Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

ছকের গল্পে অভিনয়ের টেক্কা

কর্মসূত্রে বিদেশে থাকা ছেলেমেয়ে এবং কাজের লোকদের দয়ায় দেশে একলা পড়ে থাকা বাবা-মায়ের সঙ্কট নিয়ে ছবি শহুরে বাঙালিকে খুব চেনা একটা গল্প বলে।

দেব ও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।

দেব ও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।

সোমেশ ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০১৯ ০০:০২
Share: Save:

সাঁঝবাতি
পরিচালনা: লীনা গঙ্গোপাধ্যায়, শৈবাল বন্দ্যোপাধ্যায়

অভিনয়: সৌমিত্র, লিলি,
দেব, পাওলি
৬/১০

এক-একটা ছবি থাকে, যাকে বলা চলে ‘অভিনেতার ছবি’। বস্তাপচা প্লট, অবিন্যস্ত চিত্রনাট্য, চড়া সংলাপ বা কারিগরির খামতি— সব ছাপিয়ে ছবিকে টেনে নিয়ে যেতে পারেন। দর্শককে হলে বসিয়ে রেখে হাসাতে-কাঁদাতে পারেন তেমন-তেমন অভিনেতা। বাংলা ছবিতে এমন নজির কম নেই, হিন্দিতেও নয়।

কর্মসূত্রে বিদেশে থাকা ছেলেমেয়ে এবং কাজের লোকদের দয়ায় দেশে একলা পড়ে থাকা বাবা-মায়ের সঙ্কট নিয়ে ছবি শহুরে বাঙালিকে খুব চেনা একটা গল্প বলে। সেই গল্পটাই ‘সাঁঝবাতি’ ছবিতে বুনতে চেয়েছেন লীনা গঙ্গোপাধ্যায় ও শৈবাল বন্দ্যোপাধ্যায়।

এই স্রষ্টা জুটির দীর্ঘ টিভি সিরিয়াল সান্নিধ্য হেতুই হয়তো গল্পের গোটা বাঁধুনি বেশ চড়া তারে বাঁধা। চলনের ছকটাও খানিক গোল-গোল। কোনও চরিত্রেরই মনে কোনও ধোঁয়াশা নেই, দোলাচল নেই। বরং ভাল মানুষ-মন্দ মানুষের বাইনারি ঝলমলে শীত-দুপুরে একটুও টোল না-খাওয়া কমলালেবুর মতো স্পষ্ট। বিদেশে থাকা সন্তান মানেই স্বার্থপর, যাদের চোখ কেবল বাবা-মায়ের সম্পত্তির দিকে, এই সব বৃদ্ধবৃদ্ধারা কেউ আদৌ খিটখিটে নন বরং সতত স্নেহপরায়ণ, যাঁরা তাঁদের দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন সকলেই স্বার্থবুদ্ধিহীন সমাজসেবী, প্রোমোটার বা তার লোকজন মানেই প্রায় রকের গুন্ডা আর ঘর ভেঙে আসা পুরনো প্রেমিকা বোঝাস্বরূপ— এ রকম আর কী। এই বাইনারি কে জানে, হয়তো বা এই ছবির তুরুপের তাসও।

কিন্তু তার পরেও যে ছবিটি বসে দেখা যায়, তার কারণ দুই বর্ষীয়ান ও দুই তরুণতরের অভিনয়। ছেলেমেয়ে যাঁকে ফোন করে বৃদ্ধাবাসে গিয়ে যত্নে থাকার পরামর্শ দেয়, সেই ছানাদাদুর চরিত্রে এমন আশ্চর্য রোদবৃষ্টির কাজ করেছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, যে হাসি-কান্না সমানে ঘর বদলাবদলি খেলেছে। তাঁর নিজস্ব একটু আদুরে, একটু চড়া অভিনয়ে টানা সঙ্গত করে গিয়েছেন সুলেখার ভূমিকায় লিলি চক্রবর্তী। সেই সুলেখা, যার ডাক্তার ছেলে বিদেশ থেকে ফোন করে বাড়ি বিক্রি করার জন্য চাপ দিয়ে চলেছে।

বস্তুত সুলেখা, তার রান্নার মেয়ে ফুলি (পাওলি দাম) ও কেয়ারটেকার কাম ড্রাইভার চাঁদুকে (‌দেব) ঘিরেই আবর্তিত হয়েছে ছবি। সঙ্গগুণ বলে যে একটা কথা আছে, সেটা এ ছবিতে দেবকে দেখলে বোঝা যায়। তারকা নন, বরং ভোটের আগে ঘাটালের ঘরে-ঘরে ঘোরা মাটির ছেলেটিকেই যেন ফিরিয়ে এনেছেন তিনি। শেষের আবেগঘন সংলাপ বাদ দিলে, সৌমিত্রের পাশে কয়েকটি মুহূর্তে তাঁর অভিনয় ভালই উতরোয়। ছোট্ট চরিত্রে চমৎকার ছোট-ছোট কাজ করে যান সোহিনী সেনগুপ্তও।

তবে পাওলির চরিত্রটি যেন খানিক এলোমেলো। সে কেন অদ্ভুত টানে কথা বলে, দেহাতি ঢঙে বসে, আদতে কোথাকার বাসিন্দা, সেটাই অস্পষ্ট। যেমন অজানা, বাড়ির সামনে বেপরোয়া বাজি পোড়ানোয় অসুস্থ হয়ে পড়লেও সুলেখা কেন পুলিশে ফোন করে না। চিত্রগ্রাহক শীর্ষ রায় নিজের কাজটা গুছিয়ে করেছেন। কিন্তু অনুপম রায়ের বাঁধা গান কার্যত কোনও দাগই কাটে না।

তবু একটা কথা। এই ছদ্ম-আঁতলামি ও গোয়েন্দা-লাঞ্ছিত সময়ে একটা ছাপোষা বাংলা ছবি যদি দর্শককে হলে টেনে রাখতে পারে, ক্ষতি কী?

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy