দু’ গজের দূরত্ব মেনেও টলিউডের অভিনেতা থেকে পরিচালক করোনা আক্রান্ত। গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।
সরকারি নির্দেশ মেনে আনলক পর্বে উন্মুক্ত প্রথমে টেলি পাড়ার দরজা। ধীরে ধীরে টলি পাড়াও। সারাক্ষণ স্যানিটাইজেশন, মাস্ক, দু’ গজের দূরত্ব মেনেও টলিউডের অভিনেতা থেকে পরিচালক করোনা আক্রান্ত।
কীভাবে ছড়াল সংক্রমণ? কারা করোনাকে খুব কাছ থেকে দেখলেন?
সপরিবারে কোয়েল মল্লিক এবং নিসপাল সিং রানে, সপরিবারে সন্দীপ রায়, পরিচালক রাজ হয়ে অতি সম্প্রতি কিংবদন্তী অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের শরীরে থাবা বসিয়েছে কোভিড। একাধিক কো-মর্বিডিটি থাকায় ১৬ জনের মেডিকেল টিম তাঁকে বিশেষ তত্ত্বাবধানে রেখেছে।
কোয়েল যখন করোনা পজিটিভ তখন তিনি শ্যুটিঙের আশপাশেও ছিলেন না। আক্রান্ত অভিনেত্রী টুইটে জানান, “মা-বাবা আমি এবং রানে করোনায় আক্রান্ত। আপাতত সবাই সেল্ফ কোয়রান্টিনে”। সেই প্রসঙ্গে আনন্দবাজার ডিজিটালের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে রানে বলেন, “কোভিড হলেই যে বাড়ি থেকে চিকিৎসা হয়, এমনটা ধরে নেওয়াও ঠিক নয়। বাড়িতে হোম আইসোলেশনে, নাকি হাসপাতালে চিকিৎসা হবে তার সিদ্ধান্ত নেবেন চিকিৎসকরা।’’
আরও পড়ুন: অনুরাগ বিতর্কে রিচার কাছে ক্ষমা চাইলেন পায়েল
নিজেদের স্বেচ্ছ্বাবন্দি করার পাশাপাশি ওই সময় বাইরের লোক বা কাজের লোক বাড়িতে আসতে দেননি কোয়েল। সমস্ত নিয়ম, ওষুধ, বিশ্রাম আর মেডিটেশন করতেন কোয়েল সেই সময়।
লকডাউন চালু হতেই ভীষণ খুশি হয়েছিলেন পরিচালক সন্দীপ রায়। স্ত্রী ললিতা রায় জানিয়েছিলেন সেই সময়, পরিচালক মোটে ঘরের বাইরে পা রাখতে ভালবাসেন না। লকডাউনে তাঁর পোয়া বারো!
সেই সত্যজিৎ পুত্রও ঘরে বসে কী করে সপরিবারে কোভিড পজিটিভ হলেন?
বিস্মিত ললিতার বক্তব্য, ‘‘আমরা কোথাও সে ভাবে বেরোইনি। আমাদের কাছেও কেউ আসেননি। তার পরেও আমি, সন্দীপ, সৌরদীপ আক্রান্ত! আমাদের কারওরই জ্বর বেশি হয়নি। দিন কয়েক আমি নাকে গন্ধ পাচ্ছিলাম না। তুলনায় বেশি ভুগেছেন সন্দীপ। হালকা জ্বরের পাশাপাশি সুগার ফল করা, ইরিটেশন দেখা গিয়েছিল। দিন কয়েক অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হয়েছিল। কো-মর্বিডিটি থাকায় চিন্তিত ছিলেন পারিবারিক চিকিৎসকও।পরে অবশ্য সমস্তটাই কাটিয়ে ওঠে। বিশ্রাম, পুষ্টিকর খাওয়াদাওয়া করে।"
দেবযানী, সৌমিলি বরং দূরে ছিলেন শ্যুটিং ফ্লোর থেকে। — ফাইল চিত্র।
রায় বাড়ির পুত্রবধূর দাবি, তাঁরা বুঝতেই পারেননি করোনা সংক্রমণ ছড়িয়েছে তাঁদের মধ্যে। পর পর সবার জ্বর হওয়ায় পারিবারিক চিকিৎসক বলেন, অ্যান্টি বডি টেস্ট করাতে। তখনই ধরা পড়ে।
আক্রান্ত হয়েছিলেন অভিনেত্রী র্যাচেল হোয়াইটও। এই অভিনেত্রী ‘মিসম্যাচ সিজন ৩’-এর শ্যুটের জন্য মুম্বই থেকে কলকাতা এসেছিলেন। ডায়মন্ড হারবারে ন’দিনের আউটডোর শ্যুট ছিল তাঁর। অভিনেত্রী নিজে জানান, ‘‘সেই সময় আমার অ্যান্টিবায়োটিকের কোর্স চলছিল। মুম্বইয়ের চিকিৎসক বলেন, এখানে টেস্ট করিয়ে নিতে। তাই টেস্ট করাই। শ্যুটে কোনও শরীর খারাপ হয়নি।’’ শ্যুট শেষে পার্টিও করেন নাকি ডিজাইনার অভিষেক দত্তের বাড়ির ছাদে। সিরিজ়ের পরিচালক সৌমিক চট্টোপাধ্যায়েরও হালকা উপসর্গ নাকি এর পরেই ধরা পরে বলে খবর।
টেলি পাড়ায় সংক্রমণ শুরু হয়েছিল যাঁদের দিয়ে তাঁদেরই একজন বিভান ঘোষ। যিনি ‘কৃষ্ণকলি’ ধারাবাহিকের অশোক চৌধুরী। সেই খবর পাওয়া মাত্রই এক মেকআপ রুম শেয়ার করায় সাত দিনের স্বেচ্ছা নিভৃতবাসে চলে গিয়েছিলেন ধারাবাহিকের ‘নিখিল’ নীল ভট্টাচার্য। তারপরেও কোনও উপসর্গ দেখা না দেওয়ায় চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই শুটে যোগ দেন তিনি।
কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। হঠাৎই নাক বন্ধ, মুখে স্বাদ নেই নীলের! সঙ্গে শরীরে ক্লান্তি। একটুও দেরি না করে পরীক্ষা করান। রিপোর্ট পজিটিভ আসতেই এই প্রথম যেন থমকে গেল ‘নিখিল’।
নিজের সঙ্গে পরিবারের সবাইকে ভাল রাখতে কী করেছিলেন নীল? যাতে সংক্রমণ না ছড়ায় তাই সবার আগে নিজেকে ঘরবন্দি করে ফেলেছেন নীল। মা তাঁকে ঘরের বাইরে থেকে খাবার দিচ্ছেন। খাওয়ার পর সেই থালা বাসন এক বালতি ডেটল জলে চুবিয়ে দিয়েছেন নীল। তারপর বাড়ির লোক সেটি নিয়ে গিয়ে ভাল করে মেজে, স্যানিটাইজড করে আলাদা রেখে দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: নামী হোটেলে নিভৃত সময় কাটানো থেকে বিদেশে পার্টি, তার পরেও কেন ভেঙে গেল শাহিদ-সানিয়া প্রেম
গলা ভাল রাখতে গার্গলিং, ভেপার নেওয়া, গরম জল খেয়েছেন নিয়মিত। শরীর সুস্থ রাখতে ঘুম ছাড়া আর কী করছেন? উত্তর এল, ইমিউনিটি বাড়ায় যে সব খাবার সেগুলো ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বেশি করে খেয়েছেন। জল, স্টু জাতীয় সহজপাচ্য পুষ্টিকর খাবার রোজ ডায়েটে থাকত।
তালিকা বড় হয়েছে সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, সৌমিলি বিশ্বাস, দেবযানী চট্টোপাধ্যায়, সায়ক চক্রবর্তী, নেহা আমনদীপ আক্রান্ত হওয়ায়। ধারাবাহিক ‘কোড়াপাখি’-র গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রাভিনেতা সুরজিৎ আক্রান্ত হয়েছিলেন সপরিবারে। লকডাউন উত্তর শুটিং পর্বে শুটিংও করেছেন সুরজিৎ। ফেসবুকে অভিনেতার মেয়ে একটি পোস্টে বাবার করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবর জানিয়ে লিখেছিলেন, “আমার এবং আমার বাবা-মা তিন জনেরই কোভিড টেস্ট পজিটিভ এসেছে। তিন মাস গৃহবন্দি থাকার পর এ জিনিস কী করে সম্ভব তা আমার জানা নেই।’’
সুরজিৎ সেটে এসেছিলেন। করোনার সম্ভাবনা তাই তাঁর সামান্য হলেও ছিল। ‘‘প্রথমে স্ত্রীর জ্বর। সঙ্গে হাল্কা গলা ব্যথা। আমারও তা-ই। মেয়ের শুধুই জ্বর। যদিও টেম্পারেচার ৯৯-এর আশেপাশেই ঘোরাফেরা করেছে। তবে এটুকুই মারাত্মক কাবু করে দিয়েছিল’’, বক্তব্য সুরজিতের।
আরও পড়ুন: রাইমা-প্রিয়ঙ্কার নতুন প্রেম! সরগরম টলিপাড়া
তার পর? নিভৃতবাস। ফোনে সারা ক্ষণ দেবশংকর হালদার, কৌশিক সেন, শঙ্কর চক্রবর্তীরা সাহস জুগিয়ে গিয়েছেন। ‘‘এই তিন জন আমার এনার্জি বুস্টার। ফলে, ভয় পাইনি। তবে বোরডমে ভুগেছি। লকডাউনের পর ফের গৃহবন্দি দশা! কার ভাল লাগে?’’ তিন বন্ধু বাজার থেকে জলের জার পৌঁছে দিয়েছেন বাড়ির দোরগোড়ায়। জল, বাজার ঘরের দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়েছেন বাড়ির অন্য অংশে বসবাসকারী তুতো ভাইয়েরা।
দেবযানী, সৌমিলি বরং দূরে ছিলেন শ্যুটিং ফ্লোর থেকে। প্রায় মাসখানেক ‘ত্রিনয়নী’র শ্যুট করেননি ‘খল’ দেবযানী। ‘যমুনা ঢাকি’র শ্যুট দিয়ে সেটে ফেরেন। তার মাস দেড়েক পরেই করোনা। সৌমিলি একেবারেই বাড়ি বন্দি। তবু করোনা ছাড়েনি তাঁকে। নিজের অসুস্থতার সময়ের কথা বলতে গিয়ে রসিকতা অভিনেত্রীর, ‘‘বাড়িতে চার বয়স্ক মা-বাবা, শ্বশুর-শাশুড়ি। তাঁদের মুখ চেয়ে কাজের লোককেও ঢুকতে দিইনি। সব একা হাতে সামলাতাম। করোনা হওয়ার পরে পায়ের উপর পা তুলে আমিই রাজ-রাজেশ্বরী! স্বামী অফিসের পাশাপাশি ঘর সামলেছেন নিখুঁত ভাবে। আমার তখন শুধুই বিশ্রাম আর পায়ের উপর পা তুলে হুকুম!’’
কোয়েল, রানে, সন্দীপ রায়, রঞ্জিত মল্লিক সবাই ঈশ্বরের আশীর্বাদে করোনা জয়ী। বাবাকে হারালেও করোনা মুক্ত পরিচালক রাজ চক্রবর্তীও।
সবার দুশ্চিন্তা শুধু ‘ক্ষিদদা’কে নিয়েই। কায়মনোবাক্যে একটাই প্রার্থনা, ‘কোনি’র মতোই ‘ফাইট’ করে ফিরুন ‘অপরাজিত’ ‘অপু’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy