Advertisement
E-Paper

Amitabh Bachchan: অমিতজির ‘পর্দার জামাই’ আমি, ভিড়ের মধ্যেও ঠিক খুঁজে বের করেছিলেন

ঋভু আমায় দেখাতেই চেয়ার ছেড়ে উঠে ডেকে বললেন, ‘‘ওখানে দাঁড়িয়ে কেন? সামনে চলে এস।’’

‘জীবনে প্রথম সে দিন কাজ করতে গিয়ে সেটে কারওর সঙ্গে নিজস্বী তুলেছিলাম। অমিতজি প্রথম, তিনিই শেষ ব্যক্তি।’

‘জীবনে প্রথম সে দিন কাজ করতে গিয়ে সেটে কারওর সঙ্গে নিজস্বী তুলেছিলাম। অমিতজি প্রথম, তিনিই শেষ ব্যক্তি।’

টোটা রায়চৌধুরী

টোটা রায়চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২১ ১৪:২৯
Share
Save

ছোটবেলায় আমার রবিবার মানে ফুটবল, মাংস-ভাত আর অমিতাভ বচ্চনের ছবি দেখার দিন। অমিতজির ‘ত্রিশূল’, ‘শক্তি’ আরও বহু ছবি দেখেছি এই দিনেই। তাঁরই মুখোমুখি পরিচালক ঋভু দাশগুপ্তের ‘তিন’ ছবিতে। পর্দায় আমি ওঁর জামাই! এক সঙ্গে কাজ করব সেই সূত্রে প্রযোজক সুজয় ঘোষ বিগ বি-র সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিয়েছিলেন।

সবাই যেমন আমিও তেমনি ওঁর সম্বন্ধে অনেক কিছু ধারণা নিয়ে গিয়েছি। ‘সুপারস্টার’, অভিনয় দুনিয়ার ‘হিমালয় চুড়ো’... ইত্যাদি ইত্যাদি। ফলে, আমি তটস্থ। আলাপ হতেই পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করি। অমিতজির এ সবে প্রবল আপত্তি। তিনি বাধা দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে বললেন, ‘‘এ সব কোরো না। একদম নয়।’’ প্রথম সাক্ষাৎ এখানেই শেষ। আমি আমার স্বভাব মতো এক পাশে সরে গিয়েছি। নিজের সংলাপ মুখস্থ করছি। চিত্রনাট্য অনুযায়ী, ওঁর দোষে আমার মেয়ে অর্থাৎ অমিতজির নাতনির মৃত্যু হবে। তার জেরে আমি বেশ কড়া কড়া কথা শোনাব। দোষারোপ করব। গলায় যথেষ্ট ঝাঁঝ থাকবে।

এমনিতেই আমি কাজে ফাঁকি দিই না। সেখানে অমিতজির বিপরীতে সংলাপ বলতে হবে। অভিনয় করতে হবে। কোনও খুঁত যাতে না থাকে, তার জন্যে কোমর বেঁধে নিজেকে প্রস্তুত করেছি। এ দিকে পরিচালক পর্দার ‘শাহেনশা’কে তাড়া দিয়ে বলছেন, ‘‘স্যর, সূর্য ডোবার আগে শট নিতে হবে। বিকেল চারটের মধ্যে কাজটা শেষ করতে পারলে ভাল হয়।’’ সঙ্গে সঙ্গে জলদমন্দ্র স্বরে জবাব এল, ‘‘কোনও চিন্তা কোরো না। আমার সহ-অভিনেতারা তৈরি থাকলেই শট দেব। আমি প্রস্তুত।’’ সেই ফাঁকে দূর থেকে খুঁটিয়ে ওঁর সব কিছু দেখছি। প্রচণ্ড লম্বা। উঁচু জায়গায় না বসলে আরাম করে পা রাখতে পারেন না। তাই চারটে চেয়ারের উপর চেয়ার দিয়ে তাঁর জন্য উঁচু বসার জায়গা তৈরি। অমিতজি তার উপরে বসে সংলাপ ভাল করে দেখে নিচ্ছেন।

এক সময় সবাই প্রস্তুত। ক্যামেরা তার জায়গায়। আমরা আমাদের অংশটুকু যে যার মতো করে করলাম। এক শটেই পুরো দৃশ্যগ্রহণ শেষ! সেই প্রথম অমিতাভ বচ্চন আমার দিকে ভাল করে তাকালেন। স্মিত হাসি খেলে গেল ওঁর ঠোঁটে। একই ভাবে উল্টো দিক থেকেও শট নেওয়া হল। ঋভু দাশগুপ্ত জানালেন, কয়েকটা ‘বোনাস শট’ নিয়ে রাখবেন। যাকে ছবির দুনিয়ায় বলা হয়, বাড়তি শট। গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্য। তাই পরিচালক কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছিলেন না। অমিতজির মৃদু আপত্তি ছিল। পরে গুরুত্ব বুঝে তিনিও রাজি। কাজ শেষ হতে আবারও ওঁর সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। এ বার বিনীত অনুরোধ, ‘‘স্যর, আপনার সঙ্গে কি একটি ছবি তুলতে পারি?’’ সঙ্গে সঙ্গে আন্তরিক আপ্যায়ন, ‘‘অবশ্যই অবশ্যই।’’ জীবনে এই প্রথম সে দিন কাজ করতে গিয়ে সেটে কারওর সঙ্গে নিজস্বী তুলেছিলাম। অমিতজি প্রথম, তিনিই শেষ ব্যক্তি।

পরের দিন ওঁর পরিবারের সঙ্গে একটি শট। একটি ঘরে অমিতজি বসবেন। তাঁর সামনে বিভিন্ন পোজে মেয়ে, জামাই, স্ত্রী থাকবেন। দেওয়ালে ওঁর অনেক ছবি সাজানো। এই শট নেওয়া হবে। দেহরক্ষী, সেটের কলাকুশলী মিলিয়ে ঘরের মধ্যে ভাল ভিড়। আমি তাই একটু পিছনে দাঁড়িয়ে। ঋভু ওঁকে শট বুঝিয়ে দিচ্ছেন। জামাই অর্থাৎ আমার কথা বলতেই অমিতজি বলে উঠলেন, ‘‘কোথায় সে?’’ ঋভু আমায় দেখাতেই চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন ৬ ফুট ৪ ইঞ্চির দীর্ঘদেহী জীবন্ত কিংবদন্তি। আমায় ডেকে বললেন, ‘‘ওখানে দাঁড়িয়ে কেন টোটা? সামনে আমার কাছে চলে এস।’’

অমিতাভ বচ্চন টোটা রায়চৌধুরীকে উঠে দাঁড়িয়ে ডাকছেন! শুনে অনেকেই হয়তো ঠাট্টা করে বলবেন, একেই বলে ‘জামাই আদর’। আমি তো জানি, আমি কী পেলাম! অমিতজি বসে ডাকলেই তো আমি কৃতার্থ। শুনেছি, পরে ঋভুকে বলেছিলেন, ‘‘খুব ভাল অভিনেতা।’’ শুনেই আফসোস হয়েছিল, ইসস! ঋভু যদি একটু রেকর্ড করে রাখতেন!

Tota Roy Chowdhury Amitabh Bachchan Bollywood
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy