বেশ কয়েক বছর ধরেই তিনি বাংলা ছবিতে অভিনয় করছেন। প্রেম দিবস উপলক্ষে তাঁর নতুন গানও (‘শুধু তোমারই জন্য’) প্রকাশ্যে এসেছে। গানের ভিডিয়োটি বাবুল নিজেই পরিচালনা করেছেন। সম্প্রতি অরিন্দম শীল পরিচালিত ‘উৎসব-এর রাত্রি’ ছবির শুটিং ফ্লোরে পাওয়া গেল অভিনেতাকে। রূপটানের মাঝেই সময় দিলেন আনন্দবাজার অনলাইনকে। অভিনয় এবং ইন্ডাস্ট্রি প্রসঙ্গে নানা কথা বললেন সঙ্গীতশিল্পী, রাজনীতিবিদ বাবুল।
আরও পড়ুন:
এক সময়ে বাংলা ছবিতে নিয়মিত গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করতেন বাবুল। এ বার বেশ কয়েক বছরের বিরতির পর ফিরেছেন অভিনয়ে। বাবুল জানালেন, কেরিয়ারের শুরু থেকেই তাঁর মনে অভিনেতা হওয়ার বাসনা ছিল। তাঁর কথায়, ‘‘এটা কোনও অলীক কল্পনা নয়। তনুবাবু (পরিচালক তরুণ মজুমদার) যখন গানের রেকর্ডিংয়ের সময় কয়েক মিনিটের কথোপকথনের পর আমাকে ‘চাঁদের বাড়ি’র জন্য বেছে নেন, তখনই মনের জোর বেড়ে গিয়েছিল।’’ ২০০৫-০৬ সাল নাগাদ প্রয়াত পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষের সঙ্গেও দু’টি ছবিকে কেন্দ্র করে বাবুলের একপ্রস্ত আলোচনা হয়। অভিনেতা বললেন, ‘‘তার পর ‘নৌকাডুবি’ ছবির জন্যও ঋতুদা আমাকে বেছে নেন। কিন্তু কোনও কারণে শেষ পর্যন্ত সেটা বাস্তবায়িত হয়নি। অন্য একটি ছবি নিয়ে কথা হয়েছিল। সেটাও হয়নি।’’
কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, সৃজিত মুখোপাধ্যায় বা নন্দিতা রায় ও শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ছবিতে অভিনয় করেছেন বাবুল। কিন্তু এখন তাঁকে এই পরিচালকদের ছবিতে দেখা যাচ্ছে না কেন? নেপথ্যে কি তাঁর রাজনৈতিক জীবনের কোনও প্রভাব রয়েছে? বাবুল হেসে বললেন, ‘‘এটা তাঁরাই ভাল বলতে পারবেন। তাঁদের থেকে যে ভালবাসা পেয়েছিলাম, তাতে মনে হয়েছিল ভবিষ্যতে হয়তো কাজের পরিসর আরও বাড়বে। তবে আমার মনে হয়, এটা কাকতালীয়। বিষয়টাকে অন্য ভাবে দেখার কোনও কারণ নেই।’’
রাজনীতি নিয়ে বাবুলের ব্যস্ততা রয়েছে। পাশাপাশি অভিনয় এবং গানও চালিয়ে যাচ্ছেন সমান তালে। কী ভাবে সব দিকে সামঞ্জস্য রাখছেন তিনি? হেসে বলেন, ‘‘আমার মাথায় অনেকগুলো সুইচ রয়েছে। আমার অফিসে খোঁজ নিতে পারেন। কোনও ফাইল পড়ে রয়েছে দেখবেন না।’’ কোনও কাজ বাকি থাকলে দফতরের কর্মীদের শুটিং ফ্লোরে চলে আসার নির্দেশ দিয়ে থাকেন বাবুল। তাঁর কথায়, ‘‘স্মার্টফোন অনেক কিছু সহজ করে দিয়েছে। রাস্তায় যেতে যেতেও কাজ সেরে নিতে পারি।’’

ছবি: সংগৃহীত।
তবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থাকার সময়ে তাঁর শৈল্পিক স্বাধীনতায় খাঁড়া নেমে এসেছিল, সে কথা স্বীকার করে নিলেন বাবুল। বললেন, ‘‘এটা তো বুঝতে পারিনি যে বিদেশে আমার শো বন্ধ হয়ে যাবে! অভিনয় এবং গানের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শুরুতে যে সহযোগিতা করেছিলেন, পরে তা-ই তাঁর বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়াবে, সেটাও বুঝতে পারিনি।’’ এখন রাজ্যের শাসকদলের সদস্য বাবুল। রাজ্য রাজনীতির ময়দানে এখনও পর্যন্ত ‘শিল্পী’ বাবুল স্বচ্ছন্দবোধ করেন। বললেন, ‘‘মাননীয়া দিদি আমাকে কোনও দিন এ রকম কিছু বলেননি। গান বা অভিনয়, যেটাই করতে চাই মন দিয়ে করতে বলেছেন। এটা আমাকে আমার কাজটা আরও ভাল ভাবে করতে অনুপ্রাণিত করে।’’
রাজনীতিক হিসেবে বাবুল তাঁর কাজে কোনও রকম খুঁত রাখেন না বলেই দাবি করলেন। তাই অন্য কাজের সময় বার করে নিতে পারলে সেখানে কোনও আপত্তি থাকতে পারে না বলেই মনে করেন তিনি। বাবুলের কথায়, ‘‘আমি যদি তিন দিন অফিস করতাম, তার পর দু’দিন ছুটি নিয়ে অভিনয় করতাম, তা হলে নিশ্চয়ই প্রশ্ন উঠত।’’ সব দিকে সমতা বজার রাখার মতো স্ফূর্তি কী ভাবে খুঁজে পান বাবুল? অভিনেতা মনে করেন, এ ক্ষেত্রে পরিবারের সমর্থনকে এগিয়ে রাখবেন তিনি। সঙ্গে যোগ করলেন, ‘‘২৪ ঘণ্টা অনেকটা সময়। সারা ক্ষণ সোশ্যাল মিডিয়া এবং ফালতু কাজ না করলে ঠিকই সময় বার করে নেওয়া যায়।’’
সমাজমাধ্যমকে নিজের কাজের প্রয়োজনে ব্যবহার করেন বাবুল। তাঁর স্পষ্ট যুক্তি, ‘‘কিশোরকুমার বা লতা মঙ্গেশকরকে তো কেউ সমাজমাধ্যমে প্রশ্ন করতেন না! আমি বিশেষ কেউ নই। সমাজমাধ্যমে মন্তব্যও আমার প্রয়োজন নেই।’’ উল্লেখ্য, কিশোরকুমারকে নিয়েই সম্প্রতি একটি একটি মন্তব্য করেছিলেন মধুবালার বোন মধুর ভূষণ। তিনি দাবি করেন, শেষ বয়সে মধুবালাকে ছেড়ে যান কিশোরকুমার। সমাজমাধ্যমে বিষয়টির প্রতিবাদ করেছিলেন বাবুল। বললেন, ‘‘কিশোরকুমারের অনুরাগী হিসেবে তাঁর অসম্মান মেনে নেব না। যা সত্য সেটাই বলেছি। তা নিয়ে কেউ আমাকে কটাক্ষ করলেন কি না, সেটা জানার দরকার নেই। ওই ঘটনার পর মুম্বইয়ে গিয়েও অনেকেই আমাকে জানিয়েছেন যে আমি ঠিকই বলেছি।’’ এই প্রসঙ্গেই নতুন প্রজন্মের প্রতি বার্তা দিতে চাইলেন বাবুল। বললেন, ‘‘সত্যিই যদি জীবনে এগিয়ে যেতে চাও, তা হলে সমাজমাধ্যমের নেতিবাচক মন্তব্যকে গায়ে মেখো না। যেটা তোমরা মানুষের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাও, সেটাই পোস্ট করো।’’
আগামী দিনে গানের পাশাপাশি অভিনয় নিয়েও একাধিক প্রস্তাব পেয়েছেন বাবুল। তবে এখনই এই প্রসঙ্গে কোনও তথ্য জানাতে চান না তিনি। হেসে বললেন, ‘‘রাজনীতিতে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের সময় নয়, কাজটা শেষ হলে তার পর মালা পরতে আমার বেশি ভাল লাগে। তাই এক এক করে চূড়ান্ত হোক, ঠিক জানিয়ে দেব।’’