Advertisement
E-Paper

আমরা কি এতটা রাগ নিয়েই বাঁচব? আগামী প্রজন্মকে দিয়ে যাব দ্বেষের উত্তরাধিকার!

বাংলাদেশের অস্থির পরিস্থিতি নিয়ে সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করার পর থেকেই কটাক্ষের শিকার সঙ্গীতশিল্পী লগ্নজিতা চক্রবর্তী। মুছলেন যাবতীয় পোস্ট। এই ঘটনায় তাঁর মনের অবস্থা কী রকম? লিখলেন গায়িকা।

image of Lagnajita Chakraborty

লগ্নজিতা চক্রবর্তী। ছবি: সংগৃহীত।

লগ্নজিতা চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৭:৫২
Share
Save

ভেবে অবাক হচ্ছি, মানুষের মধ্যে কত ঘৃণা জমে রয়েছে! শনিবার রাতে ফেসবুকে ভারত এবং বাংলাদেশের সম্প্রীতি বিষয়ক একটি পোস্ট করার পর থেকেই দেখলাম, ‘ট্রোলিং’ শুরু হল। তারই জবাবে রবিবার আরও কয়েকটা পোস্ট করেছিলাম। কিন্তু দেখলাম, আমি কোনও ভাবেই আলোচনা থামাতে পারব না। কারণ সব সময়েই মনে হয়েছে, এই কঠিন সময়ে মানুষ রেগে রয়েছেন। শেষ পর্যন্ত আমার পরিবার এবং ব্যান্ডের সদস্যদের অনুরোধে যাবতীয় পোস্ট মুছে দিলাম সমাজমাধ্যম থেকে।

তবে এই পুরো ঘটনায় কয়েকটা বিষয় আমার কাছে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, আমরা অনেক সময়েই পরিস্থিতির তুলনায় নিজেদের অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করি। তাই মতামতের আদানপ্রদানও চলতে থাকে। আমার পোস্টে একের পর এক নেতিবাচক মন্তব্য দেখে আমি খুব রেগে গিয়েছিলাম। মনখারাপ হয়ে যাচ্ছে এই ভেবে যে, এখনও এক সম্প্রদায়ের মানুষ অন্যের প্রতি কতটা অসম্মান পুষে রাখেন মনের ভিতর। বার বার আমাকে বলা হল, আমি দক্ষিণ কলকাতার অভিজাত এলাকার বাসিন্দা। সেখান থেকে বেরিয়ে এসে নাকি সবটা বিচার করা উচিত। আমার প্রশ্ন, প্রত্যেক মানুষের বাস্তবতার একটা পরিপ্রেক্ষিত রয়েছে। এটা ঠিক, আমার জীবনের সত্যের থেকে হয়তো মুর্শিদাবাদের গ্রামের মানুষের বাস্তবতা আলাদা। হতেই পারে। কিন্তু আমি শুধু আমার সত্যকে সম্বল করে কিছু কথা বলেছিলাম। তাতে কারও সমস্যা হলে, আমার সত্যিই কিছু বলার নেই।

কলকাতার যে কোনও বাঙালি শিল্পীর পোস্ট করা গানের নীচে মন্তব্য লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, অর্ধেক যদি এ পার বাংলার বাঙালিদের মন্তব্য আসে, তা হলে বাকিটা ও পারের। আমি এখনও বাংলাদেশে গিয়ে অনুষ্ঠান করার সুযোগ পাইনি। কয়েক বছর আগে ও পার বাংলার আইয়ুব বাচ্চু দমদমে অনুষ্ঠান করতে এসেছিলেন। তাঁর আগে আমি অনুষ্ঠান করি। কিন্তু মনে আছে, তাঁর শো শুরু হওয়ার পর আমি মাটিতে বসে পড়েছিলাম। পরমদা (অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়) সঞ্চালক ছিলেন। পরে তিনিই আমাকে একটা চেয়ারে বসার ব্যবস্থা করে দেন। আমি বলতে চাইছি, তখন আইয়ুব বাচ্চু আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন, কোথায় বসছি সেটা নয়।

Bengali singer Lagnajita Chakraborty writes after her social media post sparks controversy amid Bangladesh unrest

সমাজমাধ্যমে লগ্নজিতার করা পোস্ট। ছবি: ফেসবুক।

অনেকেই এখন বলেন, শিল্পীরা হলেন ‘সফ্‌ট টার্গেট’। কোনও জিনিসের ভাল এবং খারাপ— দুই নিয়ে পথ চলায় আমি বিশ্বাসী। আমি নিজেকে সঙ্গীতশিল্পী বলে পরিচয় দিয়ে থাকি। কিন্তু কোনও দিনই নিজেকে তারকা মনে করি না। হয়তো কিছু মানুষ আমাকে চেনেন। শিল্পী হিসেবে মানুষ আমাকে ভালবাসেন বলে জীবনে অনেক সুবিধাও আমি পাই। সুবিধা যদি হাসিমুখে মেনে নিই, তা হলে অসুবিধাও আমাকে মেনে নিতে হবে।

একটা জিনিস স্পষ্ট করে দিই। এই সব কটাক্ষ কিন্তু আমাকে নাড়া দেয়নি। বরং মানুষের প্রতি মানুষের এই ঘৃণা দেখে আমি বিচলিত। কেউ বলতেই পারেন, তা হলে আমি কেন একের পর এক পোস্ট করলাম? আমি কাউকে জবাব দিতে চাইনি। আমার আশপাশের মানুষ যে এতটা অসহিষ্ণু, সেটা ভেবে কষ্ট পেয়েছি। তাই পোস্ট করেছি। ইতিহাস আমি অস্বীকার করছি না। কিন্তু আমার প্রশ্ন, আমরা কি এতটা তীব্র রাগ নিয়েই বেঁচে থাকব? আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকেও কি এই রাগের উত্তরাধিকার দিয়ে যাব?

মানুষ এখন রেগে রয়েছেন। সেখানে দাঁড়িয়ে আমি তো তাঁদের আরও মারামারি করতে বলতে পারি না। আমি সেখানে সম্প্রীতির বার্তাই দিতে পারি। সেটাই করেছিলাম। আমি বিশ্বাস করি, ‘এক দিন পৃথিবী আবার শান্ত হবে’। তখন আবার ‘জেমস্‌’ পশ্চিমবঙ্গে অনুষ্ঠান করতে আসবে। আবার এ পার বাংলার শিল্পীরা ও পার বাংলায় অনুষ্ঠান করতে যাবেন। এখন সম্ভব না হলেও গত ন’বছরে আমি যত বাংলাদেশি শিল্পীর সঙ্গে কাজ করেছি, তাঁরা নিশ্চয়ই আমাকে ভুলে যাবেন না। শান্তি ফিরে এলে, তাঁদের সঙ্গে কাজের সুযোগ হলে আমি নিশ্চয়ই আবার তাঁদের সঙ্গে কাজ করব। দুই বাংলা আবার একসঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করবে।

Lagnajita Chakraborty Bengali singer Bangladesh Unrest Trolling Tollywood News

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।