Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
Raj Chakraborty

ইউভান, বড় হয়ে তুমি জানতে পারবে, তোমার মা-বাবা এই সময় কতখানি অস্বস্তিতে দিন কাটিয়েছে

ইউভান, তুমি আর তোমার বোন বড় হয়ে যখন জানতে চাইবে, আরজি কর-কাণ্ডে আমাদের কী ভূমিকা ছিল? সেই প্রশ্নের উত্তর এই চিঠিতে দিয়ে রাখলাম।

Image of Raj Chakraborty

ছেলে ইউভানের সঙ্গে খুনসুটি রাজ চক্রবর্তীর। ছবি: সংগৃহীত।

রাজ চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:১৯
Share: Save:

ইউভান, আজ তোমার জন্মদিন। দেখতে দেখতে চার বছর। তোমার সঙ্গে আমারও বাবা হয়ে ওঠার চার বছর। তবে ইউভান, তোমার এ বারের জন্মদিনে শহর, সমাজ, সময় উত্তাল। তুমি আর তোমার বোন বড় হয়ে জানতে পারবে ২০২৪-এ এক তরুণী চিকিৎসকের মৃত্যুর বিচার চেয়ে গোটা শহরের মানুষ শামিল হয়েছিল এক বৃহত্তর আন্দোলনে। একসময়ে কলকাতা মিছিল নগরী হিসাবে পরিচিত ছিল বিশ্বের কাছে। সেই কলকাতা আবার জেগে উঠেছে নতুন করে। কলকাতায় এমন আন্দোলন আগে দেখিনি। মুম্বইয়ে জঙ্গি হামলা দেখেছি। গুজরাতের দাঙ্গা দেখেছি। বাবরি মসজিদের পতন দেখেছি অযোধ্যায়। সংসদে দুঃসাহসিক আক্রমণ দেখেছি জঙ্গিদের। দেখেছি গোটা বিশ্ব জুড়ে করোনা ভাইরাসের দাপট। কিন্তু কলকাতা এমন হয়ে যাবে ভাবিনি।

বড় হয়ে বুঝবে তোমার মা-বাবা কতটা অস্বস্তিতে এই দিনগুলি কাটিয়েছিল। আমি এক রকম করে সামলে নিলেও, তোমার মায়ের মধ্যে হতাশা আর বিষাদ ভিড় করছে। ওকে দেখে বুঝতে পারি, ও পারলে রোজ রাস্তায় নামে। ওর চোখেমুখে রাগ।

ইউভান, ভাবছ তোমার জন্মদিনের চিঠিতে বাবা সময়ের প্রসঙ্গ তুলছে কেন? মনে হতেই পারে। তুমি আর তোমার বোন বড় হয়ে যখন জানতে চাইবে, আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে আমাদের কী ভূমিকা ছিল, সেই প্রশ্নের উত্তর এই চিঠিতে দিয়ে রাখলাম। তোমার মাকে এখন সামলে রাখার চেষ্টা করছি আমি। বলছি, “শুভ, শান্ত হও।” তুমি বড় হলে জানবে তোমার মাকে। যে মায়ের ইশারায় তুমি সেই কোন ছোট্ট বয়স থেকে বুঝতে শিখেছ কোনটা ‘ঠিক’ আর কোনটা ‘ভুল’। তুমি জানো, তোমাকেও কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। বেশি ক্ষণ রাত জাগতে হলে মাকে জানাতে হয়৷ যদি মা অনুমতি দেয়, তবেই রাত জাগতে পারো। তোমাদের জন্য রয়েছে আমাদের অঢেল ভালবাসা। কিন্তু তার সঙ্গেই রয়েছে নিয়ম, অনুমতির মতো শব্দগুলো।

ছোট্ট ইউভানের সঙ্গে রাজ-শুভশ্রী।

ছোট্ট ইউভানের সঙ্গে রাজ-শুভশ্রী। ছবি: সংগৃহীত।

ইউভান, তুমি আর তোমার বোন আমাদের পৃথিবী। অশান্ত পৃথিবীতে শান্তির আশ্রয়। তোমাদের জন্য আমি আর শুভ ঠিক করে নিয়েছি, আমরা কেউ বাড়িতে চিৎকার করে কথা বলব না। আমি জানি বড় হয়ে তুমি বুঝতে পারবে কেন তোমাকে টেলিভিশন দেখার জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হয়, কেন তোমার সামনে কোনও মোবাইল ফোন রাখি না আমরা। শুনতে পাই আজকের পৃথিবীতে ছেলেমেয়ে মানুষ করা নাকি খুব কঠিন হয়ে উঠেছে। আমার মনে হয় বিষয়টা কঠিন নয়, বিষয়টা নজরদারির। আমার সন্তান কোথায় যাচ্ছে? কী দেখছে? কাদের সঙ্গে মিশছে? সর্ব ক্ষণ খেয়াল রাখা জরুরি।

ইউভান, আজ তোমাকে স্কুল থেকে নিয়ে আসার পরে বাড়িতে দেখছিলাম আমার মাকে জড়িয়ে ধরে একনাগাড়ে তোমার বোন ইয়ালিনি আদর করে যাচ্ছে। মনে হল আমি ভাগ্যবান। একসঙ্গে কন্যা আর পুত্রসন্তানের বাবা হয়েছি। উল্টো দিকে আমার আর তোমার মায়ের দায়িত্ব অনেক। তোমাদের দু’জনকেই সমাজে ছেলে ও মেয়ের সাম্য ও একে অপরকে সম্মান করতে শেখাতে হবে। আমার মনে হয়, তা হলে তোমাদের এই পৃথিবীর বুকে নিঃশ্বাস নিতে আর অসুবিধে হবে না।

তোমার জন্মদিনের জন্য তোমাকে লেখা এই চিঠিতে বার বার ফিরে আসছে সময়। এই অস্থির সময়। ১১ অগস্টের পরে আর কোনও কিছুই সমাজমাধ্যমে লিখিনি আমি। জানো, মানুষ আমাদের যেমন ভালবাসে, আবার ভুলও বোঝে। অনেক কিছু লেখে। সব কিছু দেখিয়ে, বলে আমরা বোঝাতে পারি না। সবাই আমাদের ভাল চায় না ইউভান। জানি। স্বাভাবিক। তবে সব বিষয়ে যে প্রতিক্রিয়া জানাতেই হবে এমনটাও নয়।

বাবা অনেক বড় বড় কথা লিখে ফেলল ইউভান। আজকের যুগে চিঠি তো চলে না। তবু এটা থাকবে, তোমার বড় হয়ে ওঠার জন্য।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy