রক্তের ক্যানসার নির্মূল করতে নতুন চিকিৎসাপদ্ধতির প্রয়োগ হচ্ছে দেশে, সাফল্য মিলেছে প্রায় ৮৫ শতাংশ। —ফাইল চিত্র।
ক্যানসার চিকিৎসায় আধুনিকতম অস্ত্রোপচারের মধ্যে পড়ে ‘কার টি-সেল থেরাপি’। ভারতে গত বছর মুম্বইয়ের টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে এই চিকিৎসা পদ্ধতিতে ক্যানসার নিরাময়ের চেষ্টা করেছিলেন চিকিৎসকেরা। তা অনেকটাই সফল হয়। এ বার কার-টি সেল থেরাপিরই আরও একটি নতুন পদ্ধতি সাড়া ফেলল দেশে। ‘কোয়ার্টেমি’ নামে এক বিশেষ রকম ‘কার-টি সেল থেরাপি’-র পদ্ধতির প্রয়োগে অনুমতি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ড্রাগ নিয়ামক সংস্থা। দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ক্যানসার রোগীদের উপর এই চিকিৎসা পদ্ধতির প্রয়োগ করেছে সাফল্য পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি।
কেন্দ্রীয় সরকারের বায়োটেকনোলজি দফতরের উদ্যোগে ‘বায়োটেকনোলজি ইন্ডাস্ট্রি রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্স কাউন্সিল’ এই চিকিৎসা পদ্ধতির প্রয়োগ করছে ক্যানসার রোগীদের উপরে। বেঙ্গালুরুর নারায়ণা হাসপাতাল, চেন্নাইয়ের অ্যাপোলো ক্যানসার হাসপাতাল ও চণ্ডীগড়ের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চে রক্তের ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীদের উপর এই চিকিৎসা পদ্ধতির প্রয়োগ করে দেখা গিয়েছে, রোগ প্রায় ৮৫ শতাংশ নির্মূল হয়েছে।
কী এই চিকিৎসা পদ্ধতি? নতুনত্ব কোথায়?
ক্যানসারের যে সব ওষুধ বাজারে পাওয়া যায়, সেগুলিতে নানা রকম রাসায়নিক উপাদান থাকে। কিন্তু কোয়ার্টেমি তৈরি হচ্ছে রোগীর কোষ থেকেই। আক্রান্তের কোষ নিয়ে তাতে নানা রকম বদল ঘটানো হচ্ছে বিশেষ পদ্ধতিতে। সেই পরিবর্তিত কোষ ফের ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে রোগীর শরীরে। সেই কোষটি তখন ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই করবে। এখানেই নতুনত্ব। এই বিশেষ চিকিৎসা পদ্ধতির নাম কার-টি সেল থেরাপি।
কী ভাবে ক্যানসার নির্মূল করবে এই থেরাপি?
রক্তের ক্যানসার অনেক রকমের হয়। যার মধ্যে ক্রনিক মায়েলয়েড লিউকেমিয়া (সিএমএল) ও নন-হজকিন লিউকেমিয়ায় মৃত্যুর হার বেশি। অস্থিমজ্জার যে স্টেম কোষ রক্তকণিকা তৈরি করে, সেই কোষের অস্বাভাবিক ও অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি শুরু হলে তখন তা ক্যানসারের রূপ নেয়। এই ধরনের ক্যানসারকে বলা হয় ক্রনিক মায়েলোজেনাস লিউকেমিয়া। শ্বেত রক্তকণিকার সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বাড়তে থাকে এবং তা জমা হতে থাকে অস্থিমজ্জায়। সেখান থেকে রক্তের মাধ্যমে তা সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। খুব দ্রুত ছড়াতে থাকে রক্তের এই ক্যানসার। একে নিয়ন্ত্রণ করতেই কার টি-সেল থেরাপির প্রয়োগ করছেন চিকিৎসকেরা।
সম্পূর্ণ নাম ‘চিমেরিক অ্যান্টিজেন রিসেপ্টর টি-সেল থেরাপি’। এ হল এক ধরনের ইমিউনোথেরাপি। এই পদ্ধতিতে শরীরে ঘাতক টি-কোষ (প্রতিরক্ষা কোষ) বা টি-লিম্ফোসাইট কোষগুলিকে সক্রিয় করে তোলা হয়। সে ক্ষেত্রে দাতার শরীর থেকে টি-কোষ নিয়ে তাকে গবেষণাগারে বিশেষ পদ্ধতিতে বদলে শক্তিশালী করে তোলা হয়। সেই টি-কোষ তখন নিজস্ব রিসেপ্টর তৈরি করে। যার নাম 'চিমেরিক অ্যান্টিজেন রিসেপ্টর' (কার)। এই রিসেপ্টরের কাজ হল ক্যানসার কোষগুলিকে চিহ্নিত করে নষ্ট করা। তার পর এই কোষগুলিকে ক্যানসার রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়। চিকিৎসকেরা বলছেন, নতুন করে প্রতিস্থাপিত কোষগুলি গ্রহীতার শরীরে ঢুকে তাঁর রোগ প্রতিরোধ শক্তি কয়েক গুণ বাড়িয়ে তোলে। ফলে ক্যানসার আক্রান্ত কোষগুলির বিভাজন ও বৃদ্ধি, দুই-ই বন্ধ হতে শুরু করে। রোগীও ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠতে শুরু করেন। পরিবর্তিত কোষগুলি শরীরে ঢুকে অ্যান্টিবডির মতোও কাজ করে। ফলে ক্যানসার ফিরে আসার আশঙ্কা অনেক কমে যায়।
এই চিকিৎসার খরচ কত?
কার-টি সেল থেরাপিকে প্রথম অনুমোদন দেয় আমেরিকার ‘ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’(এফডিএ)। আমেরিকার এই চিকিৎসা পদ্ধতির খরচ ৩ থেকে ৪ কোটি টাকার মতো। ভারতে কোয়ার্টেমি নামে কার-টি সেল থেরাপির নতুন পদ্ধতিতে আপাতত ৩৫ থেকে ৫০ লাখ টাকার মতো খরচ হতে পারে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। পরে এই খরচ আরও কমানোর চেষ্টা করা যেতে পারে বলে খবর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy