অষ্টমীর সাজে ঊষসী রায়
‘নো মাস্ক, নো এন্ট্রি’। অর্থাৎ মাস্ক ছাড়া প্রবেশ নিষেধ। অগত্যা মুখে মাস্ক পরে তিনি প্রবেশ করলেন অক্টোবরের ঝলমলে সকালে বালিগঞ্জের ‘সিমা আর্ট গ্যালারি’-তে। তিনি— ঊষসী রায়। দর্শকের ‘কাদম্বিনী’।
উদ্দেশ্য? পুজোর শপিং! সারা বছর শ্যুটের কাজ। জামাকাপড় হাতে ছুঁয়ে ঘুরে ঘুরে দেখার ফুরসৎ কোথায়! তবুও সময় বার করেছেন ‘কাদম্বিনী’। পুজোর চারটে দিন নিজের জন্য কী করবেন? কী পরবেন? খুলে বললেন আনন্দবাজার ডিজিটালকে।
গ্যলারিতে পা রাখামাত্রই উচ্ছ্বসিত ঊষসী । সেখানে এখন 'আর্ট ইন লাইফ' শীর্ষক প্রদর্শনী চলছে। কোনদিক থেকে শুরু করবেন ঠিক করে উঠতে পারছিলেন না। পরে এক্কেবারে কাদম্বিনী সুলভ বুদ্ধিতে দিন ভাগ করে ছকে নিলেন কোনদিন কেমন শাড়ি পরবেন। শুরু হল বাছাইপর্ব। এই অতিমারিতে জীবন ঢেকেছে দুশ্চিন্তার অন্ধকারে। পুজোর শুরুটা তাই উজ্জ্বল হোক, এমনটাই চান ঊষসী । পোশাকেও সেই ছাপ রাখতে চেয়ে ষষ্ঠীর জন্য বেছে নিলেন গাঢ় কমলা এবং গোলাপি রঙের হাতে বোনা একটি সাউথ ইন্ডিয়ান সিল্ক (দাম ৩৮,৯৫০ টাকা)। প্রসঙ্গত, এই গ্যালারির সব শাড়ি কারিগররা নিজের হাতে বোনেন। যন্ত্র ব্যবহার করা হয় না। ওড়িশা থেকে তামিলনাড়ু, মণিপুর থেকে গুজরাট- সারা ভারতবর্ষ এক ছাদের তলায়। এর পরেই ‘কাদম্বিনীর’ নজর দক্ষিণ থেকে সোজা উত্তর-পূর্বে। দেখতে দেখতে তাঁর আঙুল গিয়ে থামল ধূসর জমির উপর লাল রঙের কাজ করা মণিপুরি শাড়িতে (দাম ২৭, ৯৭৫ টাকা)।
নিজের জন্য পছন্দসই শাড়ি বেছে নিলেন ঊষসী রায়
হঠাৎ এত হাল্কা রঙের শাড়ি? অভিনেত্রীর যুক্তি, “ষষ্ঠীতে এত রংচঙে শাড়ি পড়ার পর সপ্তমীতে একটু হাল্কা রঙের শাড়ি পরব।” মাত্র মিনিট ১৫-র মধ্যেই দু’দিনের শাড়ি বেছে ফেললেন তিনি। তবে শপিংয়ের আনন্দ মাঝে মাঝেই যেন থেমে যাচ্ছিল। কী যেন ভাবছিলেন অভিনেত্রী! সে প্রসঙ্গ টানতেই ঝরে পড়ল মন খারাপের সুর, “প্রত্যেক বছর পুজোয় বেড়াতে যাই। এ বার আর সে সব হবে না। কলকাতাতেই থাকব। বন্ধু এবং কাছের মানুষদের সঙ্গে চারটে দিন আনন্দ করব। চারদিকে কেমন এক ভয়ের বাতাবরণও আছে।’’
শাড়ির জৌলুস আবার ভুলিয়ে দিল তাঁকে। কলকাতায় থাকছেন। তাই এ বছর অষ্টমীর সকালে পুষ্পাঞ্জলি দেবেন ঊষসী। কী পরবেন সে দিন? ঘিয়ে রঙা দুধে আলতা সাউথ ইন্ডিয়ান জামদানিতে (দাম ৫৯,৯৫০ টাকা) তাক লাগাতে চলেছেন ঊষসী। তাঁর কথায়, “অষ্টমীর সকালের জন্য এর থেকে ভাল কম্বিনেশন আর কিছু হতেই পারে না!” পুজোর চারটে দিনই কি ‘কাদম্বীনি’কে শাড়িতে দেখা যাবে? তাঁর কথায়, “বছরের অন্য সময় খুব একটা শাড়ি পরা হয় না। ক্যাজুয়াল ড্রেসই পরতে হয়। এই চারটে দিন শাড়ি পরার লোভ কী ভাবে সামলাই” !
কথা শেষ না হতেই দ্রুত পায়ে তিনি এগিয়ে গেলেন গ্যালারির অন্য প্রান্তে। অনেকগুলো শাড়ির মধ্যে থেকে বার করে আনলেন কালো রঙের একটি বেনারসি। সারা গায়ে সোনালি রঙের হাতের কাজ (দাম ১৯,৯৫০ টাকা)। তার পর সেটা নিয়ে সোজা আয়নার সামনে। শাড়িটা গায়ে জড়িয়ে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন নিজের দিকে। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ভাল করে দেখে নিলেন বার বার। তারপরেই ঘোষণা, “এটাই পরব অষ্টমীর রাতে। একটু গর্জাস শাড়ি না পরলে চলে নাকি!”
এ তো গেল শাড়ি! সঙ্গে চাই মানানসই গয়নাও। তার ঠিকানাও ‘সিমা আর্ট গ্যালারি’। শাড়ির দিক থেকে অভিনেত্রী হাঁটা দিলেন গয়নার দিকে। চোখ আটকে গেল রাজস্থানি বালায়। সোনালি রঙের ফুলের ডিজাইন করা সেই বালা হাতে গলিয়ে নিলেন ঊষসী। পছন্দ করলেন এক জোড়া কানের দুল। তারপর প্রশ্ন, “বেনারসির সঙ্গে একটু গয়না না হলে ভাল লাগে?” উত্তরের অপেক্ষা না করেই ফাইনাল করলেন বেনারসির সঙ্গিনীকে। রাজস্থানি শিল্পীদের তৈরি গয়নাজোড়া। তার পরেও মনে সংশয়। কী যেন একটা নেই! একটু ভেবে স্বগতোক্তি, ‘‘একটা ভাল ব্যাগ লাগবে তো! না হলে সাজটা কমপ্লিট হবে না।” গয়নার সেকশন থেকে বেরিয়ে চলে এলেন ব্যাগ পছন্দ করতে। বেনারসির পাড়ের সঙ্গে মিলিয়ে গোলাপি রঙের হাতে তৈরি বটুয়া তুলে নিলেন। ব্যস! অষ্টমীর সাজ ‘কমপ্লিট’।
শাড়ি খুঁজতে ব্যস্ত ঊষসী
এরপর নবমীর জন্য সবুজ রঙা সুতির শাড়ি (দাম ২,৯৭৫ টাকা) নজর কাড়ল ‘কাদম্বিনী’র। সহজভাবে বলে উঠলেন, “ওই চরিত্রে অভিনয় করতে করতে করতে আমি নিজেই যেন কাদম্বিনী হয়ে উঠেছি। আমার অনেক পছন্দ-অপছন্দ এখন কাদম্বিনীর সঙ্গে মিলে যায়।” কিছুটা এগিয়ে একটা শাড়ি তুলে নিলেন হাতে। ফোন বার করে দেখালেন একটা ছবি। সেখানে তাঁকে দেখা যাচ্ছে ‘কাদম্বিনী’ বেশে। হাতে ধরা শাড়ির সঙ্গে ছবিতে নায়িকার পরনের শাড়ির ডিজাইনে হুবহু মিল। মৃদু হেসে বললেন, “কাদম্বিনী শেষ হলেও আমার মধ্যে সে থেকে গিয়েছে।”
কিছুটা হাল্কা মেজাজে ফিরলেন অভিনেত্রী। ডেটিংয়ে গেলে কী পরবেন? মুখে কথা নেই। হাল্কা গোলাপি রঙের একটি হাঁটুঝুল ওয়ান পিস দেখিয়ে হাসলেন। উৎসবে যতই শাড়ি হোক, ডেটিংয়ের সময় হাল্কা সাজেই ধরা দিতে চান ঊষসী। তখন তিনি আর ‘কাদম্বিনী’ নন। কখনও ঘুরে ঘুরে সাধের বাড়ির জন্য দেখলেন আসবাব, আবার কখনও পছন্দসই স্কার্ফ হাতে নিয়ে ভাল করে চোখ বুলিয়ে নিলেন। ‘সিমা’-র সম্ভার থেকে বেরোতেই পারছিলেন না তিনি!
মাত্র ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই পুজোরা কেনাকাটা সেরে ফেললেন ঊষসী। তাঁর কথায়, ‘‘সব জিনিসই এত সুন্দর, পছন্দ হতে বেশি সময় লাগছে না।’’ ফিরে যাওয়ার আগেই ঠিক করে ফেললনে ফিরে আসার দিন।
ছবি ও ভিডিয়ো সৌজন্যে: অমিত দত্ত এবং অঙ্কিত দত্ত
আরও পড়ুন: ‘রুচি’ নিয়ে টুইটে বিতণ্ডায় বাংলার ২ পরিচালক সুমন ও সৃজিত
আরও পড়ুন: গর্ভপাত, অন্য নায়িকার সঙ্গে বলি নায়ক স্বামীর প্রেম, বোনের বিয়ে বাঁচাতে পারেননি সলমনও
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy