অনিন্দ্য সেনগুপ্ত। নিজস্ব চিত্র।
রাত ১২টা ১৫ মিনিট। আইপিএলে কমেন্ট্রি শেষ করে মুম্বইয়ের রাস্তায় গাড়ি ছুটিয়ে দিলেন। চালকের আসনে অনিন্দ্য সেনগুপ্ত। কোলাবায় হোটেলে পৌঁছে ফ্রেশ হয়ে ব্যালকনিতে বসে হালকা মেজাজে ফোনালাপ শুরু হল আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে। দিনের প্রায় ১২ ঘণ্টা চলে যায় যাতায়াত আর কাজের খাতে। তবু কথায় ক্লান্তির ছাপ নেই এতটুকু।
প্রশ্ন: আইপিএল নিয়ে উত্তেজনা দেশ জুড়ে। আর টুর্নামেন্টের বাংলা ধারাভাষ্যকার মানেই টলিপাড়ার অনিন্দ্য সেনগুপ্ত।
অনিন্দ্য: এত বছর অ্যাঙ্করিং করছি, বিশেষ ফারাক মনে হয়নি। তবে লাইভ ম্যাচের ক্ষেত্রে সারা ক্ষণ তৎপর থাকতে হয়। প্রি-শো অ্যাঙ্করিং করি। তার পরে কুড়ি-কুড়ি ওভারে প্রায় ১৬ ওভার কমেন্ট্রি করি। শ্বাস নেওয়ার সময় থাকে না। হা হা…
প্রশ্ন: কমেন্ট্রি বক্সের অন্দরের কাহিনি শোনান…
অনিন্দ্য: এখানে সকলে খুব পেশাদার। পাশাপাশি, বন্ধুবৎসলও। খুব ভাল কাজের পরিবেশ এখানে। কিছু পরিসংখ্যান মাথায় রাখতে হয়। কমেন্ট্রি করার সময় পুরনো তথ্য রেফার করতে হয়। খেলা দেখার মোটামুটি অভ্যাস থাকার দরুন খুব একটা অসুবিধা হয় না। যাঁরা নেপথ্যে রয়েছেন, যেমন সম্পাদক, প্রযোজক, ভিএফএক্স আর্টিস্ট, প্রত্যেকেই ভীষণ পরিশ্রমী। ধারাভাষ্যকার হিসেবে যদি আমাকে দর্শকের ভাল লাগে, তার ৫০ শতাংশ কৃতিত্ব এই নেপথ্যে থাকা মানুষের প্রাপ্য। তা ছাড়া মালয়ালম, গুজরাতি ধারাভাষ্যকার ও প্রযোজকদের সঙ্গে আলাপ হল।
প্রশ্ন: শাহরুখ খানের একনিষ্ঠ ভক্ত আপনি। আইপিএলের দৌলতে সাক্ষাৎ হয়েছে?
অনিন্দ্য: নাহ্। এখনও পর্যন্ত তাঁর সান্নিধ্য পাইনি। আশা করি, দেখা হবে।
প্রশ্ন: মায়ানগরীতে নৈশযাপন আকর্ষণীয়, কতটা উপভোগ করছেন?
অনিন্দ্য: দেখুন, আমার এখানে রাত্রে পার্টি করার ব্যাপার নেই। মূলত রাত পর্যন্ত কাজ থাকে। তা ছাড়া, শরীরচর্চায় আমি বিশেষ ভাবে মনোযোগী। তাই পর্যাপ্ত ঘুম জরুরি আমার কাছে। অন্যদের জীবনযাপন নিয়ে সমালোচনা করছি না। তবে, আমি একটা নিয়মানুবর্তিতার মধ্যে থাকতে ভালবাসি। আর এটা আমার স্বতস্ফূর্ত ভাবেই আসে।
প্রশ্ন: যৌবনে কাজ-সর্বস্ব জীবন কাটছে?
অনিন্দ্য: আমার তো ২১ বছর বয়স নয় এখন! শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবন কাটাতে আমাকে কেউ বাধ্য করেনি। আমার কাজের সুবিধার্থে আমি এটা মেনে চলি। তবে মাঝেমধ্যে আমিও আমোদ করি। বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে যাওয়া, কালেভদ্রে রাত্রে পার্টি চলতেই পারে। রসবোধ না থাকলে আমি শিল্পী হব কী ভাবে? কখনও বাড়িতে পাখার দিকে তাকিয়ে বা জানালার দিকে তাকিয়ে সময় কাটিয়ে ফেলি।
প্রশ্ন: সম্প্রতি এক বাঙালি মহিলা ইউটিউবার আইপিএলে কমেন্ট্রি করে ট্রোলের মুখে পড়েছেন। সমাজমাধ্যমে ফলোয়ারের সংখ্যাই শেষ কথা? কাজে দক্ষ হওয়ার প্রয়োজনীয়তা কি কমে যাচ্ছে?
অনিন্দ্য: ও যে দিন এসেছিল, সে দিন আমি কমেন্ট্রি বক্সেই ছিলাম। সত্যি কথা বলতে, ও এক বারও নিজেকে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ বা ধারাভাষ্যকার হিসেবে দাবি করেনি। ওকে সমাজমাধ্যম প্রভাবী হিসেবেই নিয়ে আসা হয়েছিল। যাতে আরও দর্শকের সঙ্গে জুড়ে থাকা যায়।
প্রশ্ন: শুধুমাত্র ব্যবসার নিরিখে ভাবতে গিয়ে শিল্পের মান পড়ে যাচ্ছে?
অনিন্দ্য: এই বিষয়ে কোনও সমর্থন বা বিরোধিতার জায়গায় নেই আমি। কাজের বিনিময়ে আমি পারিশ্রমিক পাচ্ছি। আমি চাই, আমার পেশায় উন্নতি হোক। কিন্তু কী জানেন তো, অনেক সময় জীবিকার পরিপ্রেক্ষিতে কিছু কাজ করতেই হয়, যা হয়তো আমি নিজেও পুরোপুরি চাইছি না। তবে এটাও ঠিক, সব সময় চাপ দেওয়া হয় না। সে ক্ষেত্রে প্রযোজকের সঙ্গে মধ্যস্থতা করে নিতে হয়। আর নির্মাতাদের কাছে সব সময় স্পষ্ট ধারণা থাকে না, দর্শক কোনটা পছন্দ করবে কোনটা করবে না। প্রতিটি শোয়ের নেপথ্যে নির্মাতাদের গবেষণা থাকে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে ব্যবসার আগে শিল্পকে রাখব। আমি শিল্পকে মাথায় রেখেই ব্যবসা করছি। ভাল ঘড়ি পরতে ভাল লাগে, ভাল খেতে পছন্দ করি। তাই আমার শিল্পের মাধ্যমে উপার্জন করছি আমি। তাই বলে শুধুই টাকার জন্য করছি, এমনটাও নয়।
প্রশ্ন: যে হেতু খেলা সংক্রান্ত বিষয়, একটা চিরাচরিত ভাবনা রয়েছে যে মহিলাদের তুলনায় পুরুষ বেশি ওয়াকিবহাল। কমেন্ট্রি বক্সেও কি পুরুষদের আধিপত্য রয়েছে?
অনিন্দ্য: আমি স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, আমাদের বাংলার আদর্শ ঝুলন গোস্বামী কিন্তু মহিলা। তা ছাড়া আমার সহ-ধারাভাষ্যকারও কিন্তু এক জন মহিলা। তাঁরা নিজেদের যোগ্যতায় সেই জায়গাটা অর্জন করেছেন। এটা বলা বাহুল্য, দুর্ভাগ্যবশত পুরো পৃথিবী জুড়েই পুরুষদের আধিপত্য রয়েছে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই জায়গা থেকে অনেকটা উন্নত হয়েছে আমাদের সমাজ। তবে পুরোপুরি ভাবে এক লহমায় এটা ছেঁটে ফেলা সম্ভব নয়। মানসিকতায় বদল আনার লড়াইটা চালিয়ে যেতে হবে।
প্রশ্ন: মুম্বই ইন্ডাস্ট্রিতে যোগাযোগ হয়েছে?
অনিন্দ্য: বিশেষ অবকাশ পাই না। তবে তার মধ্যেই চেষ্টা চালাচ্ছি। এখানে থাকাকালীন একটা কাজ নিয়ে কথা হয়েছে। হিন্দি ভাষায় কণ্ঠ দেওয়ার কথাবার্তা চলছে। আসলে আমি কাজ পাওয়ার জন্য নিজেকে নিয়ে বলতে পারি না। সৌভাগ্যবশত এখনও পর্যন্ত বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে যা যা কাজ করেছি, সেগুলো আমার কাছে এসেছে। আমাকে গিয়ে কাজ চাইতে হয়নি। নিজেকে নিয়ে বলতে ইতস্তত বোধ করি। পরিচালক বা প্রযোজকদের “দেখো আমি কী ভাল কাজ করছি” বলতে সঙ্কোচ হয়। সেই কারণেই অনেকের পরামর্শে সম্প্রতি এজেন্সির সঙ্গে যুক্ত হয়েছি।
প্রশ্ন: মুম্বই ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করার তাড়া, না কি বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে আরও পাকাপাকি ভাবে জায়গা করে নেওয়ার পরিকল্পনা?
অনিন্দ্য: এ ভাবে ভেবে দেখিনি আসলে। হিন্দি তো বটেই, দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রিতে সুযোগ পেলে লুফে নেব আমি। কমল হাসন আমার অত্যন্ত পছন্দের অভিনেতা। তবে বাংলায় কাজ করে যাওয়ার একটা প্রবণতা রয়েছে আমার মধ্যে। অন্য ভাষায় কাজ করে পুনরায় নিজের ভাষায় ফিরে যেতে চাই। কিন্তু একটা কথা বলে রাখি, এই মুহূর্তে সচেতন ভাবেই সেই প্রচেষ্টা করছি না।
প্রশ্ন: অনিন্দ্য আইপিএলে কোন দলের সমর্থক?
অনিন্দ্য: আমি নিয়মিত ফুটবল দেখি। সুতরাং ক্রিকেট নিয়ে অত উত্তেজনা নেই। তবে কলকাতা নাইট রাইডার্সকে তালিকায় প্রথম স্থানে রাখব, যে হেতু কলকাতার সঙ্গে যোগসূত্র রয়েছে। মহেন্দ্র সিংহ ধোনি অন্যতম পছন্দের ক্রিকেটার। তাই চেন্নাই সুপার কিংস দ্বিতীয়। আর বিরাট কোহলির জন্য রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। ফুটবলে যেমন নির্দিষ্ট দলের সমর্থক আমি। ক্রিকেটের ক্ষেত্রে ওই মরিয়া ব্যাপারটা নেই আমার।
প্রশ্ন: সম্প্রতি বিচ্ছেদ হয়েছে। বর্তমানে প্রেমিক না সিঙ্গল?
অনিন্দ্য: নাহ্। এখন প্রেম করছি না। কোনও সম্পর্ক নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy