সকালের কুকিজ় থেকে টোস্ট, টিফিনের স্যান্ডউইচ, পাস্তা কী নুডলস, স্ন্যাক্সের মোমো, পিৎজ়া, কেক, বার্গারই হোক বা দুপুর-রাতের চিরচেনা রুটি-পরোটা— রোজকার খাদ্যতালিকায় আটা বা ময়দা দিয়ে তৈরি খাবারের উপস্থিতি প্রবল। কিন্তু রোজকার এই খাবারগুলোই হয়ে উঠতে পারে ক্রনিক পেট ব্যথা বা ডায়রিয়ার কারণ। কী ভাবে?
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, গমে থাকে গ্লুটেন নামে এক ধরনের প্রোটিন। গড়ে ১০০ জনের মধ্যে ১ জনের দেহে এই প্রোটিন এক প্রকার অটোইমিউন প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। খাদ্যনালির ক্ষুদ্রান্ত্রের শ্লৈষ্মিক ঝিল্লির (মিউকাস মেমব্রেন) ক্ষতি হয় এর জেরে। বেশি দিন ধরে মেমব্রেন ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা খসে যেতে থাকে। তার জেরে পেট ভার, পেট ব্যথা এবং ডায়রিয়ার মতো উপসর্গ দেখা যায়। চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার জানাচ্ছেন, এই রোগকে সিলিয়াক ডিজ়িজ বলা হয়। চামড়ায় ফোসকা, মুখে-জিভে ছোট আলসারও হতে পারে সিলিয়াকের লক্ষণ।
ডা. তালুকদার বললেন, “সিলিয়াক ডিজ়িজের ফলে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যার সৃষ্টি হয়। ক্ষুদ্রান্ত্রের মেমব্রেন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় খাবার থেকে পুষ্টিদ্রব্য শোষণের প্রক্রিয়া বাধা পায়। দেহে তৈরি হয় নানা মিনারেল ও ভিটামিনের ঘাটতি। বাড়ে থাইরয়েড, ডায়াবিটিস এবং অন্য রোগের ভয়। দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার হজমেও সমস্যা দেখা দিতে পারে।” দীর্ঘ দিন ধরে ক্ষুদ্রান্ত্রে এই প্রদাহ থাকলে স্বাস্থ্য ও জীবনযাত্রার মান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এই রোগ যে কোনও বয়সেই হতে পারে। তবে সদ্যোজাত শিশুরা মূলত দুধ খেয়ে থাকে বলে তখন এই রোগ ধরা পড়ে না। শিশুকাল থেকে সিলিয়াক ডিজ়িজ থাকলে এবং চিকিৎসা না হলে শিশুরা অপুষ্টিতে ভোগে। ওজন, উচ্চতা না বাড়ার পাশাপাশি ব্যাহত হয় মানসিক বিকাশও। ফলে সিলিয়াকের উপসর্গ থাকলে রক্তপরীক্ষার মাধ্যমে তা নির্ণয় করে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা একান্ত জরুরি। তবে এই রোগ নিয়ে এখনও সচেতনতার অভাব রয়েছে।
সিলিয়াকের চিকিৎসা কী?
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এই রোগের একমাত্র চিকিৎসা গ্লুটেন-যুক্ত দানাশস্য এবং তা থেকে তৈরি যে কোনও খাবার সম্পূর্ণ বাদ দেওয়া। শুধু গমই নয়, গ্লুটেন থাকে রাই, বার্লি এবং কিছু ক্ষেত্রে ওটস বা চালেও। গ্লুটেন দেহে প্রবেশ না করলে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠে ক্ষুদ্রান্ত্রের মেমব্রেন। পুষ্টিদ্রব্য শোষণের প্রক্রিয়া ফের ঠিকঠাক শুরু হয়। তাই এই রোগ থেকে সেরে ওঠার জন্য ডায়েটের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেকের ক্ষেত্রে নন-সিলিয়াক গ্লুটেন সেনসিটিভিটি দেখা যায়, তাঁদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।
সিলিয়াকের ডায়েট
পুষ্টিবিদ সুবর্ণা রায়চৌধুরী বলছেন, “সিলিয়াকের জেরে হওয়া অপুষ্টিজনিত ঘাটতি পূরণে প্রাথমিক ভাবে উচ্চ ক্যালরি, পুষ্টিকর খাবারের উপরে জোর দিতে হবে। সব রকম আনাজ, ডিম-মাছ-মাংস, ফল, বাদাম, বীজ জাতীয় খাবার রাখতে হবে খাদ্যতালিকায়। প্রোটিন খেতে হবে বেশি করে। ঠিকঠাক হজম করতে পারলে দুধ, দই জাতীয় খাবারও চলবে। মূল খাদ্য হিসেবে ভাত সহজপাচ্য। মুড়ি, চিঁড়ে, বেসন, মিলেট ও ভুট্টা থেকে তৈরি খাবারেও নেই কোনও সমস্যা।” তবে ওটস, বিশেষত প্যাকেটজাত ফ্লেভারড ওটস নিয়ে সতর্ক করছেন তিনি। অনেক ক্ষেত্রে একই জায়গায় গম-বার্লি এবং ওটস, চালের প্রক্রিয়াকরণ হয়। সে ক্ষেত্রে ‘ক্রস কন্টামিনেশন’-এর জেরে সমস্যা হতে পারে সিলিয়াকে আক্রান্ত কারও। রোগের প্রভাব খুব বেশি হলে কিছু বিশেষ প্রজাতির চালেও সমস্যা হতে পারে।
এই রোগে প্যাকেটজাত খাবারের লেবেল পড়ার অভ্যেস খুব জরুরি বলে জানাচ্ছেন তিনি। কারণ, গম-বার্লি থেকে তৈরি না হলেও বহু ক্ষেত্রে সস, ফ্লেভারিং ইত্যাদির জন্য আলাদা করে গ্লুটেন যোগ করা হয়। আবার অনেক সময়ে ভ্রান্তিকর ভাবে প্যাকেটে লেখা থাকে ‘গ্লুটেন ফ্রি’। রেস্তরাঁয় খেতে গেলেও খুঁটিয়ে জেনে নিতে হবে সস, সুপ বা গ্রেভিতে ময়দা-বার্লি রয়েছে কি না।
সুবর্ণা মনে করাচ্ছেন, উপসর্গ কমে গেলে বা না থাকলে যদি গ্লুটেন-যুক্ত খাবার খাওয়া হয়, তবে ফিরে আসবে রোগ। এমনকি, যদি উপসর্গ দেখা না-ও দেয়, তাহলেও ক্ষুদ্রান্ত্রে তার প্রতিক্রিয়া হতে পারে। ফলে এই ডায়েট মেনে চলতে হবে জীবনভরই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy