কেমন হল ‘সাবাশ মিথু’?
ফালি করে কাটা বাঁশের উইকেট। কাঠের মিস্ত্রিকে বুঝিয়েসুঝিয়ে বানিয়ে নেওয়া গদার মতো ব্যাট। আর মন্টুর দোকানের পিংপং বল! বড় রাস্তার আড়ালে লুকিয়ে থাকা গলিঘুঁজিতে আমাদের পাড়া ক্রিকেট! সৌরভের মতো স্টেপ আউট করে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে গণেশের বাড়ির জানালার কাচ চৌচির! গদা ফেলে দে ছুট! সে দিনের মতো সেখানেই ইতি! ‘সাবাশ মিথু’র শুরুটা এমনই ছোটবেলার গল্প!
ব্যাট হাতে নেওয়ার পরে সে শুধু ব্যাট নয়! হাতের বর্ধিত অংশ। লিখেছিলেন মতি নন্দী। নাচের ক্লাসের মতো শরীর, মন, মস্তিষ্ক মিলে ব্যাটে-বলে ছন্দ আসে। না থাকল উইকেট, বাউন্ডারি, ফিল্ডার। সবার অলক্ষ্যে ছিনিয়ে নেওয়া এক চিলতে সবুজ তো আছে! জীবনের বাইশ গজ তখন শীতের ময়দানের শিশির! ভেজা ঘাসে পা। মুহূর্তে শরীর ফুরফুরে! যে ঘাসের উপর দাঁড়িয়ে স্বপ্নের ছক্কা হাঁকায় মিতালি ও নুরি! ক্রিকেট তাদের কাছে সচিন-কাম্বলির বন্ধুত্বের উদ্যাপন! ‘সাবাশ মিথু’র শুরুটা এমনই মতি নন্দীয়!
বাস্তবে এমন কোনও নুরি ছিল কি না, জানা নেই! গল্পে মিতালির শুরুর দিনের অনুপ্রেরণা তার বাবা। তবে গল্পের স্বাভাবিক স্রোতে নুরির আগমন ক্লিন সুইপের মতো নয়নাভিরাম! শুরুটা যেন দশ ওভারের ঝোড়ো পাওয়ার প্লে! তাতে নাচের ক্লাস থেকে সোজা ক্রিকেট ব্যাট তুলে নেওয়ার মতো লম্বা স্কোয়ার কাট আছে! নিমেষে চুল ছেঁটে ঠাকুমাকে স্লেজিং করা আছে! কিংবা ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখা দাদাকে ফুৎকারে উড়িয়ে কোচের ছোট্ট মিথুকে বেছে নেওয়ার মতো হেলিকপ্টার শট আছে! তখন ঝিকিয়ে ওঠে গ্যালারি! এবং কলরব— ইন্ডিয়া... ইন্ডিয়া...
নুরি, মিথুর ওপেনিং পার্টনারশিপে দ্রাবিড়ীয় রূপটান দেন কোচ সম্পত স্যার! মিথুর ফুটওয়ার্ক ঠিক করতে জুতোয় পেরেক গেঁথে দেন ! আরও একখানা ঝকঝকে পার্টনারশিপের আশায় বুক বাঁধি! যদিও মোহভঙ্গে দেরি হয় না ! মিডল অর্ডার যথেষ্ট নড়বড়ে! টেল এন্ডারের অবস্থাও তথৈবচ!
দ্বিতীয়ার্ধ ভীষণ খাপছাড়া! কোথায় ‘উইমেন ইন ব্লু’র জীবনের চড়াই-উতরাই! ভারতীয় মহিলা ক্রিকেটকে নেতৃত্ব, পরের পর রেকর্ড, অধিনায়কত্ব থেকে ছিটকে যাওয়া, পুনরায় নেতৃত্বদানের গ্রাফ ছবিতে অস্পষ্ট ! আধুনিক জীবনীচিত্রের সম্বল গবেষণা-পড়াশোনা! তাতে পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় এমন এলবিডব্লিউ হবেন, কে জানত। মিতালির পাশাপাশি বাকি খেলোয়াড়রা পর্দায় সংক্ষিপ্ত! চরিত্র তৈরিতে অযত্ন ! ‘৮৩’-এর পাশে ‘সাবাশ মিথু’র ২০১৭ বিশ্বকাপের বিনোদন খোঁচা মেরে স্লিপে ক্যাচ দেওয়ার মতো বাজে আউট! ব্যাট করতে নামার আগে মিতালির ড্রেসিংরুমে বই হাতে মনঃসংযোগ কিংবা ম্যাচ জিতে ভারতীয় মহিলা দলের হিন্দি আইটেম ডান্সে মেতে ওঠার মুহূর্তগুলো পরিচালক যে একদম এড়িয়ে গেলেন!
মিতালির চরিত্রে তাপসীর চোখেমুখে সর্বদা কারুণ্য! সুযোগ পেলেই ফ্যাঁচফ্যাচে কান্না! বাউন্সি পিচে টেনেটুনে হাফ সেঞ্চুরি করলেন ‘পিঙ্ক’-এর অভিনেত্রী! সেঞ্চুরি হাঁকালেন একমাত্র বিজয় রাজ! দুর্বল চিত্রনাট্য। অহেতুক সঙ্গীত বাহুল্য! গোটা ছবিতে কোথাও ‘সৃজিতীয়’ চমক নেই! আগামীতে টিম এমন নড়বড়ে অ্যাওয়ে ম্যাচে ভাল ফল ধোঁয়াশায়! কিন্তু অধিনায়কের নাম যখন সৃজিত মুখোপাধ্যায়, দুরন্ত কামব্যাকের আশায় থাকতে ক্ষতি কী! নড়বড়ে মিডল অর্ডার আর টেল এন্ডারের খারাপ পারফরম্যান্সেই ডুবল ‘সাবাশ মিথু’!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy