Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Madhumita Sarcar

চেনা স্বাদের ছবিতে চিনি একটু কম

মা-মেয়ের গল্প বলেছেন মৈনাক। মিষ্টি (অপরাজিতা আঢ্য) আর তার মেয়ে চিনির (মধুমিতা সরকার) সম্পর্কটা আর পাঁচটা বাঙালি মা-মেয়ের চেয়ে একটু আলাদা।

সায়নী ঘটক
শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২০ ০০:২২
Share: Save:

চিনি
পরিচালনা: মৈনাক ভৌমিক
অভিনয়: অপরাজিতা, মধুমিতা, সৌরভ
৫.৫/১০

মাল্টিপ্লেক্সের পর্দা জুড়ে ‘ওয়েলকাম ব্যাক’। লকডাউন-পরবর্তী সময় যেন বেশি করে বুঝিয়ে দিল, বড় পর্দায় ছবি দেখার মজাটা আসলে ঠিক কী রকম। সেই আনন্দ আরও দ্বিগুণ হয়, যদি ছবিও মন ভরিয়ে দেওয়ার মতো হয়। অন্য হিন্দি ও ইংরেজি ছবির পাশাপাশি ক্রিসমাসে পরিচালক মৈনাক ভৌমিকের ‘চিনি’ও হাজির প্রেক্ষাগৃহে, বড়দিনের কেকের মতোই। একটু কম মিষ্টির এই যা!

মা-মেয়ের গল্প বলেছেন মৈনাক। মিষ্টি (অপরাজিতা আঢ্য) আর তার মেয়ে চিনির (মধুমিতা সরকার) সম্পর্কটা আর পাঁচটা বাঙালি মা-মেয়ের চেয়ে একটু আলাদা। আর সেই সম্পর্কের শিকড় যাকে ঘিরে, সেই মানুষটি গত হলেও তার অদৃশ্য উপস্থিতি এখনও ছায়ার মতো লেপটে সারা বাড়িতে। সে বাড়িতে থাকতে পারে না চিনি, যে বাড়ি তার বাবার অত্যাচারে নরকে পর্যবসিত। সুদীপের (সৌরভ দাস) সঙ্গে লিভ-ইন করে চিনি। অফিসে বিজ্ঞাপনের ট্যাগলাইন লেখে, বসের বাঁকা কথা শোনে, থেরাপিস্টের কাছে কাউন্সেলিং করাতে যায়। আসলে চিনির জীবনে শান্তি নেই দু’দণ্ড। তার মা-ও ভাল থাকার পথ খুঁজে নিতে চাইছে নিজের মতো করে।

মিলেনিয়ালদের চেনা দুঃখ, চেনা সুখই তুলে ধরা হয়েছে ছবিতে। দুই প্রজন্মের পরিচিত বিরোধগুলিকেও হাত ধরাধরি করে হাঁটিয়েছেন পরিচালক। রান্নাঘরে আমিষ খেলে যে মা চোটপাট করত মেয়ের উপরে, আলাদা থাকবে বলে যখন ২৪-২৫ বছরের সেই মেয়েই বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যায়, মা নাড়ুর কৌটো ধরিয়ে দেয় তার হাতে। মেয়ের লিভ-ইন পার্টনারের সঙ্গে দারুণ ভাল সম্পর্ক, এ দিকে পরমুহূর্তেই প্রচণ্ড রেগে গিয়ে সেই ছেলেকেই ‘রাস্তার ছেলে’ বলে বসে চিনির মা। এই স্ববিরোধিতা ছবিতে এসেছে মাঝে মাঝেই। মায়ের সঙ্গে, প্রেমিকের সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাপারে চিনির দ্বিধা-দ্বন্দ্বের কারণ হিসেবে দর্শানো হয় তার অস্থির ছেলেবেলা। তার রেফারেন্স চিনি বা তার মায়ের কথাতেই উঠে আসে, যা চিনির প্রেমিকের মতোই দর্শকের কাছেও পৌঁছয় বেশ দেরিতে। অত্যাচারী বাবার গায়ে সন্তানের হাত তোলা, শেষে মারণব্যাধি ধরা পড়ার মতো খুবই প্রত্যাশিত কিছু বাঁক রয়েছে গল্পে, যা তেমন ধাক্কা দেয় না। প্রধান চরিত্রদের দুঃখ, রাগ বা যন্ত্রণাই ছবির অনেকটা জুড়ে। তবে তার সঙ্গে কতটা একাত্ম হতে পারবেন দর্শক, সে প্রশ্ন রয়ে যায়।

অপরাজিতা আঢ্যকে তাঁর চেনা রূপে পাওয়া গিয়েছে ছবিতে, যা ক্ষেত্রবিশেষে উচ্চকিত। মধুমিতা সরকার আবেগের দৃশ্যগুলিতে ভাল, অন্য জায়গায় সামান্য ওভারস্মার্টনেস ছাপিয়ে গিয়েছে তাঁর সহজাত অভিনয়ক্ষমতাকে। তুলনায় সুযোগ কম পেলেও সাবলীল অভিনয়ে নজর কাড়েন সৌরভ দাস। ভাল লাগে ছবির গান, বিশেষ করে লগ্নজিতা চক্রবর্তীর কণ্ঠে ‘তোমার চোখের শীতলপাটি’। ক্যামেরা চার দেওয়ালের বাইরে তেমন বেরোয়নি, যা একটু ক্লান্তিকর। তবে ক্রিসমাসের আবহে বৃষ্টিভেজার দৃশ্য দেখতেও বেশ লাগে। মৈনাকের ছবির চেনা আস্বাদ এ ছবিতেও বহাল। শুধু চিনিটা মাপমতো হলেই জমে যেত!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE