Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
West Bengal Assembly Election 2021

West Bengal Polls 2021 : বিজেপি-তে যোগদান নিয়ে দোটানায় সোমেনের স্ত্রী প্রাক্তন বিধায়ক শিখা

আজীবন কংগ্রেস রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকা মিত্র পরিবার তাই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে গিয়ে খানিক দোলাচল এবং বিড়ম্বনায় পড়েছে।

প্রাক্তন বিধায়ক সোমেন-জায়া শিখা মিত্র, ও তাঁর পুত্র রোহন।

প্রাক্তন বিধায়ক সোমেন-জায়া শিখা মিত্র, ও তাঁর পুত্র রোহন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০২১ ১৪:২৪
Share: Save:

বিজেপি-তে যোগদান নিয়ে এখনও কোনও পাকাপাকি সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি সোমেন মিত্রের স্ত্রী তথা প্রাক্তন বিধায়ক শিখা মিত্র। তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্রে এমনই জানা গিয়েছে। পুরো বিষয়টি নিয়ে মিত্র পরিবার এখনও দোটানায়। গত রবিবার বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী শিখার সঙ্গে দেখা করতে তাঁর বাসভবনে যান। সেখানেই দীর্ঘক্ষণ আলোচনা হয় দু’জনের মধ্যে। আলোচনা পর্বেই শুভেন্দু সোমেন-পত্নী ও পুত্র রোহনকে প্রস্তাব দেন বিজেপি-তে যোগদান করার। যদিও সেই প্রস্তাব বহু আগে থেকেই মিত্র পরিবারের কাছে ছিল বলে জানা গিয়েছে। সূত্রের খবর, মিত্র পরিবারের এক সদস্যকে চৌরঙ্গি বিধানসভা আসন থেকে প্রার্থী করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে রাজ্য বিজেপি-র পক্ষ থেকে। কিন্তু এমন প্রস্তাব পেয়েও এখনই কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে নারাজ তারা।

সোমেন-তনয় রোহন বলেছেন, ‘‘কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব এসেছে ঠিকই। শুভেন্দু’দা আমাদের বাড়িতে সেই প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু আমি বা মা— কেউই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত নিইনি। কারণ, কংগ্রেস ছাড়ার বিষয়টা আমাদের কাছে সহজ নয়। কংগ্রেসের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘদিনের পারিবারিক সম্পর্ক। প্রস্তাব এসেছে বলেই তা গ্রহণ করতে হবে আমাদের কাছে বিষয়টা তেমন নয়।’’ শিখার ঘনিষ্ঠমহল সূত্রের খবর, বিজেপি-তে যোগদানের বিষয়ে দোটানায় রয়েছে মিত্র পরিবার। কারণ, কংগ্রেস এবং বিজেপি দু’টি সম্পূর্ণ ভিন্ন রাজনৈতিক দর্শনের দল। আজীবন কংগ্রেস রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকা মিত্র পরিবার তাই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে গিয়ে খানিক দোলাচল এবং বিড়ম্বনায় পড়েছে। তাছাড়া প্রয়াত সোমেন চিরকাল জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে বিশ্বাস রেখে চলেছিলেন। উত্তরাধিকারী হিসেবে স্ত্রী-পুত্রের দলবদল প্রয়াত নেতার সেই ভাবমূর্তিকে ধাক্কা দিতে পারে। তাই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজ হবে না বলেই মনে করছেন মিত্র পরিবারের ঘনিষ্ঠরা।

পক্ষান্তরে, কংগ্রেসের বর্তমান রাজ্যনেতৃত্বের সঙ্গে মিত্র পরিবারের সম্পর্ক তেমন ‘মসৃণ’ নয়। রোহন নিজে সংগঠনে থাকলেও তিনি প্রায়শই কংগ্রেসকে আক্রমণ করে টুইট করে থাকেন। একাধিক বার তিনি টুইটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাংসাও করেছেন। তাই তাঁর স্বাভাবিক গতিপথ তৃণমূলের দিকেই হতে পারত। কিন্তু গত দু’দিন ধরে তাঁকে এবং তাঁর মা’কে নিয়ে বিজেপি-জল্পনা শোনা যাচ্ছে। এবং তা অকারণে নয়। বিজেপি-তে গেলে মিত্র পরিবারের কাউকে টিকিট দেওয়া হতে পারে। কিন্তু তৃণমূলে গেলে টিকিট পাওয়া নিশ্চিত নয়। কারণ, তাদের প্রার্থিতালিকা ইতিমধ্যেই ঘোষিত। চৌরঙ্গিতে প্রার্থী হিসেবে প্রাক্তন বিধায়ক নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামও ঘোষণা করে হয়ে গিয়েছে। মিত্র পরিবারের ঘনিষ্ঠেরা মনে করছেন, এই পরিস্থিতিতে তাঁদের কাছে দু!টি পথ খওলা রয়েছে। এক, বিজেপি-তে যোগদান। দ্বিতীয়, এই মারকাটারি বিধানসভা নির্বাচন দূরে দাঁড়িয়ে দেখা।

প্রয়াত সোমেন আগাগোড়াই ছিলেন কংগ্রেস ঘরানার জাতীয়তাবাদী নেতা। ২০০৮ সালে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। সোমেনের সঙ্গে শিখাও যোগ দিয়েছিলেন তৃণমূলে। ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে সোমেন ফিরে আসেন কংগ্রেসে। তিনি তৃণমূলে থাকাকালীন ২০১১ সালের ভোটে চৌরঙ্গি থেকেই তৃণমূল প্রার্থী হয়েছিলেন শিখা। প্রায় ৫৭ হাজার ভোটে জেতেন তিনি। কিন্তু বছর খানেকের মধ্যেই তৃণমূল শীর্ষনেতৃত্বের সঙ্গে অবনিবনা শুরু হয় সোমেন-শিখার। ২০১৩ সালের ১ জুলাই বিধানচন্দ্র রায়ের জন্মদিনের এক অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতার কাজকর্ম নিয়ে প্রশ্ন তুলে বসেন সোমেন-জায়া। ফলস্বরূপ তাঁকে সাসপেন্ড করে তৃণমূল। তিক্ততার জোরে শেষে তৃণমূল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন সোমেন। তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দিয়ে উত্তর কলকাতা থেকে প্রার্থী হন লোকসভা ভোটে। পরাজিত হন। স্বামীর পরাজয়ের সঙ্গে সঙ্গেই তৃণমূলের বিধায়ক পদ ছেড়ে দেন শিখা। সোমেন আমৃত্যু প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি থাকলেও তার পর থেকে শিখাকে আর সক্রিয় রাজনীতিতে দেখা যায়নি। এখন আবার দলবদলের হাতছানি মিত্র পরিবারের কাছে। এখন দেখার, তাঁরা শেষপর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত নেন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE