Advertisement
E-Paper

নতুন বছরে অর্জুনকে কী উপহার দেব? ওটা না হয় সারপ্রাইজ থাক...

আমাদেরও দোকান আছে। নববর্ষের দিন নতুন খাতা লেখা হয়। লক্ষ্মী-গণেশ পুজো হয়।

পাওলি দাম।

পাওলি দাম।

পাওলি দাম

পাওলি দাম

শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২১ ১৯:১৮
Share
Save

নববর্ষ আমার কাছে ‘সব পেয়েছি’র প্যান্ডোরা বক্স! ঢাকনা খুললেই ছোট বেলা সামনে এসে দাঁড়ায় হুড়মুড়িয়ে। কী নেই সেখানে? উঁকি দিলেই চোখে ভাসে সাবেকি কলকাতা। নববর্ষের বনেদিয়ানা। আমার বাড়ি বৌবাজারে। চারিদিকে আসবাবের দোকান। যৌথ পরিবারে কাকা, জ্যাঠা, পিসিরা রয়েছেন। সঙ্গে তুতো ভাই-বোন। সবাই এক চাদের নীচে জড়ো হলে যেন ছোটখাটো যজ্ঞি বাড়ি!

আমাদেরও দোকান আছে। নববর্ষের দিন নতুন খাতা লেখা হয়। লক্ষ্মী-গণেশ পুজো হয়। আগের দিন সারা রাত জেগে থাকতাম আমরা। বাচ্চাদের উপর দায়িত্ব ছিল, বাক্স বানাতে হবে। খোলা বাক্স আসত। আমরা মিষ্টির দোকানের মতো করে সেটা ভাঁজ করতাম। তার পর তার মধ্যে সাজিয়ে দিতাম রকমারি মিষ্টি। ক্যালেন্ডারও হত দোকানের। সে সব রোল করে গুটিয়ে রাবার ব্যান্ড দিয়ে আটকে বাক্সের সঙ্গে গুছিয়ে রাখা। এ কি চাট্টিখানি কথা?

আমাদের ছোট বেলায় নববর্ষ মানেই মিষ্টির বাক্স, ক্যালেন্ডার আর কোল্ড ড্রিঙ্ক। কত রকমের কোল্ড ড্রিঙ্ক ছিল! কালো, সাদা, কমলা রঙা ঠান্ডা পানীয় পেলেই আমরা খুশি। আর কিচ্ছু লাগত না। আর মিষ্টির বাক্সে লাড্ডু, গজা, নিমকি থাকবেই। রাত থেকে বাক্স গুছনো হতো বলে শুকনো মিষ্টিই থাকত। ভেজা বা রসের মিষ্টি থাকত না। এগুলোর পাশাপাশি নতুন জামা পাওয়ার আনন্দ। আমাদের মধ্যে একটা রেওয়াজ চালু ছিল। সকাল সকাল যে, যার জামা পরে নিতাম। বিকেলে আমরা নিজেদের মধ্যে জামা বদলাবদলি করতাম। মানে কোনও এক জন বোনের জামা আমি পরলাম। আমারটা আবার আরেক জন পরল। এমন করার কারণ কী? এর ফলে দু’বেলাই নতুন জামা পরা হত সবার।

আর ছিল দোকানে, দোকোনে গিয়ে হালখাতা করা। আমাদের দোকানে যেমন আসতেন সবাই, আমরাও যেতাম যাঁরা নিমন্ত্রণ করতেন। সেখানে গিয়েও সেই মিষ্টির বাক্স আর ক্যালেন্ডার। এ দিকে আমি মোটেই মিষ্টিলোভী নই। তাই হাতে নিয়েই চালান করে দিতাম অন্যদের। বদলে বাড়তি কোল্ড ড্রিঙ্ক বরাদ্দ থাকত আমার জন্য। সেই সময়ের নববর্ষের গল্প কি এক দিনে ফুরোয়? রাত জেগে মিষ্টির বাক্স তৈরির পর দোকান সাজাতাম বড়দের সঙ্গে। সারা দোকান জুড়ে রজনীগন্ধা, বেল, জুঁই ফুলের শিকল। মধ্যে হয়তো একটা করে গোলাপ। ফুলের গন্ধে পরিবেশটাই যেন বদলে যেত। পুজোর জায়গায় ঘট বসাতাম। তাতে সিঁদুর মাখানো ডাব। ঘটের গায়ে বড় করে স্বস্তিকা চিহ্ন। মনে পড়লেই এখন মনকেমন করে!

কলেজ পর্যন্তও আমার নববর্ষ মোটামুটি এ রকমই ছিল। বদল ঘটল যখন আমরা দক্ষিণ কলকাতায় চলে এলাম। যদিও নিয়ম করে দোকানে যেতাম। এখনও যাই। কিন্তু ভাই-বোনদের পাই কই? সবাই যে, যার মতো ছিটকে গিয়েছে। ছোট বেলার এক জোট হওয়ার আনন্দটাই তাই মাটি। সব আছে। শুধু ছেলেবেলাই নেই। কেবল পরিবেশ নয়, আর্থিক অবস্থাও বদলেছে আত্মীয়দের। তাছাড়া, বড় হয়েছি। মনটা পরিণত হয়েছে। ছোট বেলার মতো করে ‘আরেকটা কোল্ড ড্রিঙ্ক দাও’, কিছুতেই আর মুখ দিয়ে বেরোয় না! এ দিকে ইচ্ছে প্রবল। কিন্তু গলার কাছে এসে কথাগুলো দলা পাকিয়ে যায়। আসলে, শিশুসুলভ সারল্যই যে হারিয়ে গিয়েছে।

‘তারকা’ পাওলির আরও করুণ দশা! পয়লা বৈশাখে হয় মহরৎ, নয় ছবির শুভমুক্তি। নয়তো আউটডোরে শ্যুটিং। এ সব ফেলে কী করে দোকানে আসব? ব্যস্ততা যেন আমার ছেলেবেলাটাকেই গিলে নিল। কাজের চাপে নিজের দোকানেও আর প্রতি বছর গিয়ে উঠতে পারি না। হালখাতার কথা বাদই দিলাম। এখন বাড়তি দায়িত্ব শ্বশুরবাড়ি। ওখানেও বড় করে পুজো হয় প্রতি বছর। এ বারেও হবে। ১৪২৮ আরও একটা ভাল খবর আনছে আমার জন্য। ২০২০-র ডিসেম্বরে মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল আমার হিন্দি ছবি ‘রাত বাকি হ্যায়’। ওটা ওটিটিতে মুক্তি পেল পয়লা বৈশাখ। এখন মনে হয়েছে, যা হয়েছে ভালর জন্যই হয়েছে। শুভ দিনে নতুন ছবি মুক্তি পাওয়ার আনন্দই আলাদা।

এ বারের নববর্ষ আরও একটা কারণে আমার কাছে স্পেশ্যাল। বহু বছর পরে আবার আমি কলকাতায়। তাই এ বছর ইচ্ছে আছে বাবার দোকানে সকাল থেকে থাকব। পুজো দেখব। তার পর বাড়িতে এসে মায়ের হাতের ভালমন্দ রান্না খাব। খাওয়াদাওয়ার ভার বরাবরই মায়ের দায়িত্বে। মেনু যদিও এখনও জানি না। তবে বাঙালি খানাই হবে, গ্যারান্টি। এ বছর অর্জুনও চলে আসছে কলকাতায়। পয়লা বৈশাখের আগেই আসছে। আর ওর আসা মানেই আমি আশা করে থাকি, একটা অসমিয়া শাড়ি নিশ্চয়ই আনবে আমার জন্য! আমি যদিও নতুন শাড়ি আলাদা করে গুছিয়েই রেখেছি। বলা তো যায় না! যদি না আনে! সাবেকি সাজ আমার বরাবরের পছন্দ। কান উৎসবের লাল কার্পেটেও আমি অনায়াস ছিলাম সাদা খোল, লাল পাড়ের জামদানিতে। পয়লা বৈশাখে তেমনই কিছু পরব। হয় চুল খোলা থাকবে। নয়তো হাত খোঁপায় জড়িয়ে নেব জুঁইয়ের মালা। কান জুড়ে দুলবে বড় ঝুমকো। গাঢ় কাজল, লাল টিপ, একটু লিপস্টিক— পয়লা বৈশাখ জমাতে যথেষ্ট।

জানতে খুব কৌতূহল হচ্ছে, অর্জুনকে কি উপহার দেব? ওটা না হয় সারপ্রাইজ থাক?

Actress Paoli Dam Bengali New Year Poila Baisakh Special

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।