গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
বাংলায় বিজেপির প্রার্থিতালিকা ছোটগল্পের মতো ‘শেষ হয়েও হইল না শেষ’ পর্যায়ে রয়ে গিয়েছে। এখনও বাকি চার আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, দুই আসনে প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত হলেও বাকি দু’টিতে এখনও ঐকমত্য হয়নি। বাকি রয়েছে আসানসোল, ঝাড়গ্রাম, বীরভূম এবং ডায়মন্ড হারবার আসনের প্রার্থীর নাম ঘোষণা।
বীরভূম ও আসানসোলে ভোটগ্রহণ চতুর্থ দফায়, আগামী ১৩ মে। ঝাড়গ্রামে ২৫ মে, ষষ্ঠ দফায়। ডায়মন্ড হারবারে শেষ দফায়, ১ জুন। সেই হিসাবে বীরভূম ও আসানসোলে প্রার্থীর নাম ঘোষণায় অনেকটাই দেরি হয়ে গিয়েছে। যা জানা গিয়েছে, বীরভূমে প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত হয়েছে আগেই। দলের পরিকল্পনা প্রাক্তন আইপিএস দেবাশিস ধরকে ওখানে প্রার্থী করা হবে। আবার ঝাড়গ্রামে প্রার্থী হিসাবে চূড়ান্ত হয়েছে চিকিৎসক প্রণব টুডুর নাম। এই দু’জনই রাজ্য সরকারের চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। কিন্তু প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র হাতে না আসাতেই তাঁরা বিজেপিতে যোগ দিতে পারছেন না। ফলে প্রার্থী হিসাবে নাম ঘোষণাও আটকে রয়েছে।
অতীতের ফল বিচার করলে বীরভূম বিজেপির জন্য বেশ কঠিন আসন। পর পর তিন বার এই আসন থেকে সাংসদ হয়েছেন তৃণমূলের শতাব্দী রায়। প্রতি বারই বেড়েছে জয়ের ব্যবধান। অভিনেত্রীর বদলে এখন রাজনৈতিক নেত্রী হিসাবেই বেশি পরিচিত শতাব্দী এ বারও তৃণমূলের প্রার্থী। তার বিরুদ্ধে প্রাক্তন পুলিশকর্তার নাম বিজেপি ভেবে থাকলেও তা ঘোষণা করতে পারছে না। ঝাড়গ্রামে একই অবস্থা হলেও এই আসনে বিজেপি আগে জয় পেয়েছে। তবে প্রার্থী করা হবে না বুঝে আগেই রাজনীতি থেকে দূরত্ব তৈরি করেছেন কুনার হেমব্রম। এর পরে কাকে প্রার্থী করা হবে তা নিয়ে বিজেপির অন্দরে অনেক জল্পনা ছিল। শেষ পর্যন্ত চিকিৎসক প্রণবকে বাছা হলেও, নাম ঘোষণা রইল আটকে। ২০১৯ সালে এই আসন বিজেপি জিতলেও, ব্যবধান বেশি ছিল না। গত বার ১১,৭৬৭ ভোটে জেতা ঝাড়গ্রাম নিয়ে চিন্তা রয়েছে পদ্মশিবিরে।
আসানসোল অবশ্য বিজেপির কাছে একই সঙ্গে আশা ও নিরাশার। এই আসনে রাজনীতির বাইরের লোক গায়ক বাবুল সুপ্রিয়কে প্রার্থী করে চমক দিয়েছিল বিজেপি। সেই সময়ে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী প্রচারে এসে বলেছিলেন, ‘‘মুঝে বাবুল চাহিয়ে।’’ আসানসোল এক বার নয়, দু’বার বাবুলকে সাংসদ করে পাঠিয়েছে মোদীর দরবারে। বড় ব্যবধানে জয়ী বাবুল দু’বারই কেন্দ্রের মন্ত্রী হয়েছেন। কিন্তু পরে বাবুলের সাংসদ পদ এবং বিজেপি ছাড়া, তৃণমূলে যোগ এবং রাজ্যের মন্ত্রী হওয়া আসানসোলের রাজনৈতিক রংও বদলে দিয়েছে। উপনির্বাচনে বিপুল ব্যবধানে জয় পেয়েছেন তৃণমূলের শত্রুঘ্ন সিন্হা। অভিনেতা শত্রুঘ্ন দিল্লিবাড়ির লড়াইয়েও প্রার্থী। কিন্তু তার বদলে কে? ভোজপুরী শিল্পী পবন সিংহকে প্রার্থী করে চমক দিয়েছিল বিজেপি। পবনও ‘চমক’ দিয়ে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু তার পরে বিনোদন জগতের কাউকেই বিজেপি প্রার্থী করবে কি না তা নিয়ে অনেক মত। সে সিদ্ধান্ত নেবেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তবে রাজ্যের নেতারা দু’টি নাম নিয়ে লড়াইয়ে। এক পক্ষ চাইছেন, এখনও পর্যন্ত টিকিট না-পাওয়া প্রাক্তন মন্ত্রী সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালাকে এ বার প্রার্থী করা হোক। অন্য পক্ষ চাইছেন, গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল থেকে বিজেপিতে আসা আসানসোল পুরসভার প্রাক্তন মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারিকে। সর্বশেষ যা পরিস্থিতি, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কোনও ‘তারকা’র সন্ধান না করলে এই দুইয়ের মধ্যে একের ভাগ্যে ছিঁড়তে পারে শিকে। তবে জিতেন্দ্রর নাম এগিয়ে রয়েছে বলেই দলের অন্দরের খবর।
সর্বশেষ ডায়মন্ড হারবার। এখন তৃণমূলের সবচেয়ে শক্তিশালী আসন বলা হয় এটাকেই। কারণ, এখান থেকে পর পর দু’বার সাংসদ হয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১৪ সালে এক লাখের কম ভোটে জিতেছিলেন। ২০১৯ সালে সেই ব্যবধান তিন লাখের উপরে চলে যায়। গত বিধানসভা নির্বাচনের ফলের নিরিখে এখন আরও পিছিয়ে বিজেপি। গত বার নীলাঞ্জন রায়, তার আগের বার অভিষেকের বিরুদ্ধে বিজেপির প্রার্থী ছিলেন অভিজিৎ দাস। এ বারও প্রার্থী হতে চান অভিজিৎ। এখানে তৃণমূল থেকে আসা সোনালি গুহ, বিজেপির আইনজীবী নেত্রী প্রিয়ঙ্কা টিবরেওয়ালের নামও আলোচনায় আসে। অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষকেও দল এখানে চেয়েছিল। কিন্তু হয় কাউকে রাজি করানো যায়নি, অথবা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পছন্দ হয়নি। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ‘আদি’ নেতা অভিজিৎকে প্রার্থী করতেও রাজি নন। ডায়মন্ড হারবারের প্রার্থী হিসাবে প্রাক্তন এনএসজি কর্মী দীপাঞ্জন চক্রবর্তীর নামও আলোচনায় রয়েছে বলে বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে। তবে বিজেপির কোনও নেতা আনুষ্ঠানিক ভাবে কিছু বলেননি। এখন বিজেপির অন্দরে আলোচনা, এই আসনে তৃণমূলের সেনাপতি অভিষেকের বিরুদ্ধে প্রার্থী করা হতে পারে বিজেপিতে নবাগত আইনজীবী কৌস্তভ বাগচীকে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে কুৎসার অভিযোগে কংগ্রেসে থাকার সময়ে কৌস্তভকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মুক্তি পাওয়ার পরে তিনি মমতাকে গদিচ্যুত না করা পর্যন্ত ন্যাড়া থাকবেন শপথ নিয়ে মাথা কামিয়ে ফেলেছিলেন। তবে তাঁকে বিজেপিতে নেওয়ার সময়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী প্রকাশ্যেই জানিয়েছিলেন, কাউকে নেওয়া মানেই প্রার্থী করা নয়। যদিও প্রথমে ব্যারাকপুর ও পরে শ্রীরামপুর আসনে কৌস্তভ টিকিট পেতে পারেন বলে জানা গিয়েছিল। এখন নাকি শুভেন্দুই কৌস্তভকে প্রার্থী হিসাবে চাইছেন অভিষেকের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy