Advertisement
২১ নভেম্বর ২০২৪
Blood Cancer

রক্তের ক্যানসার মানেই জীবন শেষ নয়, তাকে নিয়ন্ত্রণে রাখার উপায় বলছেন চিকিৎসক

ক্রনিক মায়েলয়েড লিউকেমিয়া রক্তের ক্যানসারেরই একটি জটিল রূপ। এই ক্যানসার ধরা পড়লেই রোগী মৃত্যুভয় শুরু হয়। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে মায়েলয়েড লিউকেমিয়াও গোড়ায় চিহ্নিত করার উপায় রয়েছে। এই বিষয়ে বিস্তারিত বললেন চিকিৎসক।

Tests and procedures used to diagnose chronic myelogenous leukemia

‘ক্রনিক মায়েলয়েড লিউকেমিয়া’ নিয়েও দীর্ঘ দিন বাঁচা যায়। ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৯:৪০
Share: Save:

লিউকেমিয়া বা রক্তের ক্যানসারের নাম শুনলেই রোগীর আতঙ্ক শুরু হয়ে যায়। আর হওয়ারই কথা। একটা সময়ে রক্তের ক্যানসার ধরা পড়লেই মৃত্যুভয় শুরু হত। খুবই জটিল এক মারণরোগ ছিল রক্তের ক্যানসার যার উপস্থিতির কথা জানতে পারলেই মনে করা হত, বাঁচার বুঝি আর কোনও সম্ভাবনাই নেই। আর ‘ক্রনিক মায়েলয়েড লিউকেমিয়া’-র মতো রক্তের ক্যানসার ধরা পড়লে তো কথাই ছিল না। কারণ, অস্থিমজ্জা থেকে খুব দ্রুত রক্তে ছড়িয়ে পড়তে পারে এই ক্যানসার। যত দিনে রোগ ধরা পড়ে, তত দিনে রোগী তার জীবনের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে যায়।

কিন্তু সময় বদলেছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রভূত উন্নতি হয়েছে। ক্যানসার নিরাময়ের অনেক থেরাপি নিয়েই গবেষণা বহু দূর এগিয়েছে। রক্তের ক্যানসারের রোগীর সংখ্যা বাড়লেও, চিকিৎসকরা আশ্বস্ত করছেন যে, আতঙ্কের কারণ নেই। সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় ও উপযোগী চিকিৎসা পদ্ধতিতে রক্তের ক্যানসারও নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

ক্রনিক মায়েলয়েড লিউকেমিয়া নিয়ে চিন্তিত গোটা বিশ্ব

রক্তের ক্যানসার অনেক রকম হয়, যার মধ্যে একটি হল ক্রনিক মায়েলয়েড লিউকেমিয়া (সিএমএল)। মূলত শ্বেত রক্তকণিকার ক্যানসার। অস্থিমজ্জার যে স্টেম কোষ রক্তকণিকা তৈরি করে, সেই কোষের অস্বাভাবিক ও অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি শুরু হলে তখন তা ক্যানসারের রূপ নেয়। এই ধরনের ক্যানসারকে বলা হয় ক্রনিক মায়েলোজেনাস লিউকেমিয়া। মায়েলয়েড কোষের অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি হলে তা ক্যানসার কোষে বদলে যায়। এই মায়েলয়েড কোষ থেকেই কিন্তু লোহিত কণিকা, শ্বেত রক্তকণিকা, অনুচক্রিকা তৈরি হয়। কাজেই মায়েলয়েড কোষ যদি লাগামছাড়া ভাবে বিভাজিত হতে থাকে, তখন রক্ত কণিকাগুলির উৎপাদন প্রক্রিয়াও ব্যাহত হয়। শ্বেত রক্ত কণিকার সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বাড়তে থাকে এবং তা জমা হতে থাকে অস্থিমজ্জায়। সেখান থেকে রক্তের মাধ্যমে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। শ্বেত রক্ত কণিকাই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার খেয়াল রাখে। তাই এই রক্ত কণিকার ভারসাম্যই যদি বিগড়ে যায়, তা হলে শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়তে থাকে।

রোগ নির্ণয়ের কার্যকরী পদ্ধতি কী?

এই বিষয়ে রাজ্যের এক সরকারি হাসপাতালের ক্যানসার চিকিৎসক তুফান কান্তি দোলাই জানাচ্ছেন, ক্রনিক মায়েলয়েড লিউকেমিয়া যতই ভয়ের হোক না কেন, যদি সঠিক ভাবে রোগ চিহ্নিত করা যায়, তা হলে রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনাও বাড়ে। আসলে ক্যানসার ধরাই পড়ে এত দেরিতে যে, তখন আর চিকিৎসাতেও কাজ হয় না। রক্তের ক্যানসার চিহ্নিত করতে হলে দু’টি জিনের উপর নজর রাখতে হয়। ওই দুই জিনের মতিগতি যদি বুঝে ফেলা যায়, তা হলেই লিউকেমিয়া ধরা পড়বে দ্রুত। চিকিৎসকের কথায়, “বিসিআর-এবিএল জিনের গোলমালের কারণেই রক্তের ক্যানসার বাসা বাঁধে। ক্যানসার কোষ যখন তৈরি হতে শুরু করে, তখন এই দুই জিনের গঠন ও সাজসজ্জা বদলে গিয়ে এক ধরনের প্রোটিন তৈরি হয়। রক্তের ক্যানসারের রোগীর শরীরেই ওই প্রোটিন পাওয়া যায়। তাই সেটিকে চিহ্নিত করতে পারলেই রোগ ধরা সহজ হয়ে যায়।”

চিকিৎসক বুঝিয়ে বললেন, ধরা যাক রক্তের ক্যানসার ধরা পড়ে রোগীর চিকিৎসা শুরু হল। প্রতি তিন মাস অন্তর রোগীর পরীক্ষা করে দেখা হবে ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি হচ্ছে কি না। তার জন্য ওই প্রোটিনের মাত্রা বিশ্লেষণ করা হবে। যদি দেখা যায়, প্রোটিনের মাত্রা কম, তা হলে বুঝতে হবে চিকিৎসা কার্যকরী হচ্ছে। অর্থাৎ, ক্যানসার কোষ ধীরে ধীরে নির্মূল হচ্ছে। আর যদি প্রোটিনের মাত্রা বাড়ে, তখন ভয়ের কারণ আছে। বুঝতে হবে চিকিৎসায় আর কোনও কাজ হচ্ছে না।

নিয়মিত পর্যবেক্ষণে থাকতে হবে

ক্রনিক মায়েলয়েড লিউকেমিয়ার চিকিৎসায় একটি কার্যকরী পদ্ধতি হল ‘টাইরোসিন কাইনেজ় ইনহিবিটর’ থেরাপি বা টিকেআই থেরাপি। এই চিকিৎসা পদ্ধতি খুবই কার্যকরী বলেই জানালেন চিকিৎসক। তাঁর পরামর্শ, যে কোনও চিকিৎসাই কার্যকরী হবে যখন রোগী নিয়মিত চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণে থাকবেন ও নিয়ম মেনে চলবেন। এমনও দেখা গিয়েছে, কোনও কোনও রোগীর ক্ষেত্রে টিকেআই থেরাপি আর কাজ করেনি। তখন রোগীকে বাঁচাতে অন্য থেরাপির পথে যেতে হয়েছে। সে কারণেই রক্তের ক্যানসারের রোগীকে প্রতি তিন মাস অন্তর পরীক্ষা করাতে হবে। চিকিৎসক বুঝবেন, কী ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি সেই রোগীর জন্য কার্যকরী হবে। রক্তের ক্যানসার নিয়েও বেঁচে আছেন এমন রোগীর সংখ্যাও অনেক। কাজেই আতঙ্ক না করে, মানসিক যন্ত্রণায় না ভুগে বরং চিকিৎসকের কথা মতো চলে সুস্থ হওয়ার পথে এগিয়ে যেতে হবে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy