(বাঁ দিক থেকে) উষসী চক্রবর্তী, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত এবং দিতিপ্রিয়া রায়। —নিজস্ব চিত্র।
আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে গত ১৪ আগস্ট প্রথম ‘রাত দখল’ কর্মসূচির সাক্ষী ছিল গোটা রাজ্য। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টে আরজি করের শুনানির কথা মাথায় রেখে বুধবার ফের রাত দখলের আহ্বান জানানো হয়। সন্ধ্যা থেকেই শহরের রাস্তায় ভিড় বাড়তে শুরু করে। জমায়েতে অংশ নেন সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিদ্বজ্জনেরা। তার পর রাত ৯টা থেকে এক ঘণ্টা প্রথমে আলো নিভিয়ে প্রতিবাদ করেন শহরবাসী। পরে শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় প্রতিবাদীদের ভিড় ক্রমশ বাড়তে শুরু করে।
প্রথমে উত্তর কলকাতার দিকে চোখ রাখা যাক। ঘড়িতে রাত ৯টা। কলেজ স্কোয়্যারে জমায়েতে ক্রমশ ভিড় বাড়তে শুরু করে। আস্তে আস্তে সেই জমায়েত মানবশৃঙ্খলে রূপান্তরিত হয়। প্রত্যেকের হাতে জ্বলে উঠল মোমবাতি। কণ্ঠে ধ্বনি, ‘‘তোমার স্বর আমার স্বর, জাস্টিস ফর আরজি কর।’’ এই ধ্বনি শোনা গিয়েছে শ্যামবাজারেও। পাঁচ মাথার মোড়ে মোমবাতি, মশালের আলোয় যেন অকাল দীপাবলি। আট থেকে আশি— সন্ধ্যা থেকে পথে। বর্ষীয়ানেরা নিজেদের মেয়ে, নাতনির মুখ মনে করে জয়ামেতে এসেছেন বলে জানিয়েছেন। মোমবাতির সঙ্গে চলেছে পথে আঁকা, বার্তা লিখন। এই ভিড়ে মিশে বিচার চেয়েছেন টলিপাড়ার অনেকেই। উপস্থিত ছিলেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, তথাগত মুখোপাধ্যায়, দেবলীনা দত্ত, বিবৃতি চট্টোপাধ্যায়, সোহম মজুমদার, সোলাঙ্কি রায়, ঋষভ বসু, রাতাশ্রী দত্তেরা। যাদবপুরের জমায়েতে উপস্থিত ছিলেন মিমি চক্রবর্তী। মোমবাতি জ্বেলে তিনি প্রতিবাদ জানান।
ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত ১২টা। স্তব্ধতা এই জনবহুল চত্বরে। এক মিনিট নীরবতা উৎসর্গ করা হল নির্যাতিতাকে। মোমের স্নিগ্ধ আলো নিভে তখন সারি সারি মুঠোফোন জ্বলছে। আর তাই দেখে উপস্থিত মৃতার মা-বাবার গলা আবেগে কাঁপছে। তাঁদের আর্জি, এই প্রতিবাদের আগুন যেন না নেভে। তাঁরা কৃতজ্ঞ, এক সন্তানকে হারিয়ে লক্ষ সন্তানের জনক-জননী হয় উঠেছেন তাঁরা।
শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ে ঋতুপর্ণা জমায়েতে উপস্থিত হয়ে বলেন, ‘‘এত মানুষের প্রতিবাদ বৃথা যাবে না। আমি সুবিচারের আশায় রয়েছি।’’ একই সঙ্গে অভিনেত্রী জানান, কোচবিহারের মাথাভাঙায় আন্দোলনকারীদের উপর আক্রমণ তিনি সমর্থন করেন না। তবে কিছু ক্ষণ পরেই আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন অভিনেত্রী। তাঁর উদ্দেশে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান দেওয়া হয়। চার পাশ থেকে উলুধ্বনি এবং শঙ্খ বাজিয়ে ব্যঙ্গ করা হয় অভিনেত্রীকে। কিছু ক্ষণ পর গাড়িতে উঠে শ্যামবাজার ছেড়ে বেরিয়ে যেতে বাধ্য হন ঋতুপর্ণা।
অন্য দিকে, দক্ষিণ কলকাতায় সন্ধ্যা থেকেই রাস্তায় জমায়েত বড় হতে শুরু করে। ঢাকুরিয়া, লেক গার্ডেন্স, গড়িয়া মোড়-সহ বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদে শামিল হন মানুষ। তবে সবচেয়ে বেশি ভিড় লক্ষ করা যায় যাদবপুরে ৮বি বাস স্ট্যান্ডে। সেখানে আন্দোলনকারীরা গান, কবিতা এবং নাটকের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানান। আলোচনায় উঠে আসে সুপ্রিম কোর্টে শুনানি পিছিয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গও। মোমবাতি প্রজ্বলন, ক্রমাগত স্লোগান দেওয়া থেকে শুরু করে আন্দোলনকারীদের হাতে ছিল রকমারি পোস্টার এবং হোর্ডিং। স্লোগান ছিল একটাই— ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’।
বুধবার রাতে যাদবপুরে জমায়েতে অংশ নেয় টলিপাড়ার একাংশ। উপস্থিত ছিলেন অভিনেত্রী সুদীপ্তা চক্রবর্তী, দিতিপ্রিয়া রায় প্রমুখ। গড়িয়ায় পরে এক মত্ত ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ দানা বাঁধে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হস্তক্ষেপ করে পুলিশ। রাত যত বেড়েছে, ভিড়ও পাল্লা দিয়ে বেড়েছে। প্রত্যেকেই সুপ্রিম কোর্টের পরবর্তী শুনানির দিনক্ষণ জানার অপেক্ষায় পা বাড়িয়েছেন বাড়ির দিকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy