Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Mental Stress

মনের চাপে কেন মলিন হয় ত্বক? এর ঠেলায় কী কী বদল আসে চেহারায়?

মানসিক চাপ বা স্ট্রেস শুধু মনকে কুরে কুরে খাচ্ছে তা-ই নয়, পেলব ত্বকের উপরেও একেবারে কালি লেপে দিচ্ছে। মানসিক চাপে কী কী ক্ষতি হয় ত্বকের?

মানসিক চাপ ত্বকের ক্ষতি করে।

মানসিক চাপ ত্বকের ক্ষতি করে। ছবি: সংগৃহীত।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ মে ২০২৪ ২০:০০
Share: Save:

মনের উপর একরাশ মেঘ জমেছে। খালি মনে হচ্ছে, মনটা একদম ভাল নেই। অফিসে কাজের চাপ, অতিরিক্ত চিন্তা-ভাবনা, উৎকণ্ঠা— সব মিলিয়ে তালগোল পাকিয়ে গিয়েছে সব কিছু। চাকরি থেকে ব্যক্তিগত সম্পর্ক, সবেতেই টানাপড়েন। আত্মবিশ্বাস একেবারে তলানিতে। ঘুম নেই, দিনরাত মাথায় চিন্তার পাহাড়। বিছানায় এ পাশ-ও পাশ করেই রাত কাবার। এ দিকে ভাবনাচিন্তায় মেজাজ খিটখিটে, ঘন ঘন মুড সুয়িং লেগে আছে। আপনি বেশ টের পাচ্ছেন, ‘জীবন চলছে না আর সোজা পথে…।’ মানসিক চাপ বা স্ট্রেস শুধু মনকে কুরে কুরে খাচ্ছে তা-ই নয়, পেলব ত্বকের উপরেও একেবারে কালি লেপে দিচ্ছে। ত্বক যেন আর উজ্জ্বল, ঝলমলে নেই। অকালেই কেমন বুড়িয়ে যাচ্ছে। চোখের তলায় পুরু কালো দাগ। স্ট্রেস ত্বকেরও বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে।

স্ট্রেস বা মানসিক চাপ আসলে কী?

মনের ব্যধি হল ‘স্ট্রেস’। তবে ঠিক ব্যধি শব্দটা দিয়ে স্ট্রেস বা মানসিক চাপকে ব্যাখ্যা করা যাবে না। মানসিক চাপ ঠিক ডিপ্রেশন বা অবসাদ নয়। এ হল মনের এমন এক অবস্থা, যা একে একে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, অবসাদ সবেরই জন্ম দেয়। এর প্রতিফলন হল মাথা ধরা, তিরিক্ষে মেজাজ, প্রচণ্ড ক্লান্তি, ঘন ঘন মনের অবস্থার বদল, কাজে মন না বসা, কম ঘুম।

মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলেন, মানসিক চাপ বাড়লে মনের এমন একটা জটিল অবস্থা তৈরি হয়, যেখানে স্বাভাবিক চিন্তা-ভাবনার পথটা বন্ধ হয়ে যায়। ভয়, ছটফটানি, চাঞ্চল্য, দুঃখ সব মিলেমিশে এমন এক জট পাকানো অবস্থা তৈরি হয়, যে তার ছাপ পড়ে সারা শরীরেই। ত্বক, চুল, নখও তা থেকে বাঁচতে পারে না।

কেন ও কী ভাবে ত্বকের উপর ছাপ ফেলে মানসিক চাপ?

আমাদের মস্তিষ্ক ও ত্বকের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। চিকিৎসার পরিভাষায় একে বলা হয় ‘বাইডাইরেকশনাল পাথওয়ে।’ অর্থাৎ, সহজ করে বললে, দ্বিমুখী পথ। মন-মস্তিষ্কে যদি চাপ বাড়ে, তা হলে তার সরাসরি প্রভাব পড়ে ত্বকে। সেটা কী ভাবে?

মস্তিষ্কের একটি ছোট্ট কুঠুরি হল হাইপোথ্যালামাস। আমরা কতটা ঘুমোব, কতটা খিদে পাবে, মেজাজ কেমন থাকবে, কতটা হরমোন বেরোবে, তার সবটাই নিয়ন্ত্রণ করে মস্তিষ্কের এই অংশ। মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলেন, মানসিক চাপ মস্তিষ্কের ঠিক এই অংশটিতে গিয়েই সজোরে ধাক্কা মারে। ‘হাইপোথ্যালামাস-পিট্যুইটারি-অ্যাড্রেনাল’ (এইচপিএ) অংশের দফারফা হতে থাকে। মস্তিষ্কে তখন প্রবল উত্তেজনা তৈরি হয় যাকে চিকিৎসার ভাষায় বলে প্রদাহ বা ‘ইনফ্ল্যামেশন’। এই প্রদাহ পুরো মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। তখন স্ট্রেস হরমোন বা কর্টিসলের ক্ষরণ বেড়ে যায়। অন্যান্য হরমোনের ভারসাম্যও বদলে যেতে থাকে। মস্তিষ্কের কোষে তখন উত্তেজনা তৈরি হয়, যা স্নায়ুর মাধ্যমে বাহিত হয়ে ত্বকে গিয়ে পৌঁছয়। এই স্ট্রেস হরমোন তখন ক্রমাগত ত্বকের উপরেও প্রভাব ফেলতে শুরু করে। ত্বক যেহেতু সরাসরি বাইরের পরিবেশের সঙ্গে সংযোগ তৈরি করে, তাই ত্বকের উপর প্রভাব সবচেয়ে আগে চোখে পড়ে।

মনের চাপ ব্রণর কারণ হতে পারে।

মনের চাপ ব্রণর কারণ হতে পারে। ছবি: সংগৃহীত।

অতিরিক্ত মানসিক চাপ ত্বকে কী কী বদল আনে?

১) শুষ্ক, খসখসে হয় ত্বক

মানসিক চাপ যত বাড়ে, ততই ত্বক তার জৌলুস হারাতে শুরু করে। ত্বকের সেই পেলব ভাব আর থাকে না। শুকিয়ে খসখসে হতে শুরু করে। ব্রণ, ফুসকুড়ি দেখা দেয়। অনেক ক্ষেত্রে আবার সোরিয়াসিসের লক্ষণও ফুটে ওঠে। সোরিয়াসিস হলে ত্বক শুকিয়ে মাছের আঁশের মতো হয়ে যায়। লালচে-খয়রি ছাপ পড়ে যায় ত্বকে। অনবরত চুলকানি হতে থাকে। এই সোরিয়াসিস অনেক কারণেই হয়, যার মধ্যে একটি কারণ হল অতিরিক্ত মানসিক চাপ।

২) অকালেই বুড়িয়ে যায় ত্বক

এমন অনেক মানুষ আছেন, যাঁদের দেখে মোটেই বয়স বোঝা যায় না। পঞ্চাশেও মনে হয় ত্রিশের মেয়েটি। টানটান ত্বক, নির্মেদ শরীরে ভরপুর আবেদন, সামান্য বলিরেখাও পড়েনি। আবার অনেককে দেখবেন, কম বয়সেই কেমন যেন বুড়িয়ে গিয়েছে। এর একটি বড় কারণ হল দীর্ঘদিনের মানসিক চাপ ও উদ্বেগ। বয়স বাড়বে স্বাভাবিক নিয়মেই। দীর্ঘদিনের অযত্ন ও মনের উপর বাড়তে থাকা চাপই জমতে জমতেই কিন্তু গালে কালো ছোপ, মেচেতার দাগ পড়তে আরম্ভ করে। বয়সের আগেই গ্রাস করে বার্ধক্য। চিকিৎসকরা বলেন, শরীর ও মন যদি একসঙ্গে ভাল রাখা যায়, তা হলেই বয়স থমকে থাকবে আপনার হাতের মুঠোয়।

৩) চোখের নীচে এক পোচ কালি

কম ঘুমনো, অত্যধিক মানসিক চাপ, অবসাদ, হরমোনের পরিবর্তন, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস— এ সব কারণে চোখের চারপাশে কালো ছোপ পড়ে, যাকে আমরা ডার্ক সার্কেল বলে থাকি। অতিরিক্ত স্ট্রেস বা মানসিক চাপ ত্বকের কোলাজেন ও ইলাস্টিন প্রোটিন ভেঙে দেয়। শুধু তা-ই নয়, এই দুই প্রোটিন যাতে আর তৈরি হতে না পারে, সে চেষ্টাও করে। ফলে চামড়া কুঁচকে যেতে থাকে, চোখের নীচের চামড়া ফুলে যায় ও তাতে কালচে ছোপ পড়ে। ত্বকেও দাগছোপ পড়া শুরু হয়ে যায়।

৪) চুল পড়া শুরু হয়

অকালপক্কতা, লাগাতার চুল পড়ার অন্যতম কারণই কিন্তু মানসিক চাপ। তা বাড়লে অকালেই চুল পাকার সমস্যা শুরু হয়। অনেকের ঘন ঘন চুল পড়তে থাকে।

মানসিক চাপ কমাতে জীবন বাঁধুন নিয়মে

১) শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা— এই দুই ক্ষেত্রেই সুষম খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়ার অভ্যাস স্ট্রেস হরমোন কর্টিসলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। যার ফলে মানসিক চাপ কম হয়, স্বাস্থ্যও ভাল থাকে।

২) শহরের ব্যস্ত জীবন ও দূষণ যেমন পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক, তেমনই আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকারক। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে সারা দিনের মধ্যে অন্তত ৩০ মিনিট সবুজ গাছপালা, প্রকৃতির মাঝে থাকার অভ্যাস হ্যাপি হরমোনের (ডোপামিন) ক্ষরণ বৃদ্ধি করে, যার ফলে মন ভাল থাকে।

৩) নিয়মিত ব্যায়াম যেমন আমাদের অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি রোধ করে, দৈহিক শক্তি বৃদ্ধি করে, তেমনই মেডিটেশন-এর অভ্যাস আমাদের মনকে শান্ত করে। মনোযোগ ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে।

৪) গান শুনলে আমাদের মস্তিষ্ক থেকে স্ট্রেস হরমোন ক্ষরণের পরিমাণ কমে ও ডোপামিন ক্ষরণ বৃদ্ধি পায়। যার ফলে গান শুনলে মানসিক চাপ কমে মন ভাল থাকে।

৫) কথোপকথন বাড়ানো দরকার। প্রতিযোগিতার দৌড়ে এখনকার মানুষজন গল্প-আড্ডা দিতেই প্রায় ভুলতে বসেছে। তাই অনেক বেশি একাকিত্ব গ্রাস করছে, আর তার থেকেই মনের উপর চাপ বাড়ছে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, পছন্দের মানুষের সঙ্গে সমস্যা ও আবেগ নিয়ে কথা বলার অভ্যাস আমাদের মানসিক চাপের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।

অন্য বিষয়গুলি:

stress Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy