একটা কথা আগে হামেশাই শোনা যেত— মুখের রেখায় নাকি বয়স ধরা থাকে। সত্যিই কি তাই?
বছর তিরিশেক আগেও যে বয়সে মুখে প্রৌঢ়ত্বের ছাপ পড়ত, স্বাস্থ্য-সচেতন, ত্বক-সচেতন মানুষ তাকে বেশ খানিকটা ঠেলে পিছিয়ে দিতে পেরেছেন। আবার, উল্টোটাও দেখা গিয়েছে বইকি! স্বাভাবিক নিয়মে যে সময় চেহারায় বয়সের ছাপ পড়তে শুরু হওয়ার কথা, অনেকের ক্ষেত্রে সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায় সময়ের বেশ কিছুটা আগেই। এই দ্বিতীয় অবস্থাটিকে বলা হয় ‘প্রিম্যাচিয়োর রিঙ্কলস’। সাধারণ ভাবে অল্পবয়সিদের ত্বক সবচেয়ে সুন্দর, টানটান থাকে। কিন্তু একটি নির্দিষ্ট বয়স অতিক্রম করলে কপালে, গালে ভাঁজ পড়তে শুরু করে। এমনটাই স্বাভাবিক। কিন্তু প্রিম্যাচিয়োর রিঙ্কলস-এর ক্ষেত্রে সেই ভাঁজ বা দাগ পড়তে শুরু করবে অনেক কম বয়স থেকেই।
কোন বয়সের ত্বকের দাগ প্রিম্যাচিয়োর রিঙ্কলস?
এর জন্য কোনও নির্দিষ্ট সীমারেখা টানা মুশকিল। ত্বক বিশেষজ্ঞ সন্দীপন ধর বললেন, “বিভিন্ন বিষয় এর কারণ হিসেবে কাজ করে। যেমন— জাতি, দেশ প্রভৃতি। চিন বা জাপানের এক জন নাগরিকের যে বয়সে মুখের ত্বকে ভাঁজ পড়বে, ভারতীয়দের রিঙ্কলস সেই বয়সে পড়বে না। কারণ, বিভিন্ন দেশের গড় আয়ু একই রকম হয় না। বলা হয়, রাশিয়ানদের গড় আয়ু বেশি। ভারতীয়দের আগে যা গড় আয়ু ছিল, এখন তা অনেক বেড়ে গিয়েছে। এই গড় আয়ুর সঙ্গেও কিন্তু রিঙ্কলস-এর সম্পর্ক আছে। গড় আয়ু যত বাড়বে, ত্বকে বয়সের ছাপ তত দেরি করে পড়বে। এখন যেমন অনেকের ষাট বছর বয়সেও ত্বকে কোনও ছাপ পড়ে না।” তবে এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে তার আগেই যদি কারও কপালে, গালে, থুতনির নীচে, গলায় রিঙ্কলস দেখা যায়, তাকে প্রিম্যাচিয়োর রিঙ্কলস বলা যেতে পারে।
কাদের ঝুঁকি বেশি?
প্রিম্যাচিয়োর রিঙ্কলস-এর ৭৫-৮০ শতাংশ ক্ষেত্রেই জিনগত কারণ দায়ী। ত্বক তেলতেলে, না শুষ্ক হবে; চুল অকালে পাকবে না ঝরে যাবে— অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এগুলি যেমন জিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, ত্বকের অকালবার্ধক্যও তা-ই। এ ছাড়াও কিছু শারীরিক কারণ আছে, যা ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়াকে উস্কে দেয়। যেমন অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবিটিস, থাইরয়েডের সমস্যা, ক্রনিক কিডনি ডিজ়িজ়, ক্যানসার ইত্যাদি। যাঁরা দীর্ঘ দিন মানসিক সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের ক্ষেত্রেও সময়ের আগে ত্বকে বয়সের ছাপ পড়ে যায়। বিশেষ ভাবে মনে রাখতে হবে, অত্যধিক প্রসাধনীর ব্যবহার এবং দীর্ঘ ক্ষণ চড়া আলোয় থাকাও অনেক ক্ষেত্রে ত্বকে বয়সের ছাপ দ্রুত ফেলে। ঠিক এই কারণে বিনোদন জগতের সঙ্গে যুক্ত মানুষদের মধ্যে অনেকেই ত্বকের সমস্যায় ভোগেন বলে জানালেন ডা. ধর। চেহারায় বার্ধক্যের ছাপকে আটকে রাখার অতিরিক্ত প্রয়াস এই ক্ষেত্রে উল্টো বিপত্তি ডেকে আনে।
চিকিৎসা
প্রিম্যাচিয়োর রিঙ্কলস থেকে মুক্তি পেতে বেশ কিছু চিকিৎসাপদ্ধতি প্রচলিত আছে, যার মধ্যে রেটিনল অন্যতম। রেটিনলের একটা ক্রিমের দাম দেড় থেকে দু’হাজার টাকার মধ্যে পড়ে। চলে মাস দেড়েকের কাছাকাছি। তা ছাড়া বোটক্স ট্রিটমেন্টও যথেষ্ট পরিচিত পদ্ধতি। প্লাস্টিক সার্জনরা কিছু ক্ষেত্রে ‘কারেক্টিভ সার্জারি’ও করে থাকেন।
গোড়া থেকে আটকানোর উপায়
ত্বকের অকালবার্ধক্য অনেকাংশে রুখে দিতে পারে জীবনযাপনে পরিবর্তন। অতিরিক্ত মদ্যপান, ধূমপান বা অন্য যে কোনও নেশা বাদ দিতে হবে। তার সঙ্গে নিয়মিত শারীরচর্চা চালিয়ে যেতে হবে। বেশ কিছু ফেশিয়াল এক্সারসাইজ় আছে। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী সেগুলিও অভ্যাস করতে হবে। পাল্টাতে হবে খাদ্যতালিকাও। ভাজাভুজি, ফাস্ট ফুড নয়। প্রচুর পরিমাণে আনাজপাতি, অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট-সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। ভিটামিন এ সমৃদ্ধ গাজর, পেয়ারা, সবুজ আনাজপাতি এ ক্ষেত্রে খুব কার্যকর। তা ছাড়া মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকতে হবে। ডা. ধর জানালেন, “প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে হালকা ঘুমের ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। তাঁর মতে, ঘুমের ওষুধ খেলে লিভার, কিডনি খারাপ হয়, এমন কথা সত্যি নয়। বরং, না ঘুমিয়ে চোখের নীচে কালির পরত পড়ে যাওয়ার চেয়ে পর্যাপ্ত ঘুম বেশি কাম্য।”
এবং হাসিখুশি থাকতে হবে। মনের উপরে চাপের প্রভাব চট করে চেহারায় পড়ে যায়। তাই মনের স্বাস্থ্য ভাল রাখা খুব জরুরি। মনের ভিতরটা উজ্জ্বল, ঝরঝরে থাকলে ত্বকের যে কোনও অপ্রিয় ভাঁজ, দাগকেও নির্বাসনে পাঠানো সহজ হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy