Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
cinema

অভিমানের পাহাড়-ডিঙোনো সম্পর্কের আখ্যান

অপরাজিতার ডাক নাম অপু (তুহিনা দাস), যে মাকে হারিয়েছে সদ্য। বাবার (শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়) উপরে তার পাহাড়প্রমাণ অভিমান। মায়ের মৃত্যুর জন্য বাবাকে, বাবার দায়িত্বজ্ঞানহীনতাকে দায়ী করে অপু।

সায়নী ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২২ ০৭:৩১
Share: Save:

কথা না বলতে বলতে এক সময়ে ফুরিয়ে যায় সব কথা। চার বছর পরে যখন বাবা আর মেয়ে মুখোমুখি হয় ডিনার টেবিলে, তখন জড়তা ভাঙে না সে কথোপকথনে। অস্বস্তি জমাট বেঁধে থাকে সারা সময়টা জুড়ে। পেরিয়ে যায় মুহূর্তরা, আর না-বলা-কথারা বন্দি হয় ডায়েরিতে। পরিচালক রোহন সেনের দ্বিতীয় ফিচার ফিল্ম ‘অপরাজিতা’ সেই না বলা কথারই আখ্যান। বিষয় নির্বাচনে অভিনবত্ব না থাকলেও, রয়েছে সংবেদনশীলতা। আর মুখ্য দুই চরিত্রাভিনেতার নির্বাচন আপাত-সরল এ ছবিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে অনেকটা।

অপরাজিতার ডাক নাম অপু (তুহিনা দাস), যে মাকে হারিয়েছে সদ্য। বাবার (শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়) উপরে তার পাহাড়প্রমাণ অভিমান। মায়ের মৃত্যুর জন্য বাবাকে, বাবার দায়িত্বজ্ঞানহীনতাকে দায়ী করে অপু। মা মারা যাওয়ার পর থেকে বাবার সঙ্গে বছরের পর বছর কথা বলেনি সে, একই ছাদের তলায় থেকেও। অপুর অফিসেই চাকরি করে তার প্রেমিক সাহেব (দেবতনু)। একসঙ্গে অফিস যাতায়াত আর মাঝে মাঝে বাড়িতে আসা-যাওয়ার মধ্যেই ঘুরে ফেরে তাদের প্রেম। সেই সম্পর্কেও বাবা-মেয়ের টানাপড়েন ছায়া ফেলে। একরাশ অভিমান, বুকে পাথর চেপে রাখা কষ্ট নিয়ে চরিত্ররা এগিয়ে চলে ছবির সঙ্গে সঙ্গে।

অপরাজিতা
পরিচালক: রোহন সেন
অভিনয়: শান্তিলাল, তুহিনা, দেবতনু
৫/১০

‘অপরাজিতা’র চলন মন্থর, খানিক একঘেয়েও। এই একঘেয়েমি কোথাও হয়তো জরুরি ছিল চরিত্রদের একাকিত্ব, ক্লান্তিকর যাপনকে তুলে ধরতে। তবে কিছু সম্পর্ক আরও গভীরে গিয়ে দেখালে ভাল হত। যেমন, অপরাজিতা আর তার বড় দিদির (অমৃতা দে) সমীকরণ। অপরাজিতার প্রেমজীবনও আর একটু তলিয়ে দেখানো যেত। যে অফিসে অপুর দিনের বেশির ভাগ সময়টা কাটে, সেটিও উহ্য রাখা হয়েছে। চরিত্র-নির্মাণে বৈচিত্রের অভাব ধরা পড়েছে ছবিতে। অপু আর তার বাবার রোজনামচার মধ্যে একই জায়গায় ঘুরেছে গল্প, যা কিঞ্চিৎ পুনরাবৃত্তির দোষে দুষ্ট। সেটের বাইরে দৃশ্যান্তরের মুহূর্তে কলকাতা শহরকে ড্রোন শটে একাধিক বার ধরেছেন রোহন। গাড়িতে যাওয়ার দৃশ্যগুলি ছাড়া সেটের বাইরে খুব বেশি বেরোয়নি ক্যামেরা। চিত্রনাট্যে সাবপ্লটের অভাবও স্পষ্ট। নবীন পরিচালক তাঁর আগামী ছবিগুলিতে এই সব ক্ষেত্রে আরও পরিণত হয়ে উঠবেন, আশা করা যায়।

এ ছবিতে দর্শকের আগ্রহ ধরে রাখতে অবশ্য তুহিনা এবং শান্তিলালের মতো অভিনেতারাই যথেষ্ট। তাঁরা বাবা-মেয়ের মান-অভিমানকে জীবন্ত করে তুলেছেন প্রতি দৃশ্যে। একাকিত্বের অব্যক্ত যন্ত্রণা মূর্ত করে তুলেছেন শান্তিলাল, তাঁর অভিনয়ে। তুহিনার চরিত্রটিও একা, তার মতো করে। অভিব্যক্তিতে সেই না-পাওয়াগুলি যথাযথ ফুটিয়ে তুলেছেন তুহিনা। আবেগের দৃশ্যে তিনি ভাল, তবে প্রেমিকের সঙ্গে ঝগড়া বা ভেঙে পড়ার মুহূর্তে যেন সেই রসায়ন তৈরি হয়নি দু’জনের মধ্যে। দেবতনুর সঙ্গত জরুরি ছিল এ ক্ষেত্রে। একই ভাবে, অপুর দিদির চরিত্রে অমৃতার অভিনয়ের দুর্বলতা ধরা পড়েছে। তুলনায় চিকিৎসকের ছোট্ট চরিত্রে রানা বসু ঠাকুর ভাল কাজ করেছেন।

চিত্রনাট্যে গান এসেছে গল্পের হাত ধরে, মন খারাপের রাতে বৃষ্টি নেমেছে কখনও। এই মুহূর্তগুলি যত্নের সঙ্গে তৈরি করা হয়েছে। দর্শকের মন ছুঁয়ে যাওয়ার একটা চেষ্টা রয়েছে সারা ছবি জুড়ে। সময় থাকতেই যে অভিমানের পাহাড় পেরিয়ে যেতে হয়, তার একটা রাস্তা দেখিয়েছে এই ছবি। একাকিত্বের নতুন মানে খুঁজে পায় অপরাজিতা। সেই সঙ্গে দর্শকও। বিষাদের মধ্যেও তাই ভাল লাগার রেশ থেকে যায়।

অন্য বিষয়গুলি:

cinema Aparajita Tuhina Das Shantilal Mukherjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy