আগে ঘরে ঘরে তিলের নাড়ু বা তিল তক্তি বানানোর চল ছিল। ফলে বাচ্চা থেকে বাড়ির বয়স্কদের ডায়েটে স্বাভাবিক ভাবেই তিল থাকত। কিন্তু ইদানীং নাড়ু, তক্তির মতো সাবেক খাবার পিছু হটলেও সেসমি চিকেন বা সেসমি ফিশের মতো মুখরোচক নানা পদ এসে জুটেছে খাবারের থালায়। কিন্তু এই তিল খাওয়ার উপকারিতা অনেকেই জানেন না। সাদা ও কালো তিল দুটোর গুণাগুণই প্রায় এক। তাই রোজকার খাবারে রাখতে পারেন সাদা বা কালো তিল।
তিলের গুণাগুণ
- * দু’ধরনের তিলেই ‘সিস্যামোলিনস’ এবং ‘সেসামিন’ নামক অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টস রয়েছে। আর তা ক্লান্তি কাটাতে খুবই কার্যকর।
- * পুষ্টিবিদ কোয়েল পালচৌধুরী বললেন, “তিলে ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও ফসফরাস প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। ফলে হাড়ের জোর বাড়াতেও তিলের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তাই ছোট থেকে বড় সকলের জন্যই তিল খুব উপকারী।” দাঁতের স্বাস্থ্যও ভাল রাখে।
- * রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে তিল কার্যকর। তাই ডায়াবিটিস রোগীদের ডায়েটে রোজ রাখতে পারেন তিল দিয়ে তৈরি পদ।
- * রক্তাল্পতার মতো সমস্যার মোকাবিলাতে তিল সিদ্ধহস্ত। “ঋতুস্রাবের সময়ে ডায়েটে তিল রাখলে উপকার পাবেন। এ সময়ে তা সার্বিক স্বাস্থ্য ভাল রাখে,” বলে জানালেন কোয়েল। গর্ভাবস্থাতেও ডায়েটে তিল রাখতে পারেন।
- * তিলের বীজে ফাইটোস্টেরল থাকায় কোলেস্টেরলের মাত্রানিয়ন্ত্রণ করে। আর এই ফাইটোস্টেরল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক।
- * এ ছাড়া তিলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, প্রোটিন ও ফাইবার থাকায় এর পুষ্টিগুণও বেশি।

রোজ কতটা করে খাবেন?
প্রাপ্তবয়স্কদের শরীরের গঠন ও তাঁদের প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী ঠিক করা হয় কতটা করে তিল তাঁরা রোজ খাবেন। তবে একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক রোজ আধ থেকে এক চামচ তিল খেতেই পারেন। কিন্তু ভাজাভুজি বা জাঙ্ক ফুডের মাধ্যমে তিল গ্রহণ না করে বরং বাড়িতে ঘরোয়া রান্নায় তিলবাটা বা তিল তেল ব্যবহার করতে পারেন। ঘরোয়া স্যান্ডউইচ বা স্যালাডেও তিল ছড়িয়ে দিতে পারেন। তিল বাটাও এখন নানা খাবারে ব্যবহার হয়, যা তাহিনি সস নামে পরিচিত। বাচ্চাদের খাবারে মেয়োনিজ়ের বদলে তাহিনি সস ব্যবহার করতে পারেন।
অনেকে আবার ক্যাপসুলের মাধ্যমেও তিল খেয়ে থাকেন। তবে বাজারে যতক্ষণ এই বীজ প্রাকৃতিক ভাবে কিনতে পাওয়া যাচ্ছে, সে ভাবেই খাওয়া ভাল। তিল গুঁড়িয়েও রাখতে পারেন। তা হলে অনেক দিন ভাল থাকবে। আর এই তিল পাউডার রান্নায় ব্যবহার করাও সহজ।
তিল তেলও ব্যবহার করতে পারেন রান্নায়। তবে খুব বেশি গরম করবেন না এই তেল। স্যালাডে ব্যবহার করতে পারেন। রূপচর্চাতেও অনেকে তিল তেল ব্যবহার করেন। বিশেষত যাঁদের শীতে ত্বক ফেটে রক্ত বেরিয়ে আসার মতো সমস্যা দেখা দেয়, তাঁরা ঠান্ডা পড়ার আগে থেকেই তিল তেল মাখতে পারেন নিয়মিত।
তবে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকলে বা তিল খেয়ে অ্যালার্জি হলে তা এড়িয়ে চলুন। আর পুষ্টিগুণ বেশি বলেই বেশি পরিমাণে খাবেন না। পরিমিত খান।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)