প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তে উদ্বেগ বেড়েছে রাজ্যে। বিশেষজ্ঞদের একটি অংশের মতে, রাজ্যের অধিকাংশ জেলা যেখানে প্লাবিত সেখানে বাঁধের জল ছাড়লে বিপদ আরও বাড়তে পারে। যদিও পিনারাই বিজয়ন সরকার জানিয়েছে বৃহত্তর মানুষের কথা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত। প্রশাসনের সতর্কবার্তা মেনে চললে সাধারণ মানুষও ক্ষয়ক্ষতি এড়িয়ে চলতে পারবেন বলেও দাবি করা হয়েছে। এই দুই রাজ্যের পাশাপাশি মঙ্গলবারেও কমবেশি বৃষ্টি হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, দিল্লি-সহ দেশের অন্তত ১০টি রাজ্যে।

অন্য বিষয়গুলি:

Uttarakhand Disaster landslide
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy