Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪
Dev

Tonic Review: পরাণ-দেবকে কুর্নিশ, সুচিত্রা-উত্তম জুটির জাদুর কথা আবারও মনে করিয়ে দিলেন: হরনাথ

প্রশ্রয় আর যত্ন পেলে বয়স্করাও ‘আমরাও পারি’ মনোভাব নিয়ে এগিয়ে যেতে পারেন।

দেব এবং পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জুটিতে মুগ্ধ হরনাথ।

দেব এবং পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জুটিতে মুগ্ধ হরনাথ।

হরনাথ চক্রবর্তী
হরনাথ চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০২১ ১৫:৩৫
Share: Save:

বাঙালির কাছে ‘টনিক’ ওষুধ। আবার মৃত-সঞ্জীবনী সুধাও। যা খেলে মৃতপ্রায় ব্যক্তি চাঙা হয়ে ওঠেন। অসুস্থ রোগী সুস্থ হন। ২৪ ডিসেম্বর মুক্তি পাওয়া বাংলা ছবি ‘টনিক’ও আমার চোখে অনেকটাই তা-ই। ছবি সম্পর্কে তাই এক বাক্যে বলতে হলে বলব, বাংলা ছবির দুনিয়ায় নতুন প্রাণ সঞ্চার করবে ‘টনিক’।

এ বার প্রশ্ন, কেন বললাম? ব্যাখ্যা করতে গিয়ে প্রথমেই বলব গল্পের কথা। খুব ঘরোয়া, পারিবারিক একটি গল্প। সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে বসে দেখার মতো। যা আমাদের বাংলা ছবির ঘরানা। ছেলের বন্ধুর বিবাহ-বার্ষিকী পালন হচ্ছে ধুমধাম করে। সব দেখে বাবার ইচ্ছে, তাঁদের বিবাহবার্ষিকী পালিত হবে বিদেশে। সে কথা বলেও ফেলেছেন কাছের বন্ধুকে। এ দিকে ছেলের ফতোয়া, উদযাপন হবে বাড়ির ছাদে! সঙ্গে সঙ্গে আত্মসম্মানে আঘাত। মাকে নিয়ে বাবা নিরুদ্দেশ। পর্দা বলছে, পাহাড়ি পথের বাঁকে জীবন উদযাপনে ব্যস্ত তাঁরা। বাবা স্বাধীন ভাবে কখনও প্যারাগ্লাইডিং করছেন। কখনও চড়ছেন পাহাড়ে। কখনও সাবানের বুদ্বুদে শরীর ডুবিয়ে বুঁদ হয়ে যাচ্ছেন সুরায়। কখনও খরস্রোতা নদীতে নৌকো ভাসাচ্ছেন! সৌজন্যে? টনিক। এক জন বৃদ্ধের এই সমস্ত কাণ্ড-কারখানা দেখতে দেখতে রোমাঞ্চিত হবেন ছোট-বড় সবাই।

ছেলে যখন ছোট, বাবা তখন বুক দিয়ে আগলান। সেই বাবা-ই যখন ছেলের শাসনের যাঁতাকলে পড়েন? ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা তাঁর! পরিচালক অভিজিৎ সেন তাঁর প্রথম ছবিতে সম্পর্কের গল্পের পাশাপাশি সেই দিকটি তুলে ধরেছেন। আপাদমস্তক মজার মোড়কে মুড়ে। দেখিয়ে দিয়েছেন, একটু প্রশ্রয় আর যত্ন পেলে বয়স্করাও ‘আমরাও পারি’ মনোভাব নিয়ে এগিয়ে যেতে পারেন। ঠিক যে ভাবে গল্পে বৃদ্ধ মা-বাবা বিদেশ যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। পাসপোর্ট করানোর নানা হাঙ্গামার মুখোমুখি হচ্ছেন। শেষে টনিকের সৌজন্যে বিদেশ ছেড়ে দেশের মাটিতেই স্বর্গের সন্ধান। এ ভাবেই নায়ক-নায়িকার বদলে দুই সহ-অভিনেতার মধ্যে জুটি তৈরি করে দিল এই ছবি। সেই জুটি বর্ষীয়ান বাবা আর পর্যটন সংস্থার কর্মী টনিকের জুটি। যার আকর্ষণ বাংলা ছবির স্বর্ণযুগের সুচিত্রা-উত্তম জুটির মতোই নেশা ধরায়। ভাল গল্পের সঙ্গে বড়দিনের আগের দিন বাঙালিকে এই নতুন জুটিও উপহার দিলেন পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায় আর দেব অধিকারী। দু’জনকেই কুর্নিশ!

বাংলা ছবির দুনিয়ায় নতুন প্রাণ সঞ্চার করবে ‘টনিক’।

বাংলা ছবির দুনিয়ায় নতুন প্রাণ সঞ্চার করবে ‘টনিক’।

ছবির প্রচার ঝলক ইতিমধ্যেই জনপ্রিয়। দর্শকেরাও জেনে গিয়েছেন মা-বাবা, ছেলে-বউমা এবং টনিক যথাক্রমে পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, শকুন্তলা বড়ুয়া, সুজন মুখোপাধ্যায়, কণীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায় আর দেব। এ ছাড়াও, আছেন বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী, তুলিকা বসু, রজতাভ দত্ত, কাঞ্চন মল্লিক, অম্বরীশ ভট্টাচার্য, তনুশ্রী চক্রবর্তী, বিশ্বনাথ বসু। গল্পের খাতিরে, পরিচালনার গুণে প্রত্যেকে নিজের সেরাটাই দিয়েছেন। তবে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন পরাণদা-শকুন্তলাদি-দেব ত্রিকোণ। ৮২ বছর বয়সে এসে কেউ যে পাহাড়ে চড়তে পারেন, মাঝ আকাশে উড়তে পারেন, বাথটাবে শুয়ে ফ্যান্টাসি উস্কে দিতে পারেন, পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। কখনও কৌতুক, কখনও শুধুই অভিব্যক্তি, কখনও বৃষ্টির মধ্যে বসে নিজের কথা বলতে বলতে একই ভাবে অঝোরে ঝরা— পরাণদা অনবদ্য। এই ছবির পরে তাঁকে নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য হবে টলিউড।

একই ভাবে প্রাণবন্ত শকুন্তলাদি। ভারিক্কি চেহারায় নিখুঁত গিন্নিবান্নি। ইংরেজি বলতে গিয়ে সঙ্কুচিত। তিনিই স্বামীর তালে তাল মিলিয়ে সমান সাহসিনী। উত্তম-যুগে মহানায়কের নায়িকা। অঞ্জন চৌধুরীর সময়ে ‘বিধবা’-র চরিত্রে জনপ্রিয়। মাঝে বহু দিনের ফাঁক। ক্যামেরার মুখোমুখি হয়েই ফের ছক্কা!

তবে সবাইকে, সব কিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছেন দেব। ‘পাগলু’, ‘খোকাবাবু’, ‘চ্যালেঞ্জ’ তাঁর জীবনে অতীত। প্রতিটি ছবিতে নিজেকে ভাঙার নেশা পেয়ে বসেছে তাঁকে। ‘বুনো হাঁস’ থেকে নিজেকে নিয়ে পরীক্ষার শুরু তাঁর। তালিকায় ‘জুলফিকর’, ‘চ্যাম্প’, ‘কবীর’, ‘সাঁঝবাতি’ আর ‘টনিক’। তথাকথিত নায়ক না হয়েও এই ছবির মৃত-সঞ্জীবনী সুধা তিনিই! বিপরীতে নায়িকা নেই। গাছের ডাল ধরে নাচ নেই। মস্তিষ্ক নয়, হৃদয় দিয়ে এই ছবি দেখবেন যাঁরা, তাঁরা দেবকে কোনও মতেই অস্বীকার করতে পারবেন না।

নায়ক-নায়িকার বদলে দুই সহ-অভিনেতার মধ্যে জুটি তৈরি করে দিল এই ছবি।

নায়ক-নায়িকার বদলে দুই সহ-অভিনেতার মধ্যে জুটি তৈরি করে দিল এই ছবি।

একটি রান্না তখনই স্বাদু হয় যখন তার মশলা, ফোড়ন মাপমতো থাকে। এই ছবিতে টানটান চিত্রনাট্য, মুচমুচে সংলাপ, গান আর চোখজুড়ানো প্রকৃতি সেই মশলাপাতি, ফোড়ন। ‘নো প্যানিক, ওনলি টনিক’-এর মতো কথা বা ‘ও টনিক তুমি জিতে যাও লটারি’র মতো গান নিজ গুণেই প্রচারে মদন মিত্রের ঠোঁটে জায়গা করে নিয়েছে! আলাদা করে বলতেই হয় ছবির চিত্রায়ণের কথা। সুপ্রিয় দত্তের ক্যামেরা বাঙালিকে বিদেশ ভ্রমণ করিয়েছে দেশের মাটিতেই। উত্তরবঙ্গে এমনও চোখজুড়ানো জায়গা আছে, এই ছবি না দেখলে বোঝা ভার। সম্পাদনায় সুজয় দত্ত রায়ও ভাল। পরিচালনার পাশাপাশি বেঙ্গল টকিজ-এর কর্ণধার অতনু রায়চৌধুরীর সঙ্গে এ ছবির কাহিনি লিখেছেন অভিজিৎ। চিত্রনাট্যে শুভদীপ দাস। গানে ফের স্বমহিমায় জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর পরিচালনায় গেয়েছেন অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়, অনুপম রায় এবং অন্যান্যরা।

ছবি দেখে বেরোতে বেরোতে নিজের অজান্তে আমিও গুনগুন করেছি, ‘ও টনিক...তুমি জিতে যাও লটারি’! ছবিটি হিট হলে দর্শক আবার হলমুখী হবেন। টানা দু’বছর অতিমারি কাটিয়ে লটারি জিতবে বাংলা বিনোদন।

অন্য বিষয়গুলি:

Dev Paran Bandyopadhyay Haranath Chakraborty
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE