Advertisement
E-Paper

ভাবনার শিহরণে আটকে ড্রাকুলা

দেবালয় যে নতুনত্বকে বাজি ধরেছেন, তার ষোলো আনা উসুল করার গুরুদায়িত্ব পালন করেছেন অনির্বাণ।

ড্রাকুলা স্যার ছবির একটি দৃশ্য।

ড্রাকুলা স্যার ছবির একটি দৃশ্য।

মধুমন্তী পৈত চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০২০ ০০:১০
Share
Save

কিছু কিছু চরিত্র এতটাই লোভনীয় যে, তার নাম দিয়ে দর্শককে নতুনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া যায়। বাংলা ছবিতে ‘ড্রাকুলা’ তেমন একটি উপাদান! বিদেশি ছবি ও সাহিত্যের প্রভাবমুক্ত হয়ে বাঙালির আবেগে জারিত করে ড্রাকুলা চরিত্রে (বা মিথ) নতুন পরত যোগ করতে চেয়েছেন দেবালয় ভট্টাচার্য। তাঁর পুজো রিলিজ় ‘ড্রাকুলা স্যার’ নিঃসন্দেহে এক্সপেরিমেন্টাল কাজ। তবে ছবির ক্ষেত্রে ভাবনার শিহরন একটি দিক। আর একটি দিক সাধারণের বোধগম্য হয়ে ওঠা। দ্বিতীয় ক্ষেত্রটি হয়তো এই ছবি বানানোর উদ্দেশ্য নয়। পুরো ছবি জুড়ে যে ‘সত্যি-মিথ্যে’র খেলা চলে, শেষ দৃশ্যেও তা বহাল। তবে কয়েকটি প্রশ্ন এই অভিনব ভাবনার রূপায়ণে ধাক্কা দিতে পারে।

হুগলির এক স্কুলের বাংলার অস্থায়ী শিক্ষক রক্তিম চৌধুরী (অনির্বাণ ভট্টাচার্য)। তাঁর শ্বদন্তের জন্য ছাত্ররা ব্ল্যাকবোর্ডে লিখে রাখে ‘ড্রাকুলা স্যার’। সদা সন্ত্রস্ত রক্তিম মুখে রুমাল চাপা দিয়ে কথা বলে। কম ভাড়ায় থাকার জন্য, বাড়িওয়ালার শর্ত মেনে সে ভয় দেখায় ওই বাড়ির এক খুদেকে। স্কুলের এক ট্রাস্টির ছেলের ছবিতে রক্তিম ডাক পায় ড্রাকুলার চরিত্র করার। শুটিংয়ে সে কামড়ে দেয় ছবির নায়িকাকে। তবে কি রক্তিম সত্যিই ড্রাকুলা?

ছবিটি আটটি পর্বে ভাগ করা। রক্তিমের গল্পের সঙ্গে জাম্প কাটে চলে অমল (অনির্বাণ) ও মঞ্জরীর (মিমি চক্রবর্তী) ট্র্যাক। সত্তরের দশকের নকশাল আন্দোলনের সশস্ত্র বিপ্লবী অমল গা-ঢাকা দিয়ে রয়েছে প্রাক্তন প্রেমিকা মঞ্জরীর বাড়িতে। অমল কি চেনে রক্তিমকে?

টাইম-ট্রাভেল, বাস্তব ও পরাবাস্তবের মিলন... দেবালয়ের ছবিতে (রোগা হওয়ার সহজ উপায়) আগেও রূপ পেয়েছে। তবে এই ছবিতে তা অনেক বেশি পরিণত। স্টাইলাইজ়েশনে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন পরিচালক। চেষ্টা করেছেন, এমন কতকগুলি দৃশ্য তৈরি করতে যা, শুধু সিনেম্যাটিক সৌন্দর্যের জন্যই মনে দাগ কাটবে। যেমন, বরফে স্নাত অমল-মঞ্জরী, চৌবাচ্চায় রক্তিমের রক্তপানের দৃশ্য। ক্যামেরায় ইন্দ্রনাথ মারিকের কাজ প্রশংসনীয়। দেবালয় ও কল্লোল লাহিড়ির লেখা চিত্রনাট্যে কয়েকটি অনুষঙ্গ সুন্দর ভাবে বোনা হয়েছে। যেমন, সত্তরের কলকাতায় শেষ বারের মতো বরফ পড়েছিল। তবে সমসময়ে এ রাজ্যে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার সঙ্গে যে অনুষঙ্গ স্থাপন করা হয়েছে, তা আরোপিত। কিছু সংলাপের ব্যবহার বড্ড বেশি।

দেবালয় যে নতুনত্বকে বাজি ধরেছেন, তার ষোলো আনা উসুল করার গুরুদায়িত্ব পালন করেছেন অনির্বাণ। রক্তিম, অমল ও ড্রাকুলার লুকে তাঁকে এত ভাল মানিয়েছে যে, অভিনেতা অনির্বাণ বাড়তি মাইলেজ পেয়েছেন। চৌবাচ্চার দৃশ্যে বা প্রথম বার নিজেকে ড্রাকুলার বেশে দেখার পরে তাঁর অভিব্যক্তি দর্শকের মনে থাকবে। মিমি তাঁর চরিত্রে চেষ্টা করেছেন। তবে অনির্বাণ-মিমির রসায়ন পোক্ত করার প্রয়োজন ছিল। অন্যান্য চরিত্রে বিদীপ্তা চক্রবর্তী, সুপ্রিয় দত্ত, কাঞ্চন মল্লিক, রুদ্রনীল ঘোষও ভাল।

ছবিতে মিউজ়িক প্রাধান্য পেয়েছে। গানগুলি ভাল। তবে শিরোনামে যে ‘স্যার’ রয়েছে, সেই ড্রাকুলা স্যারকে সে ভাবে ছবিতে পাওয়া যায়নি। বেশি প্রকট, তার অন্য সত্তাগুলি। দ্বিতীয়ার্ধে রক্তিমের মানসিক চিকিৎসার পর্বটি বালখিল্যের মতো। পরিচালক ঠিক করে নিয়েছিলেন যে, দর্শকের হাতে এই জটিল মনস্তত্ত্বের চাবি সঁপে দেবেন না। তাই শেষ দৃশ্যে চমক। তবে রক্তিম কেন নিজেকে ড্রাকুলা ভাবে, কেনই বা তার নকশাল আন্দোলনের প্রতি ঝোঁক, নির্ভরতা... দিশা দেখাননি পরিচালক। এই ব্যাকস্টোরির হয়তো প্রয়োজন ছিল।

পরিশেষে বলার, ছবির বেশ কয়েকটি দৃশ্য এবং ড্রাকুলার বেশের সঙ্গে টড ফিলিপ্সের ‘জোকার’-এর মিল পাওয়া যায়। শেষ সংলাপ ধার করে বললে, এটি নেহাত কাকতালীয় না অনুপ্রেরণার ফসল, সে বিচার দর্শকের হাতে।

ড্রাকুলা স্যার


পরিচালনা: দেবালয় ভট্টাচার্য

অভিনয়: অনির্বাণ, মিমি, সুপ্রিয়, রুদ্রনীল, বিদীপ্তা
৬/১০

Dracula Sir Movie Review Anirban Bhattacharya

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}