রায়দিঘির সভায় মমতা। নিজস্ব চিত্র।
নন্দীগ্রামে ভোটের সময় কেন্দ্রীয় বাহিনীর মদতে বিজেপি-র গুন্ডারা বাড়ির মেয়ে এবং শিশুদের অপহরণ করার ভয় দেখিয়েছে বলে অভিযোগ করলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর নাম না করে তাঁর অভিযোগ, বিধানসভা ভোটের আগে গুন্ডা আমদানি করতেই বাংলাদেশ সফরে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। শনিবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার রায়দিঘির সভায় তাঁর মন্তব্য, ‘‘বিজেপি থেকে সাবধান, ওদের হাতে আছে স্টেনগান।’’
রায়দিঘির তৃণমূল প্রার্থী অলক জলাদাতার সমর্থনে স্টেডিয়াম মাঠে আয়োজিত সভায় মমতা বলেন, ‘‘গত পরশু দিন নন্দীগ্রামে গিয়েছি একটা গ্রামে। রবীন মান্নার বউ আমাকে বলছে, ‘দিদি, আমার মেয়েকে বলছে তুলে নিয়ে যাবে। দিদি আমার বাচ্চাটাকে বলছে বাচ্চাটাকে কিডন্যাপ করবে। আমি বললাম তোমরা আছ কোথায়?’’ মমতার দাবি, বিজেপি-র বহিরাগত গুন্ডাদের ভয়ে ওই মহিলাকে স্থানীয় একটি সংখ্যালঘু পরিবারের কাছে আশ্রয় নিতে হয়েছে। প্রসঙ্গত, গত ১ এপ্রিল দ্বিতীয় দফার বিধানসভা ভোটের সময় নন্দীগ্রামের বয়াল-২ পঞ্চায়েত এলাকায় বিজেপি-র সঙ্গে সংঘর্ষে গুরুতর আহত হয়েছিলেন তৃণমূল কর্মী রবিন।
আগামী ৬ এপ্রিল তৃতীয় দফায় ভোটগ্রহণ হবে রায়দিঘিতে। শনিবার সেখানকার ভোটদাতাদের উদ্দেশে মমতার সতর্কবাণী, ‘‘ভোটের ৪৮ ঘণ্টা আগে থেকে ওরা দিল্লির পুলিশ নিয়ে গিয়ে ‘থ্রেট টেট (হুমকি) করবে। ভয় পাবেন না। চুপচাপ বলবেন, ঠিক আছে আছে। আর নিজের ভোটটা নিজে সকাল সকাল গিয়ে দিয়ে আসবেন।’’ পাশাপাশি তাঁর পরামর্শ, ‘‘ভিতরে যদি পুলিশের লোকগুলো গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। বলবে, ‘ইউ আর আউটসাইডার’। তুমি পুলিশের লোক, সিআরপিএফ, তুমি বাইরে দাঁড়াও। ভোটকেন্দ্রের বাইরে দাঁড়াও। তুমি ‘ইনসাইড দি বুথ’ দেখতে পাবে না কে ভোট দিচ্ছে।’’
ভোটের আগে সীমান্ত এলাকার গ্রামে গ্রামে ভয় দেখানো হবে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। এরপরই মোদীর নাম না করে মমতার মন্তব্য, ‘‘যার জন্য উনি বাংলাদেশ ঘুরে এসছেন। ওখান থেকেও মনে হয় কিছু আমদানি করছেন। করতেই পারেন। তার কারণ হচ্ছে, অন্য সময় বলে মমতা অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে আসছে। আর ইলেকশনের সময় ভোট চাইতে গিয়েছে। গুন্ডা আমদানি করতে গিয়েছে।’’
শনিবারের সভায় মমতা বলেন, ‘‘যদি ৬ এপ্রিল খেলা হয়, তাহলে একটা ভোট তৃণমূলে দিন। তৃণমূল মানে জোড়া ফুল। আর ওদেরটা (বিজেপি) কি! ওটা পুজোর ফুল নয়। ওটা ছদ্মবেশী পচা ফুল। আসছে দিন বিজেপি-কে বোল্ড আউট করে দিন। বলুন বিজেপি ‘গেট লস্ট’, ওটা পচা, ওটা বাংলা দখল করতে চায়।’’
সভামঞ্চ থেকে নাম না করে, মিম’ প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়েইসি এবং ফুরফুরা শরিফের পিরজাদা তথা ইন্ডিয়ান সেকুলার ফন্ট-এর প্রতিষ্ঠাতা আব্বাস সিদ্দিকিকেও মমতা। আব্বাস এবং হায়দ্রাবাদের সাংসদ আসাদউদ্দিন ওয়েইসির সঙ্গে বিজেপির গাঁটছড়া রয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘হায়দ্রাবাদ থেকে বিজেপির এক বন্ধু এসেছে, ফুরফুরা শরিফের একটা চ্যাংড়াকে নিয়ে কয়েক কোটি টাকা খরচ করে কমিউনাল স্লোগান দিচ্ছে। আর হিন্দু-মুসলমান ভাগ করার চেষ্টা করছে। ওদেরকে একটা ভোটও দেবেন না। ওদের একটা ভোট দেওয়া মানে বিজেপি-কে দেওয়া।’’
ভোটের আগে দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানা এবং গোসাবার সভা থেকে সুন্দরবন এবং গঙ্গাসগরের জন্য ঢালাও উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি শোনা গিয়েছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের মুখে। একই ভাবে এদিন রায়দিঘি থেকে সুন্দরবনের উন্নয়নকেই হাতিয়ার করে ভোট চেয়েছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘আমরা উন্নয়নের উপর ভোট চাইছি। আগে সুন্দরবন এলাকায় কেউ আসত না। কেউ তাকিয়ে দেখত না। এখন গঙ্গাসাগর থেকে শুরু করে বকখালি, সজনেখালি, পাখিরালয়, কাকদ্বীপ সব জায়গায় উন্নয়ন হয়েছে। উন্নয়ন চাইলে আরও উন্নয়ন করে দেওয়া হবে।’’
এ দিনের সভায় তৃণমূল কর্মী সমর্থকদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত। এদিন ১১টা নাগাদ হেলিকপ্টারে রায়দিঘি উড়ে আসেন মমতা। তারপর স্টেডিয়াম মাঠে সভায় যোগ দেন। সভা সেরে আবার হেলিকপ্টারে কুলপিতে উড়ে যান তিনি। সেখানে তৃণমূল প্রার্থী যোগরঞ্জন হালদারের সমর্থনে সভা করেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy