Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Head and Neck cancer

হেড অ্যান্ড নেক ক্যানসারে অস্ত্র হোক সচেতনতা

নিয়মিত তামাক, তামাকজাত দ্রব্য, পান সুপুরি থাওয়ার অভ্যেস থাকলে প্রি-ক্যানসার সিম্পটমের জন্য নিয়মিত নিজের মুখ পরীক্ষা করতে হবে।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

শ্রেয়া ঠাকুর
শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৮:২৬
Share: Save:

একটি সমীক্ষা দিয়ে শুরু করা যাক। ২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গে আইসিএমআর-এর করা সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে এ রাজ্যের ৪৬.৭ শতাংশ পুরুষ ও ১৫.৪ শতাংশ মহিলা ক্যানসারে আক্রান্ত। তার মধ্যে মুখে ক্যানসার (১৪%), জিভে ক্যানসার (১১%), স্বরযন্ত্র ও ইসোফেগাসে ক্যানসার যথাক্রমে ১০% ও ৭% মানুষের মধ্যে দেখা গিয়েছে। মহিলাদের ক্ষেত্রে মুখের ১৯%, জিভের ১৪%, স্বরযন্ত্রের ৫% ও ইসোফেগাসের ১০% ক্যানসার দেখা যায়। অর্থাৎ বলা চলে, হেড অ্যান্ড নেক ক্যানসার, বা আরও ভেঙে বলতে চাইলে মুখ, জিভ, গলা এবং স্বরযন্ত্রের ক্যানসার ক্রমশ বাড়ছে।

কাকে বলে হেড অ্যান্ড নেক ক্যানসার? মুখ, গলা, স্বরযন্ত্র, টনসিল গ্রন্থি, থাইরয়েড গ্রন্থি, প্যারোটিড গ্রন্থি, নাক, সাইনাস, খাদ্যনালির উপরের অংশ ক্যানসারে আক্রান্ত হলে তাকে ‘হেড অ্যান্ড নেক ক্যানসার’ বলা হয়।

ক্যানসার বিশেষজ্ঞ শল্যচিকিৎসক ডা. গৌতম মুখোপাধ্যায় বললেন, “প্রায় ৯১ শতাংশ ওরাল ক্যানসারের সঙ্গে তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের সম্পর্ক রয়েছে। আর সেই সঙ্গে যদি মদ্যপান যোগ হয় তবে ক্যানসারের আশঙ্কা প্রায় দশ গুণ বেড়ে যায়।” বিষয়টি যথেষ্ট উদ্বেগের বলে জানাচ্ছেন তিনি। তাঁর কথায়, “মদ্যপান করলেই ওরাল ক্যানসার হবে তা নয়, কিন্তু সঙ্গতে যদি তামাক থাকে তবে অসুখটি হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়। ভারতে তামাকের পাশাপাশি তামাকজাত দ্রব্য (গুটখা, খৈনি, নস্যি, গুড়াকু) ইত্যাদির ব্যবহার ক্যানসারের আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়। একই কথা বলা চলে পান-সুপুরি-জর্দার ক্ষেত্রেও।”

অর্থাৎ বলা যায়, নিয়মিত তামাক, তামাকজাত দ্রব্য, পান সুপুরি থাওয়ার অভ্যেস থাকলে প্রি-ক্যানসার সিম্পটমের জন্য নিয়মিত নিজের মুখ পরীক্ষা করতে হবে। কোনও রকম লক্ষণ দেখলেই হতে হবে সতর্ক। প্রয়োজনে নেশা ছাড়তে হবে।

ক্যানসারের প্রাদুর্ভাব, বুঝব কী ভাবে? ডা. মুখোপাধ্যায় বললেন, “অন্য ক্যানসারের চেয়ে ওরাল ক্যানসার একটু আলাদা। এই ধরনের ক্যানসারে আগে থেকে কিছু লক্ষণ টের পাওয়া যায়, একে বলা হয় প্রি-ক্যানসার সিম্পটম। যে ভাবে সেলফ ব্রেস্ট এগজামিনেশন করতে বলা হয় মহিলাদের, সে ভাবে মাউথ সেলফ এগজামিনেশন করতে হয়। এ বার তাতে যদি দেখা যায় মুখে বা জিভে সাদা, কালো বা লাল দাগ। ছোট ছোট ঘা বা দাঁত অল্প নড়বড়ে হয়ে যাচ্ছে। তখন অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।”

অর্থাৎ, যদি লক্ষণের একটি তালিকা করা হয় তা হলে দেখা যাবে

কোন লক্ষণ বৃদ্ধি পেলে চিকিৎসকের কাছে যাবেন? ডা. মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “প্রাথমিক ভাবে দীর্ঘদিন ধরে মুখে ঘা, প্রবল রক্তপাত হলে, মুখ থেকে দুর্গন্ধ বেরোচ্ছে মনে হলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। এ ছাড়াও দেখা যায়, মুখের হাঁ ক্রমশ ছোট হয়ে যাচ্ছে বা সাব মিউকাস ফাইব্রোসিস, দাঁত মাজতে গিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে। এ ছাড়াও গলায় ব্যথাহীন মাংসপিণ্ডও দেখা দিতে পারে। এই পরিস্থিতিতে আশু প্রয়োজন চিকিৎসকের কাছে যাওয়া।”

এ ছাড়াও, জিনগত কারণ, হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস ও এপস্টাইন-বার ভাইরাসের প্রকোপেও গলা, স্বরযন্ত্র ও নাকের ক্যানসার হতে পারে।

চিকিৎসা কী ভাবে?

মূলত অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে এই ধরনের ক্যানসারের চিকিৎসা করা হয়। কখনও প্রয়োজন হয় রেডিয়েশনের। আর নিতান্ত প্রয়োজন হলে কেমোথেরাপি। প্যারোটিড ও থাইরয়েড গ্রন্থিতে ক্যানসারের চিকিৎসায় প্রয়োজন অস্ত্রোপচারের।

ডা. গৌতম মুখোপাধ্যায় বললেন, “কোনও রকমের লক্ষণ দেখা দিলে প্রথমেই করতে হবে বায়পসি। অনেকের ধারণা, বায়পসি করলে ক্যানসার ছড়িয়ে যায়। এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। বায়পসির মাধ্যমে মূলত গভীর সংক্রমণ নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে যক্ষ্মাও পড়ে। যদি রিপোর্টে ক্যানসার ধরা পড়ে তার পরে সিটি স্ক্যান, এমআরআই প্রভৃতি পরীক্ষার মাধ্যমে ক্যানসারটি কোন স্টেজে আছে তা নির্ধারণ করা হয়। তার পরে শুরু হয় চিকিৎসা।” তিনি আরও জানালেন, হেড অ্যান্ড নেক ক্যানসার যদি সাঙ্ঘাতিক ভাবে ছড়িয়ে না গিয়ে থাকে তবে অস্ত্রোপচারে সম্পূর্ণ নিরাময় হয়। বর্তমানে বহু উন্নত চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে অসুখটি নিরাময়ে। প্রথমে আক্রান্ত অংশটি বাদ দেওয়া হয়, তার পর প্লাস্টিক সার্জনরা তার পুনর্গঠন করেন।

কী ভাবে রুখব অসুখটি? ডা. মুখোপাধ্যায়ের কথায়, সচেতনতা বৃদ্ধি করেই অসুখটি রুখতে হবে। প্রথমেই মাত্রাতিরিক্ত নেশা থেকে বিরত থাকতে হবে। এর পাশাপাশি, নিয়মিত মুখ পরীক্ষা করতে হবে। অনেকেই প্রি-ক্যানসারের লক্ষণ দেখা দিলেও চিকিৎসকের কাছে আসেন না। ফেলে রাখেন, উপেক্ষা করেন। বাড়াবাড়ি হলে তবে আসেন, তখন অনেকাংশেই ব্যাপারটি হাতের বাইরে বেরিয়ে যায়। এর পাশাপাশি, তামাক নিয়ন্ত্রণে আরও কড়া আইন প্রয়োজন। এ ব্যাপারে আমজনতার মধ্যে যেমন সচেতনতা বাড়াতে হবে, তেমনই তামাকজাত পণ্য বিক্রয়ের ব্যাপারেও সরকারের পদক্ষেপ জরুরি।

মাত্রাতিরিক্ত কোনও কিছুর ব্যবহারই শরীরে ক্ষতি ডেকে আনে। তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের ফলে হেড অ্যান্ড নেক ক্যানসার ঠিক তেমনই একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ। প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে অসুখটি নিরাময়যোগ্য। সুতরাং, অবহেলা নয়, বরং এই ক্যানসার মোকাবিলায় অস্ত্র হোক সচেতনতা। রোগ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা না করে তামাকজাত দ্রব্যের নেশা ত্যাগ করতে পারলে সবচেয়ে ভাল। সুস্থ শরীরই সুস্থ ভবিষ্যতের দিশারি।


অন্য বিষয়গুলি:

cancer awareness
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy