যোগী আদিত্যনাথ। —ফাইল ছবি।
জাঠ বলয়ের ভোটযুদ্ধ আপাতত শেষ। এ বার নজর যাদবভূমে।
রাত পোহালে উত্তরপ্রদেশের তৃতীয় দফার ১০টি গুরুত্বপূর্ণ আসনের ভোটকে এ ভাবেই দেখছে স্থানীয় রাজনৈতিক মহল। এর আগে পশ্চিমাঞ্চলের দু’টি পর্বে জাঠ সম্প্রদায় ছিল যুযুধান সবপক্ষের যাবতীয় রাজনৈতিক হিসাবের কেন্দ্রে। কিন্তু এ বারের ১০টি আসনে যাদব-মুসলিম সমীকরণকে খেলা ঘুরিয়ে দেওয়ার সম্ভাব্য অস্ত্র বলে মনে করা হচ্ছে।
তৃতীয় দফায় আগরা, হাথরস, মৈনপুরী, বরেলী, সম্বল, ফতেপুর সিক্রির মতো আসনগুলিতে লড়াই ইন্ডিয়া মঞ্চ, বিজেপি এবং বিএসপি-র মধ্যে। স্থানীয় সূত্রের মতে, এই পর্বে এখনও পর্যন্ত আধিপত্য রয়েছে যোগী আদিত্যনাথের বিজেপির। তা ধরে রাখার লড়াই তাদের কাছে। ২০১৪ সালে প্রবল নরেন্দ্র মোদী ঝড়ের মধ্যে বিজেপি পায় এই ১০টির মধ্যে ৭টি আসন।’১৯-এ তা বেড়ে হয় ৮। এই গেরুয়া দাপটের মাঝেও ২০১৯-এ সম্বল এবং মৈনপুরী আসন দু'টিতে জিতেছিল এসপি। ’১৪-য় মৈনপুরী, বদায়ূঁ এবং ফিরোজাবাদ জেতে মুলায়ম সিংহের দল। তৃতীয় পর্বের এই ১০ আসনের ভোটব্যাঙ্কে প্রাধান্য রয়েছে যাদব, লোধ, কাচ্চি, কুর্মি, শাক্য মুরাও-সহ বেশ কিছু ওবিসি শ্রেণির। এরই মধ্যে কিছু কিছু জায়গায় মুসলিমদের উপস্থিতিও চোখে পড়ার মতো। কিছু জায়গায় রয়েছে জাঠ সম্প্রদায়ও।
রাজনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রী গত দু’সপ্তাহ ধরে ক্রমাগত ওবিসি এবং তফসিলি জাতি ও জনজাতির সংরক্ষণ কেড়ে মুসলিমদের দিয়ে দেওয়ার কথা তুলে কংগ্রেসকে যে বিঁধছেন, তার পিছনে ধর্মীয় মেরুকরণ অবশ্যই একটি কারণ। সামগ্রিক ভাবে হিন্দুভোটকে এক ছাতার তলায় আনা তাঁর লক্ষ্য তো বটেই, কিন্তু বিজেপি নেতৃত্ব এ কথাও মাথায় রাখছেন, উত্তরপ্রদেশের মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে ওবিসিদের মনে সংখ্যালঘু (মুসলমান) সম্প্রদায় সম্পর্কে অনাস্থা বা সন্দেহের বীজ ঢুকিয়ে দেওয়া গেলে ভোটে তার সুফল মিলবে। অখিলেশ যাদবের (এসপি) অন্যতম অস্ত্র এই দুই সম্প্রদায়কে এক জায়গায় নিয়ে আসা। অতীতে বিধানসভা নির্বাচনে এই একই সূত্রে ফল পেয়েছিলেন দলিত নেত্রী মায়াবতীও (বিএসপি)।
ফিরোজাবাদ, মৈনপুরী, বদায়ূঁ এবং সম্বলে যাদব ভোটারদের ব্লক তাৎপর্যপূর্ণ। আবার মুসলিম ভোটারের সংখ্যা যথেষ্ট বেশি সম্বল, মৈনপুরী, বরেলী, ফতেপুর সিক্রি, আগরা, বদায়ূঁতে। যাদবের সবচেয়ে বড় গড় মৈনপুরী মুলায়ম সিংহ যাদবকে পাঁচ বার লোকসভায় পাঠিয়েছে। ১৯৯৬ সাল থেকে এই আসনটি দখলে রেখেছে এসপি। কংগ্রেস এই আসনটি হারায় ১৯৮৪ সালে। গত বারের লোকসভা নির্বাচনে মুলায়ম তাঁর শেষ লড়াইটা লড়েন, হারান বিজেপির প্রেম সিংহ শাক্যকে। এ বারে সেই আসনে লড়ছেন মুলায়মের পুত্রবধূ ডিম্পল যাদব। যাঁর জয় এ বার অনিবার্য বলেই মনে করছে স্থানীয় মহল। মুলায়মের স্মৃতির সঙ্গে এ বার সেখানে লড়তে হচ্ছে বিজেপির জয়বীর সিংহকে। এই আসনে প্রার্থী দিয়েছেন মায়াবতীও। যাদবভূমেরই অন্য এক আসন ফিরোজাবাদে ২০০৯ সালে জেতেন অখিলেশ এবং ২০১৪তে তাঁর তুতো-ভাই অক্ষয় যাদব। এ বারেও লড়ছেন অক্ষয়। তাঁর মোকাবিলায় বিজেপি প্রার্থী বিশ্বদীপ সিংহ।
বরেলী আসনটি নিয়ে সামান্য হলেও মাথাব্যথা রয়েছে মোদী-যোগীর, এমনটাই মনে করা হচ্ছে। এই আসনে ১৯৮৯ সাল থেকে ক্রমাগত (২০০৯ বাদে) জিতে আসা (আট বার) সন্তোষ গঙ্গোয়ারকে সরিয়ে দিয়েছেন মোদী। টিকিট দেওয়া হয়েছে ছত্রপাল সিংহ গঙ্গোয়ারকে। ইন্ডিয়া মঞ্চ মনে করছে বিজেপির এই দুর্গে চিড় ধরিয়েছে গঙ্গায়ারকে সরানোর সিদ্ধান্ত। কুর্মি সমাজের একটি বড় অংশ, যাঁদের সন্তোষের প্রতি আনুগত্য রয়েছে, তাঁদের অসন্তোষ ভোটের মেশিনে প্রতিফলিত হতে পারে।
দলিত কন্যার উপরে উচ্চবর্ণের পুরুষদের অত্যাচার, হত্যা এবং ডিজেল দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনার পরে গোটা দেশের আলোচনায় উঠে এসেছিল হাথরস। তৃতীয় দফার ভোটে সেই নারকীয় ঘটনার কোনও অভিঘাত নেই বলেই মনে করছে স্থানীয় মহল। শুধুমাত্র জাতপাতের ঠান্ডা হিসাবই রয়ে গিয়েছে। এই আসনটি তফসিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত। এখানে দলিত এবং ঠাকুর উভয় সম্প্রদায়েরই সংখ্যা তিন লক্ষ করে। ব্রাহ্মণ দু’লক্ষ, দু’লক্ষ বৈশ্য এবং ৮০ হাজার মুসলিম। দলিতের মধ্যে জাঠভ সম্প্রদায়ের সমর্থন ব্যতিরেকে বিজেপির এখানে নিরঙ্কুশ প্রাধান্য। এ বারেও তাতে কোনও বদল হবে না বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। ’৯১ সাল থেকে বিজেপির এখানে একচ্ছত্র দখল। ২০০৯ সালে আরএলডি প্রার্থী জিতেছিলেন, কিন্তু সে বার আরএলডি ছিল বিজেপির জোটসঙ্গী। ১৯৯৬, ২০১৪ এবং ২০১৯ -এ তিন বার বিএসপি এখানে দ্বিতীয় স্থান পায়। বিএসপি দলিত ভোটারদের দল, যাদের এখানে ভোটব্যাঙ্ক যথেষ্ট বড়। মায়াবতী বা অখিলেশ কেউই এখানে বিজেপির মতো সক্রিয় নন। ফলে দলিতেরা উচ্চবর্ণের দ্বারস্থ হচ্ছেন সামাজিক নিরাপত্তার জন্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy