Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Russia Ukraine War

Russia-Ukraine War: রাজায় রাজায় যুদ্ধ হবে ধনীরা আরও ধনী হবে? রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে মতামত তারকাদের

কৌশিকের কথায়, ‘‘অতিমারির সময় দেখলাম, যাঁরা ধনী ছিলেন তাঁরা আরও ধনী হলেন। রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের পরেও সেটাই হবে। ঠিক যেভাবে আমেরিকা সিরিয়া আক্রমণ করে সেখানকার বিমানঘাঁটি থেকে বড় বড় সেতু সহ অনেক কিছু ধ্বংস করল। তারপর নতুন করে সে সব মেরামতের বরাত পেল আমেরিকার বড় ইঞ্জিনিয়ারিং সংস্থাগুলোই।’’

কৌশিক সেন, শ্রীজাত, সোহিনী সরকার

কৌশিক সেন, শ্রীজাত, সোহিনী সরকার

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৮:৪৫
Share: Save:

প্রবাদেই আছে, ‘রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয়, উলু-খাগড়ার প্রাণ যায়।’ একুশ শতকে রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ সেই প্রবাদকে সামান্য বদলে দিয়েছে, ‘রাজায় রাজায় যুদ্ধ হবে ধনীরা আরও ধনী হবেন!’ অতিমারির কবল থেকে বিশ্ব সম্পূর্ণ মুক্ত নয়। তার আগেই শুরু মানুষে মানুষে যুদ্ধ। রাশিয়া ধ্বংস করেছে ইউক্রেনের বিমানঘাঁটি। মৃত্যুশোকে বিশ্ব স্তব্ধ। দুশ্চিন্তার ভাঁজ ভারত তথা বাংলার বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদেরও। অভিনেতা, বাদ্যকার, কবি— সবাই ব্যথিত। অতিমারির পর এ বার যুদ্ধের আঁচে পুড়তে চলেছে মানব জাতি? আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে কথা বললেন কৌশিক সেন, রুক্মিণী মৈত্র, শ্রীজাত, সোহিনী সরকার, বিক্রম ঘোষ।

‘রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয়’, চেনা প্রবাদটিকে কৌশিকই সামান্য বদলে নিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘অতিমারির সময় দেখলাম, যাঁরা ধনী ছিলেন তাঁরা আরও ধনী হলেন। রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের পরেও সেটাই হবে। ঠিক যেভাবে আমেরিকা সিরিয়া আক্রমণ করে সেখানকার বিমানঘাঁটি থেকে বড় বড় সেতু সহ অনেক কিছু ধ্বংস করল। তারপর নতুন করে সে সব মেরামতের বরাত পেল আমেরিকার বড় বড় ইঞ্জিনিয়ারিং সংস্থাগুলোই। এ ক্ষেত্রেও সেটাই হতে চলেছে।’’ একই সঙ্গে তাঁর দাবি, এটা নতুন কিছুই নয়। যুদ্ধ নিরবচ্ছিন্ন। বিশ্বে কোথাও না কোথাও সংঘাত বা লড়াই চলছেই। এবং যাঁরা শাসনতন্ত্রের মাথায় বসে রয়েছেন তাঁদের এসবে কিছুই আসে-যায় না। ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান রাশিয়ার সামরিক শাসন কায়েম করার ক্ষেত্রে প্রচণ্ড গুরুত্বপূর্ণ। চিন রাশিয়াকে সমর্থন করছে। হয়তো কিছু দিন পরে আমেরিকাও যোগ দেবে। মার খাবে সাধারণ মানুষ। কৌশিকের কটাক্ষ, তাঁদের কথা কবে, কে ভেবেছে?

রুক্মিণী কথাই শুরু করেছেন যুদ্ধ নয় শান্তি চাই বার্তা দিয়ে। তাঁর মতে, এখনও অতিমারি পুরোপুরি ছেড়ে যায়নি। গত দু’বছর ধরে সব স্তরের মানুষ তার সঙ্গে লড়াই করে যাচ্ছে। সব স্তরের মানুষ একই ভাবে অর্থনৈতিক দিক থেকে সমস্যার মুখোমুখি। সেই সময় সবাই প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, মানুষকে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। অভিনেত্রী অবাক, ‘‘কী করে সবাই সেই প্রতিজ্ঞা ভুলে গেলেন? মানুষ এখন মানুষকে মারতে ছুটছে! হাত কাঁপছে না কারওর। দেখে খুব ভয় করছে। কষ্টও হচ্ছে।’’ রুক্মিণীর দাবি, ছোটবেলায় তিনি কার্গিল যুদ্ধের কথা শুনেছিলেন। তাতেই ভয়ে কুঁকড়ে গিয়েছিলেন। এখন যুদ্ধের ছবি বা ঝলক আর নিতে পারছেন না তিনি। অভিনেত্রীর আফশোস, ‘‘বাবার কাছে শুনেছিলাম, মানুষ পশুদের তুলনায় উন্নত। কারণ, তার বিবেক, বুদ্ধি আছে। একুশ শতকের মানুষের বোধহয় সেই সব লোপ পেয়েছে। তারই ফলাফল এই যুদ্ধ। আমার একটাই বার্তা, যে ভাবেই হোক, যুদ্ধ থামান। বিশ্বে শান্তি ফিরে আসুক।’’

রুক্মিণী মৈত্র-বিক্রম ঘোষ

রুক্মিণী মৈত্র-বিক্রম ঘোষ

রুক্মিণীর কথার সুর কবি শ্রীজাতর কথাতেও। সেই জায়গা থেকে দাঁড়িয়ে তাঁর বক্তব্য, যুদ্ধের প্রভাব ইতিমধ্যেই পড়তে শুরু করেছে। দলে দলে মানুষের মৃত্যুর খবর পাচ্ছেন তিনি। বিশ্বের অর্থনীতিতেও তার ছাপ পড়তে শুরু করেছে। তার থেকেও বড় কথা, ক্ষমতার প্রতি মানুষের চূড়ান্ত লোভ। তাঁর মতে, ‘‘মানুষ বুঝছে না, জীবনের কাছে এই আগ্রাসন, দখল খুবই তুচ্ছ। গত দু’বছর সবাই কাছ থেকে মৃত্যুকে দেখেছেন। জীবনের মূল্য বুঝেছেন। জীবনকে ভালবাসতে শিখেছেন। তার পরেও কী করে পরিকল্পিত মৃত্যুর দিকে মানুষ এগিয়ে চলেছে?’’ এখনও পর্যন্ত ভারত নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করছে। এই ভূমিকা বেশি দিন পালন করা সম্ভব? কবির কথায়, সবাই চান, সব দেশ চায় নিরপেক্ষ থেকে যুদ্ধ মিটিয়ে ফেলতে। ভারতও তাইই চাইছে। কিন্তু যুদ্ধ ক্রমশ ভয়াবহ আকার ধারণ করলে হয়তো সেটা আর সম্ভব হবে না ভারতের মতো শক্তিশালী দেশের পক্ষেও।

ব্যস্ততার ফাঁকেই রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ নিয়ে প্রকাশিত সমস্ত খবরই খুঁটিয়ে পড়েছেন সোহিনী সরকার। যুদ্ধের কথা তুলতেই তাঁর আফশোস, ‘‘অতিমারির পরে যুদ্ধ। মানব সভ্যতা বোধহয় এ ভাবেই ক্রমশ ফুরিয়ে যাওয়ার পথে।’’ একই সঙ্গে তাঁকে ভাবিয়েছে নিত্য পণ্যের আমদানির বিষয়টিও। অভিনেত্রীর ভাবনা, ইউক্রেন থেকে ভোজ্য সাদা তেল আসে। রাশিয়া থেকে গম। যুদ্ধ মানেই কালোবাজারি। নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি। অতিমারির কারণে বহু জনের কর্মসংস্থান নেই। তার উপরে দাম বাড়লে সাধারণ মানুষ খাবে কী?

অখুশি তালবাদ্যকার পণ্ডিত বিক্রম ঘোষও। তাঁর কথায়, এখনও অতিমারি বহাল তবিয়তে বর্তমান। তার মধ্যেই যুদ্ধ। যা একেবারেই কাম্য নয়। মানব সভ্যতা তার অস্তিত্ব সংকটের মুখোমুখি। সভ্যতাকে বাঁচাতে গেলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যুদ্ধ থামাতে হবে। এর জন্য এগিয়ে আসতে হবে বিশ্বের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষদেরই।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy