Advertisement
E-Paper

Review: রূঢ় বাস্তবের সাহসী আয়না

স্ত্রী জ্যোতিকার সঙ্গে ছবির সহ প্রযোজকও সূর্য। নিজে তারকা হয়ে এই দ্বৈত ভূমিকাতেই সূর্য পিছনে ফেলে দিয়েছেন দেশের অনেক তাবড় তারকাকে।

অন্য রূপে সূর্য।

অন্য রূপে সূর্য।

সুজিষ্ণু মাহাতো

শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০২১ ০৭:৪১
Share
Save

জয় ভীম

পরিচালক: জ্ঞানভেল

অভিনয়: সূর্য, কে মণিকন্দন, লিজোমোল জোস, প্রকাশ রাজ

৭.৫/১০

সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত হয়েছে ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড বুরোর (এনসিআরবি) সাম্প্রতিকতম পরিসংখ্যান। তা বলছে ২০২০ সালে দেশ জুড়ে তফসিলি জাতিভুক্ত নাগরিকদের উপরে অপরাধ আগের বছরের তুলনায় ৯.৪ শতাংশ বেড়েছে। তফসিলি জনজাতিভুক্ত নাগরিকদের আক্রান্ত হওয়ার হার বেড়েছে ৯.৩ শতাংশ।

এনসিআরবি-র রিপোর্ট প্রকাশের মাস দু’য়েক পরে মুক্তি পেয়েছে ‘জয় ভীম’। আদতে ১৯৯৫ সালে তামিলনাড়ুতে ঘটে যাওয়া একটি সত্যি ঘটনা অবলম্বনে তৈরি এই ছবি। তবে তা দেখতে দেখতে কখনওই মনে হয় না যে ঘটনাটা প্রায় তিন দশক আগের। সেই কৃতিত্ব পরিচালক জ্ঞানভেলের। ২০২১-এও দেশে দলিতদের অবস্থা কতটা বদলেছে? প্রশ্ন তুলে দেয় ‘জয় ভীম’। প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে এনসিআরবি-র তথ্য।

তামিলনাড়ুর বৃদ্ধাচলমে চুরির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল ইরুলা জনজাতিভুক্ত রাজাকান্নু নামে এক ব্যক্তিকে। পুলিশ হেফাজতে টানা অত্যাচারের পর নিখোঁজ হয়ে যান রাজাকান্নু। তাঁর স্ত্রী, ইরুলা জনজাতির অসহায় প্রতিনিধি সেনগানির হয়ে আইনি লড়াই করেছিলেন আইনজীবী চন্দ্রু। সেই লড়াই অবলম্বনে তৈরি ছবিতে চন্দ্রুর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন সূর্য নিজেই। নিপীড়িত জনগণের হাতিয়ার যে আইন হতে পারে, তা বিশ্বাসযোগ্য করে তোলে ছবিতে আদালত কক্ষের দৃশ্যগুলো। ছবি সফল করার কোনও বাজারচলতি ‘মশলা’ ছাড়াই কেবল চিত্রনাট্যের গুণে দীর্ঘ হলেও দেখতে ক্লান্তি আসে না।

স্ত্রী জ্যোতিকার সঙ্গে ছবির সহ প্রযোজকও সূর্য। নিজে তারকা হয়ে এই দ্বৈত ভূমিকাতেই সূর্য পিছনে ফেলে দিয়েছেন দেশের অনেক তাবড় তারকাকে। জাতপাত, পুলিশি অত্যাচারের মতো বিষয় নিয়ে তারকাদের ছবি প্রযোজনা করার দৃষ্টান্ত মেলে ক’টা? দক্ষিণে অবশ্য কয়েক বছর ধরেই জাতপাতের প্রসঙ্গ এসেছে ‘কাবালি’, ‘কালা’, ‘অসুরন’, ‘কারনান’-এর মতো ছবিতে। বলিউড তো বটেই, বাংলা-সহ দেশের অন্য নানা ভাষায় হালে বুদ্ধিদীপ্ত, প্রগতিশীল, অন্য ধারার ছবি তৈরি হচ্ছে। কিন্তু সেই ধারা থেকেও অনেকটা অদৃশ্য জাতপাতের প্রসঙ্গ। লিঙ্গসাম্য, নারীর ক্ষমতায়নের মতো বিষয়ে যত ছবি পরিচিতি পেয়েছে, জাতপাত, জাতিবিদ্বেষের মতো বিষয় মূল স্রোতের ছবিতে তেমন আসেনি। অথচ জাতপাত যে সমাজের মূলস্রোতের বাস্তব, তার প্রমাণ আমরা রোজ পাই সংবাদ শিরোনামে, বিয়ের বিজ্ঞাপনে।

জ্ঞানভেলের কৃতিত্ব এখানেই। তিনি বাস্তব তুলে ধরেছেন, তবে সেই তুলে ধরার মধ্যে কোনও দেখনদারি নেই। সেই ঘোষণা সেনগানির প্রতি আইনজীবী চন্দ্রুর করা একটি উক্তিতেই নিহিত। ‘‘ঠিক যা যা হয়েছে তাই বলো। কমিয়েও বলবে না, বাড়িয়েও নয়।’’ পরিচালক যাঁদের আদর্শের কথা বলতে চেয়েছেন ছবিতে, তা উচ্চকিত সংলাপে বলতে হয়নি। লক-আপে অকথ্য অত্যাচারে মৃতপ্রায় হয়েও রাজাকান্নু যখন সত্যি বলা থেকে সরে আসে না তখন দর্শকের ঠিকই মনে পড়ে গাঁধীর কথা, ‘‘অহিংসা হল শক্তিশালীর অস্ত্র।’’

মার্কসের ছবি, বামপন্থী লাল পতাকার উপস্থিতি যেমন ছবির নানা দৃশ্যে রয়েছে, তেমনই রয়েছে অত্যাচারের বিরুদ্ধে এক হয়ে আন্দোলনের সংকল্পে। ছবির সংলাপে ‘ভীম’ অর্থাৎ ভীমরাও অম্বেডকরের নামের উল্লেখ আছে, চন্দ্রুর কথায় সামান্য। কিন্তু নামের উল্লেখের আধিপত্য না থাকলেও, অম্বেডকরের আদর্শ বহন করে নিয়ে গিয়েছে চন্দ্রুর চরিত্র গোটা ছবি জুড়ে। তাই ছবির নামকরণেই যে তাঁর জয়ধ্বনি, তা সার্থক। চন্দ্রুর চরিত্রে সূর্য ছাড়া নজর কাড়েন রাজাকান্নুর চরিত্রে কে মণিকন্দন, সেনগানির চরিত্রে লিজোমোল জোস এবং আইজি পেরুমলস্বামীর চরিত্রে প্রকাশ রাজ।

‘জয় ভীম’ বৈপরীত্য দেখায়। দেশের একাংশের কাছে কী ভাবে ক্ষমতা কুক্ষিগত। আবার কেবল জন্মগত কারণে কোটি কোটি মানুষ দেশে ক্ষমতাহীন না-নাগরিক। সেই বৈপরীত্য হতাশার। আশার বৈপরীত্যও আছে। দক্ষিণী অনেক ছবিতেই যেখানে আগে পুলিশের অতিক্ষমতার বন্দনা, এনকাউন্টারের উদ্‌যাপন দেখা যেত, সেখানে বিপরীতে থেকে ‘জয় ভীম’ আশা জোগায়। ছোট থানার নিচুতলার পুলিশকর্মীরা রাজনৈতিক ক্ষমতার নাগপাশে বন্দি থেকে কতটা অসহায় থানার দৃশ্যগুলিতে স্পষ্ট তাও।

এনসিআরবি-র তথ্য যেমন সত্যি, তেমনই এটাও সত্যি যে জয় ভীম বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তার তালিকা ‘আইএমডিবি’-তে শীর্ষে চলে যায় ‘দ্য শশাঙ্ক রিডেম্পশন’ ও ‘গডফাদার’কে ছাড়িয়ে। হতাশার বিপরীতে এই আশাটুকুই ভবিষ্যতের ভরসা।

Jai Bhim Movie Review

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।