পূজা বন্দ্যোপাধ্যায়।
গত ৪ জুন ‘হইচই’ প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পেয়েছে ‘পাপ’-এর দ্বিতীয় সিজন। তবে ইতিমধ্যেই কলকাতা ছেড়ে আরব সাগরের তীরে মায়ানগরীতে ফিরে গিয়েছেন অভিনেত্রী পূজা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত মার্চে এই ওয়েব সিরিজের শ্যুটিংয়ের জন্য পুত্র কৃশিবকে নিয়ে দীর্ঘদিন পর শহরে ফিরেছিলেন তিনি। মা হওয়ার পর প্রথম কাজ। কেমন ছিল অতিমারিতে শ্যুটিংয়ের অভিজ্ঞতা? টলিউড কতটা বদলেছে তাঁর চোখে? মধ্যাহ্নভোজ সেরে মুম্বই থেকে আনন্দবাজার ডিজিটালের সঙ্গে ফোনে আড্ডা জুড়লেন অভিনেত্রী।
প্রশ্ন: অভিনেত্রী থেকে মা। কেমন লাগছে জীবনের নতুন অধ্যায়?
পূজা: আমি আগাগোড়াই নিজের সংসার চেয়েছিলাম, সন্তান চেয়েছিলাম। দুটোই পেয়েছি। ঈশ্বরের থেকে আমার আর কিছু চাওয়ার নেই। অক্টোবর মাসে কৃশিব আসার পর থেকে নিজেকে সম্পূর্ণ মনে হচ্ছে। জীবনে আর কিছু চাই না। অনেকেই বলে, অভিনেত্রীদের মা হতে নেই, চেহারা নষ্ট হয়ে যায়। আমি এগুলো কখনওই বিশ্বাস করি না।
প্রশ্ন: মা হওয়ার পর শারীরিক গঠনে পরিবর্তনের জন্য শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায় কিন্তু ট্রোলড হয়েছেন…
পূজা: আমার সে রকম কোনও অভিজ্ঞতা হয়নি। কেউ কেউ বলেছেন, আগের থেকে ওজন বেড়েছে। কিন্তু এ ধরনের কথা আমি খুব একটা গায়ে মাখি না। আমি ব্রেস্টফিড করাই। আমার সন্তানকে সুস্থ রাখতে গেলে আমাকেও ভাল করে খাওয়াদাওয়া করতে হবে। তাই শুধু মাত্র নিজের চেহারার গঠনের কথা ভাবলে আমার চলবে না। তবে আমি অনেকটাই ওজন কমিয়ে ফেলেছি। আশা করি আরও কিছুটা পারব।
প্রশ্ন: সবাই তো কলকাতা থেকে মুম্বই যেতে চান। আপনার ক্ষেত্রে বিষয়টা উল্টো কেন?
পূজা: (কিছুটা হেসে) এর মূল কারণ আমার মা এবং বাবা। ওঁদের ইচ্ছা আমি বাংলা ছবি করি। টলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে থাকি। যতই হোক বাঙালি তো! পাশাপাশি আমারও ভাল লাগে এই শহরে কাজ করতে। তাই ফিরে ফিরে আসা।
প্রশ্ন: দেব, সোহম এবং হিরণ, টলিউডে আপনার ৩ নায়ক এখন সক্রিয় রাজনীতিবিদ…
পূজা: হ্যাঁ। এই দুঃসময়ে ওদের মানুষের পাশে থাকতে দেখে খুব ভাল লাগছে। কিছুদিন আগেই আমার এক বন্ধুর মা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। সাহায্যের জন্য কিন্তু সবার আগে দেবের কথাই আমার মাথায় এসেছিল। ওকে ফোন করতেই সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসে। যত রকম চেষ্টা করা যায়, সব কিছু করেছে। ‘চ্যালেঞ্জ ২’-এর সময় তৈরি হওয়া সেই বন্ধুত্ব এখনও রয়ে গিয়েছে।
প্রশ্ন: নায়িকাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব নেই?
পূজা: নায়িকাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করার সুযোগই পাইনি কখনও। তবে প্রত্যেককেই আমার খুব ভাল লাগে। আমার যে বন্ধুর মায়ের কথা বললাম, তাঁর জন্য অঙ্কুশ এবং ঐন্দ্রিলাও খুব সাহায্য করেছে আমাকে। এক বার সারা রাত আমার সঙ্গে ঐন্দ্রিলা জেগেছিল। বার বার আমার বন্ধুর মায়ের খোঁজ নিচ্ছিল। ওর এই আন্তরিকতা আমার খুব ভাল লেগেছে।
প্রশ্ন: অভিনেত্রী হিসেবে খোলামেলা দৃশ্যে আপনি কতটা স্বচ্ছন্দ?
পূজা: (কিছুটা ভেবে) আমি নিজে খোলামেলা দৃশ্যে অভিনয় করতে খুব একটা স্বচ্ছন্দ বোধ করি না। কিন্তু আমি মনে করি, চিত্রনাট্যের প্রয়োজনে খোলামেলা দৃশ্যে অভিনয়ে আপত্তি থাকা উচিত নয়। কিন্তু জোর করে যদি সাহসী দৃশ্য দেখানোর চেষ্টা করা হয়, সেটা আমার চোখে ভুল। আমি এক সময় পার্বতীর চরিত্রে অভিনয় করেছি। মানুষজন রাস্তাঘাটে আমাকে দেখে প্রণাম করেছে। আবার বাংলা ছবিতে আইটেম গানেও আমি নেচেছি। অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে নতুন করে প্রমাণ করতে আমার খোলামেলা দৃশ্যের খুব একটা প্রয়োজন আছে বলে আর মনে হয় না।
প্রশ্ন: বিভিন্ন ধরনের চরিত্রে সাফল্যের পরেও বাণিজ্যিক ছবির বাইরে আপনাকে দেখা যায় না কেন?
পূজা: বিশ্বাস করুন, এই প্রশ্নটা আমাকেও খুব ভাবায়। চেষ্টা করিনি, তেমন কিন্তু নয়। একটু অন্য রকম ছবি করার আশা নিয়ে একাধিক বার অডিশন দিতে গিয়েছি। বহু বার বলা হয়েছে, আমাকে বেশি সুন্দর দেখতে বলে ওই ধরনের ছবিতে আমায় মানাবে না। আচ্ছা, এ রকম দেখতে হওয়াটা কি আমার দোষ? আমি যে অভিনয় করতে পারি, সেটা প্রমাণ করার সুযোগটুকুই দেওয়া হয়নি। মাঝে মধ্যে মনে হয় ‘চ্যালেঞ্জ ২’-তে কী করেছি! শুধু সুন্দর সাজগোজ করে ছবির একটা অংশ হয়েছিলাম।
প্রশ্ন: আপনি মনে করেন বাণিজ্যিক ছবিতে ভাল অভিনয় অপ্রয়োজনীয়?
পূজা: আমি মনে না করলেও অনেকেই এটা বিশ্বাস করেন। আমি আশা করছি ‘পাপ’ দেখার পর অন্তত আমাকে নিয়ে এই ভুল ধারণাটা ভাঙবে। তখন প্রযোজক, পরিচালকরা আমার সঙ্গে অন্য ধরনের ছবিতেও কাজ করতে চাইবেন।
প্রশ্ন: আপনি কোন পরিচালকের ডাকের অপেক্ষায়?
পূজা: এ ভাবে একটা নাম বলা খুব মুশকিল। সৃজিতদা (মুখোপাধ্যায়), কৌশিকদা (গঙ্গোপাধ্যায়), ইন্দ্রদীপদা (দাশগুপ্ত)— এঁরা প্রত্যেকেই দারুণ কাজ করেন। এঁদের সঙ্গে কাজের সুযোগ পেলে খুব ভাল লাগবে।
প্রশ্ন: কাজের জন্য এত অডিশন দিয়েছেন। কাস্টিং কাউচের অভিজ্ঞতা হয়েছে?
পূজা: হ্যাঁ। হয়েছে। একাধিকবার। তবে টলিউডে নয়। বলিউড এবং দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রিতে। কিন্তু আমি কখনওই কোনও অন্যায় আবদারকে প্রশ্রয় দিইনি। ভাল কাজ করার জন্য কারও শয্যাসঙ্গিনী হতে পারব না। এমন অনেককেই চিনি যাঁরা কাজ পাওয়ার আশায় ভুল পথে হেঁটেছেন। কিন্তু শেষমেশ কাজ না পেয়ে ‘মিটু’ অভিযোগ এনেছেন। মেয়েরা মুখ বুজে অন্যায় মেনে নেয় বলেই এই ধরনের শোষণ করার সাহস পায় কিছু মানুষ। প্রতিবাদ করতে শুরু করলেই ছবিটা কিছুটা হলেও বদলাবে।
প্রশ্ন: তার মানে আপনার কাজ হাতছাড়া হওয়ার কোনও আফসোস নেই…
পূজা: না। আমি কখনওই প্রতিযোগিতায় বিশ্বাসী নই। আমি যা পেয়েছি, তা নিয়েই খুব খুশি। আর কৃশিবকে পাওয়ার পর জীবনের সব চাওয়াই পূর্ণ হয়ে গিয়েছে বলে মনে হয়। তাই পাওয়া-না পাওয়ার হিসেব করতে যাই না আর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy