অভিনেতা পঙ্কজ ত্রিপাঠী। ছবি: সংগৃহীত।
অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরীর নতুন ছবি ‘কড়ক সিংহ’-এ মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেছেন পঙ্কজ ত্রিপাঠী। ছবির প্রচারে কলকাতা এসেছিলেন ‘মির্জাপুর’ খ্যাত ‘কালীন ভাইয়া’। তবে শহরে ঢুকেই তাঁর গলায় গুরুতর সংক্রমণ হয়। ফলে কথা বলতেও কষ্ট হচ্ছে তাঁর। তবুও শ্বশুরবাড়ির শহরকে ফেরালেন না। নতুন ছবি, কলকাতা এবং বাঙালিদের নিয়ে কথা বললেন আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে।
প্রশ্ন: বাস্তবে আপনি কি সত্যিই খুব ‘কড়ক’?
পঙ্কজ: একদমই নয়। আমাদের গ্রামে এক দূর সম্পর্কের কাকা ছিলেন। সব সময় রেগে থাকতেন। সকলের উপর চোটপাট করতেন। কিন্তু সেই রাগের জন্য নিজেই বোধহয় সবচেয়ে বেশি বিব্রত থাকতেন। সেই সময় বুঝে গিয়েছিলাম, রাগ করা উচিত নয়। বেশি রাগ সবার আগে আপনার নিজেরই ক্ষতি করবে। যার উপর রাগ করছেন তাঁর উপর হয়তো কোনওই প্রভাব পড়ল না।
প্রশ্ন: আপনি ঠান্ডা প্রকৃতির বলেই কি ইন্ডাস্ট্রিতে সবাই আপনার বন্ধু?
পঙ্কজ: (খানিক ভেবে) বলতে পারেন সেই কারণে আমার ইন্ডাস্ট্রিতে কোনও শত্রু নেই।
প্রশ্ন: পঙ্কজ ত্রিপাঠীর চেয়ে ‘মির্জাপুর’-এর ‘কালীন ভাইয়া’ কিংবা ‘ক্রিমিন্যাল জাস্টিস’-এর মাধব মিশ্রের নাম বেশি লোকমুখে ঘোরে এখন...।
পঙ্কজ: আমার ভালই লাগে। পঙ্কজ ত্রিপাঠী তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। যে চরিত্ররা মানুষের মনে জায়গা করে নিতে পারে, তারাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সিনেমা এই চরিত্রগুলো তৈরি করে। আমরা সেই চরিত্রগুলোয় অভিনয় করি বলে কিছুটা সুবিধা পেয়ে যাই।
প্রশ্ন: এই চরিত্রগুলো ওটিটি-র সুবাদেই তৈরি হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে আপনার কাছে ওটিটি কি আগের মতোই সমান গুরুত্ব পায়?
পঙ্কজ: একদম। ধরুন, আমি এক জন নেতা। আমি নির্বাচনে দাঁড়িয়েছি। গোটা কলকাতায় আমার মাত্র তিনটে পোলিং বুথ রয়েছে। যাঁরা শ্যামবাজারে থাকেন, তাঁরা কি সল্টলেক গিয়ে ভোট দেবেন? ওটিটি-র কল্যাণে এই পোলিং বুথের সংখ্যা বাড়ানো গিয়েছে। ছবি সিনেমাহলে মুক্তি পেলে অনেক সময় মানুষ খুব দূরের হলে যেতে পারেন না। বড় জোর ২-৪ কিলোমিটারের দূরত্ব পর্যন্ত যেতে রাজি থাকেন। তার চেয়ে দূরে হল হলে অনেক সময় ইচ্ছা থাকলেও যাওয়া হয়ে ওঠে না। কিন্তু ওটিটি-তে নিজের বাড়িতে নিজের সময় মতো ফোনে দেখে নিতে পারেন যে কোনও কনটেন্ট।
প্রশ্ন: কিন্তু ওটিটি-তে আজকাল এক ধরনের কনটেন্টও খুব বেড়ে গিয়েছে। আপনার একঘেয়ে লাগে না?
পঙ্কজ: একটা গরু দুধ দিচ্ছে বলে, তাকে দুইয়েই যাব, আমি তেমন মানুষ নই। ‘ক্রিমিন্যাল জাস্টিস’-এর তিনটে সিজ়ন হয়ে গিয়েছে। চতুর্থটা তৈরি হচ্ছে। যে দিন মনে হবে চিত্রনাট্য একঘেয়ে লাগছে, সে দিনই ছেড়ে দেব। সব গল্পেরই কোনও না কোনও স্যাচুরেশন পয়েন্ট থাকে। তবে এটা সত্যিই যে, ওটিটি-তে দর্শক আসা যেমন সহজ, যাওয়াও ততটাই সহজ। সিনেমাহলে টিকিট কেটে যদি না দেখেন, তা-ও বক্স অফিসে ব্যবসা হবে। কিন্তু এখানে ঠিক কোন মুহূর্ত থেকে দর্শক দেখা ছেড়ে দিচ্ছেন, তা-ও বোঝা যায়।
প্রশ্ন: ‘কড়ক সিংহ’-এর চিত্রনাট্য পেয়ে কি মনে হয়েছিল দর্শককে ধরে রাখা যাবে?
পঙ্কজ: এই ছবির ন্যারেটিভ বেশ জটিল। এমন ধরনের চরিত্র আমি আগে করিনি। টোনিদা’র (পরিচালক) ছবি থ্রিলার হলেও তার ভিতরে বৃহত্তর সামাজিক একটা ছবি ভেসে ওঠে। সেটা আমার খুব ভাল লেগেছিল।
প্রশ্ন: বলা হয়, পঙ্কজ ত্রিপাঠী কোনও ছবিতে থাকলে দর্শককে ধরে রাখা সহজ হয়ে যায়?
পঙ্কজ: এক দিনে এই জায়গায় পৌঁছইনি। মোট ২০ বছর লাগল। আমি নিজেও কখনও ভাবিনি এই জায়গায় পৌঁছতে পারব। তবে এর পিছনে প্রচুর পরিশ্রম রয়েছে। আমি সৎ ভাবে কাজ করি। এ সব তারই ফসল।
প্রশ্ন: অনেক জায়গায় আপনার ছবি দেখে দর্শক উঠে দাঁড়িয়ে হাততালি দেন। এখন কি নিজেকে ‘স্টার’ মনে হয়?
পঙ্কজ: (মুখ কুঁচকে) একেবারেই নয়। এমন অনুভূতি কখনও হয় না আমার। আমি কাল রাতেই ছবির স্ক্রিনিংয়ের পর জুহু থেকে স্কুটি চালিয়ে বাড়ি গিয়েছি। এক বার একটা দুর্ঘটনা হয়েছিল। তার পর থেকে আমার স্ত্রী আমার সঙ্গে স্কুটিতে উঠতে ভয় পায়। কিন্তু মুম্বইয়ের রাস্তা এত সরু। আমি নিয়মিত স্কুটিতে যাতায়াত করি। কাল পাক্কা পাঁচ বছর পর স্ত্রী আমার স্কুটিতে বসতে রাজি হল। খুব ভয়ে ভয়ে ছিল যদিও (হাসি)। অটো না পেলে আমি কিন্তু এখনও দিব্যি স্কুটি চালিয়ে জেটি অবধি যাই। বাকিটা জলপথে। এখনও মনে হয় না, আমি ‘স্টার’ হয়ে গিয়েছি।
প্রশ্ন: আপনার স্ত্রী তো বাঙালি। অনিরুদ্ধর ছবিতে কাজ করার পর তা হলে কলকাতার সঙ্গে যোগ আরও গভীর হল?
পঙ্কজ: যোগ তো চিরকালই গভীর ছিল। আমার শ্বশুরবাড়ি এখানে। এখন আত্মীয়তা আরও বেড়েছে। অনুরাগ বসু এবং কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমার নিয়মিত কথা হয়। আমার খুব প্রিয় পরিচালক কৌশিক। আশা করি, খুব তাড়াতাড়ি আমরা একসঙ্গে কাজ করব। কলকাতার সব কিছুই আমার ভাল লাগে। আজ যেমন গলায় অসুবিধা হচ্ছে, তাই আলুসেদ্ধ ভাত খাব। অন্য সময় আমি আলু পোস্ত, ঝিঙে পোস্ত খেতে খুব ভালবাসি। আসলে পোস্ত খেলে ঘুম খুব ভাল হয়।
প্রশ্ন: ছবিতে জয়া আহসানের সঙ্গে আপনার ঘনিষ্ঠ দৃশ্যটি বেশ নজর কেড়েছে।
পঙ্কজ: এই প্রথম আমি এই ধরনের দৃশ্যে অভিনয় করলাম। তবে কোনও রকম প্রস্তুতি নিইনি। পেশাদার অভিনেতা হিসাবে আমি শুধুই নিজের সহ-অভিনেতার স্বাচ্ছন্দ্যের কথা মাথায় রেখেছি। কোনও রকম অসুবিধা হয়নি। দৃশ্যটি খুবই নান্দনিক ভাবে শুট করা হয়েছে। সেখানে কথোপকথনও খুব সুন্দর।
প্রশ্ন: আপনি জয়ার কোনও ছবি আগে দেখেছিলেন?
পঙ্কজ: না, আগে দেখিনি। কিন্তু টোনিদা জয়ার কথা বলার পর আমি ওর কিছু বাংলাদেশি ছবি দেখি। ভীষণ পরিণত অভিনেত্রী। একসঙ্গে কাজ করে খুব ভাল লাগল।
প্রশ্ন: ‘ম্যাঁয় অটল হুঁ’ ছবিতে অটলবিহারী বাজপেয়ীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। আপনি নিজে দীর্ঘ দিন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের (এভিবিপি) সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সেই দিনগুলো কাজে লেগে গেল?
পঙ্কজ: এই যোগগুলো সবই ভাগ্যে লেখা থাকে। আমি এই ছবিটা করার আগে অটলজিকে নিয়ে এতই গবেষণা করেছি যে, মনে হয় একটা গোটা বই লিখে ফেলতে পারব এখন। উনি বরাবরই আমার আদর্শ ছিলেন। আমি দু’বার দিল্লি গিয়েছিলাম ওঁর বক্তৃতা শুনতে। কখনও ওঁর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়নি। ৩০০ মিটার দূর থেকেই দেখতে হয়েছে। কিন্তু ওঁর কবিতার আমি খুব ভক্ত।
প্রশ্ন: কবিতা বোধহয় আপনার বিশেষ পছন্দের। অবসর সময় কী করেন?
পঙ্কজ: খাই আর ঘুমাই। আসলে আমি মনেপ্রাণে বাঙালি। আমি চাই রোজ খাওয়ার পর এক ঘণ্টা ভাতঘুম দিতে (হাসি)।
প্রশ্ন: আবার কলকাতা কবে আসা হবে?
পঙ্কজ: আগামী মাসেই চলে আসব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy