Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Bengali Movies

উত্তর মেলে না

সায়নী ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০২১ ০৭:০২
Share: Save:

ছবি হল একটা জার্নির মতো। গল্পের হাত ধরে শেষ পর্যন্ত একটা জায়গায় পৌঁছে যান দর্শক। আর সেই জার্নির একটা রেশ রয়ে যায় সঙ্গে। সৌমেন সুরের ‘এই আমি রেণু’ ছবিটি তেমন কোথাও পৌঁছে দেয় না। গল্পের চলনের সঙ্গে সঙ্গে যে সব প্রশ্ন আসতে থাকে, কোনওটিরই উত্তর মেলে না শেষ পর্যন্ত। সমরেশ মজুমদারের লেখা কাহিনি অবলম্বনে তৈরি ছবিটি এই প্রজন্মের সঙ্গে কতটা সংযোগ স্থাপন করতে পারবে, প্রশ্ন রয়ে যায় তা নিয়েও। যুক্তিহীন আবেগকে প্রাধান্য দিয়ে চলে গল্পের মূল কুশীলব। ছবিতে রেণুকে (সোহিনী সরকার) বারবার প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়, কেন সে এমন করল। ছবির শেষে দর্শককেও একটি বড় প্রশ্নচিহ্নের মুখোমুখি হতে হয়।

রেণু আর সুমিতের (গৌরব চক্রবর্তী) প্রেমকাহিনির প্রেক্ষাপট আশির দশক। ল্যান্ডলাইন, হলুদ ট্যাক্সি, লাল ঝান্ডায় মোড়া ক্যাম্পাস, কেবিনে বসা প্রেমের রাজধানী কলকাতাকে পুনর্নির্মাণ করা সহজ ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাপ হওয়া দুই তরুণ-তরুণীর নিষ্পাপ প্রেম এগোয়, বন্ধুদের সহযোগিতায়। দু’জনের কারও অতীত বা পরিবারের ব্যাপারে বিশদে জানানো হয়নি দর্শককে। গল্প এগোতে দেখা যায়, গানে গানে দিন পার করে ফেলা সত্ত্বেও তারা নিজেরাও একে-অন্যের ব্যাপারে বিশেষ কিছুই জানে না! রেণু প্রথম দিন থেকেই সুমিতকে বলে, সে খুব খারাপ মেয়ে। কেন, তা বলে না। বাড়ি থেকে রেণুর বিয়ে ঠিক হয় বরেনের (সোহম) সঙ্গে। সুমিত বন্ধুর কাকার চা-বাগানে চাকরি জুটিয়ে ফেলে, রেণুর সঙ্গে রেজিস্ট্রি করবে বলে। কিন্তু রেণু আসে না। বরেনকে বিয়ে করেও সুখী হয় না সে। কী চায় রেণু?

রেণু আসলে কী চায়, তার খোঁজ নিয়েই আসল কাহিনি। তার সদুত্তর যদিও ছবিতে নেই। সেই খোঁজে শামিল ব্রজবিলাস চন্দ্র (কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়) নামে এক গুপ্তচর, যে নিজের নামটা ছোট করে বিবিসি বলতে পছন্দ করে। বরেনের হয়ে কাজ করা এই বিবিসি আশ্চর্য ক্ষমতায় নিমেষে রেণুর অতীত জেনে ফেলে। সুমিত ক’বার অফিসে চা খায়, সে তথ্যও হাজির করে পলকে! ছবিতে কমিক রিলিফ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে কৌশিককে। অসাধারণ কমিক টাইমিং এবং বাঙাল ভাষার সাবলীলতা সত্ত্বেও, এমন চরিত্রে তাঁর কাস্টিংয়ের পুনরাবৃত্তি চোখে লাগে।

এই আমি রেণু
পরিচালক: সৌমেন সুর
অভিনয়: সোহিনী, গৌরব, কৌশিক, সোহম, অনিন্দ্য
৪.৫/১০

আশির দশকের প্রেমিকরা ঠিক কেমন ভাষায় কথা বলতেন, তা মাথায় রেখেই হয়তো ছবির সংলাপ লিখেছেন পদ্মনাভ দাশগুপ্ত। তবে তা এ যুগের দর্শককে ছুঁতে পারে কি? ডিটেলেও বিস্তর গলদ। জামশেদপুরে গিয়ে রেণুর সম্বন্ধ ঠিক হয়, বিয়ের পরে সে সুমিতের সঙ্গে দেখা করতে আসায় বোঝা যায়, আসলে কলকাতাতেই সেটল করেছে রেণু-বরেন। আশির দশকের গল্পে এ শহরের প্রেমের বর্তমান হটস্পটগুলি না দেখালেও চলত। রাস্তায় স্কুটার চালানোর দৃশ্যটির স্পেশ্যাল এফেক্টস পীড়াদায়ক। এমন খুঁটিনাটি অজস্র উদাহরণ খুঁজলে পাওয়া যাবে। তবে তাতে গল্প ততটা ধাক্কা খায় না, যতটা তার অন্তঃসারশূন্যতা।

সোহিনী তাঁর স্বভাবসিদ্ধ আদুরে ভঙ্গিতে রেণুকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলেছেন। ভালমানুষ সুমিতের চরিত্রে গৌরবও জুতসই। বরেনের অসহায়তা, রেণুর উপরে আক্রোশের দৃশ্যগুলোয় সোহম চমৎকার। বন্ধু অশোক ও ঝুমার চরিত্রে অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় ও অলিভিয়া সরকারের কাজ সুন্দর। ছবিতে গানের অতিরিক্ত প্রয়োগ ক্লান্তিকর, কৈলাস খেরের বাংলা উচ্চারণও কানে লাগে। গোপী ভগতের ক্যামেরার রিলিফ, মলয় লাহার সম্পাদনার বাঁধুনি না থাকলে এ ছবি আরও ক্লান্তিকর হতে পারত। সমরেশ মজুমদারের সাহিত্যের প্রতি সুবিচার করে না এ ছবি, দর্শকের প্রতি তো নয়ই।

অন্য বিষয়গুলি:

Bengali Movies Movie Review
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy