কোচবিহারে বিক্ষিপ্ত কিছু গোলমালের খবর এলেও তুলনায় শান্ত ছিল জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার। —ফাইল চিত্র।
পশ্চিমবঙ্গের উত্তরের তিনটি লোকসভা আসনের ভোটদান প্রক্রিয়া শেষ। জলপাইগুড়ি, কোচবিহার এবং আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রের ভোটে বিক্ষিপ্ত কিছু হিংসার অভিযোগ উঠেছে ঠিকই, কিন্তু মোটের উপর ভোটের দিন যে ছবি বছরের পর বছর এই তিন এলাকার মানুষ দেখতে অভ্যস্ত, শুক্রবারও তার বিশেষ ব্যতিক্রম নজরে পড়েনি। কোচবিহারে বিক্ষিপ্ত কিছু গোলমালের খবর এলেও তুলনায় শান্ত ছিল জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার। যদিও, তাতে রাজনৈতিক দলগুলির একে অপরের দিকে অভিযোগের তির ছোড়া কমেনি। উল্টে, আপাত শান্তির ভোটেও অভিযোগের পাহাড় জমেছে নির্বাচন কমিশনের চিঠির বাক্সে। কমিশন জানিয়েছে, মোট কত শতাংশ ভোট পড়ল, তা জানা যাবে শনিবার। তবে, এখনও পর্যন্ত ভোটদানের হার বেশ ভাল।
লড়াই সেয়ানে-সেয়ানে
কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার এবং জলপাইগুড়ি— রাজ্যের তিন কেন্দ্রেই ত্রিমুখী লড়াই। কোচবিহারে বিদায়ী বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের সঙ্গে লড়াই এই লোকসভা কেন্দ্রেরই অন্তর্গত সিতাই বিধানসভার বিধায়ক তথা তৃণমূল প্রার্থী জগদীশচন্দ্র বর্মা বসুনিয়ার। নিজেদের পুরনো ঘাঁটিতে লড়াইয়ে রয়েছে ফরওয়ার্ড ব্লকও। তারা প্রার্থী করেছে নীতীশচন্দ্র রায়কে। গত লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের কাছ থেকে আসনটি ছিনিয়ে নিয়েছিল বিজেপি। গোটা রাজ্যে বাম-কংগ্রেস আসন সমঝোতা হলেও কোচবিহারে আলাদা করে প্রার্থী দিয়েছে কংগ্রেসও। তাদের প্রার্থী পিয়া রায়চৌধুরী।
জলপাইগুড়ি কেন্দ্রে এ বার বিদায়ী সাংসদ জয়ন্তকুমার রায়কেই প্রার্থী করে বিজেপি। তাঁর বিরুদ্ধে তৃণমূলের হয়ে লড়েন এই লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ধূপগুড়ি বিধানসভার বিধায়ক নির্মলচন্দ্র রায়। সিপিএম প্রার্থী করে তরুণ নেতা দেবরাজ বর্মণকে। ২০১৪ সালে এই আসনে জয়ী হয়েছিল তৃণমূল। ২০১৯ সালে আসনটি তৃণমূলের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয় বিজেপি।
আলিপুরদুয়ারে এ বার প্রার্থী বদল করেছে বিজেপি। বিদায়ী সাংসদ তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জন বার্লাকে সরিয়ে উত্তরবঙ্গের চা-বাগান অধ্যুষিত এই কেন্দ্রে পদ্মশিবির প্রার্থী করেছে বিধানসভায় দলের মুখ্য সচেতক তথা এই লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত মাদারিহাট বিধানসভার বিধায়ক মনোজ টিগ্গাকে। তৃণমূল প্রার্থী করেছে দলের অন্যতম ‘আদিবাসী মুখ’ তথা রাজ্যসভার সাংসদ প্রকাশ চিক বরাইককে। এক সময় এই কেন্দ্রে টানা ১০ বার জিতেছিল বামফ্রন্টের শরিক দল আরএসপি। ২০১৪ সালে আরএসপি-কে হারিয়ে তৃণমূলের দশরথ তিরকে জয়ী হলেও ২০১৯-এ তাঁকে হারতে হয় বিজেপির কাছে। এ বার আরএসপি প্রার্থী করেছে দলের প্রাক্তন সাংসদ মনোহর তিরকের কন্যা মিলি ওরাওঁকে।
কোচবিহার
প্রথম দফার তিন আসনের মধ্যে প্রশাসনের সবচেয়ে বড় মাথাব্যথা ছিল রাজার শহর কোচবিহার আসনটিকে নিয়েই। এই কেন্দ্রে তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখেছেন রাজ্যবাসী। ভোটের আগেও নিয়মিত ভাবে উত্তাপ ছড়িয়ে গিয়েছে কোচবিহার। তাই ভোটের দিনও গোলমাল, হিংসার আশঙ্কা ভরপুর ছিল। সেই অনুযায়ী প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছিল প্রশাসন।
কোচবিহারে বিগত এক ভোটের দিনই শীতলখুচিতে ঝরে গিয়েছিল একাধিক প্রাণ। কাঠগড়ায় ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনী। সেই শীতলখুচিতে এ বারও ভোটে গোলমালের অভিযোগ। সকালে শীতলখুচির ছোট শালবাড়িতে তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষ বেধে যায়। এর জেরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এলাকা। ছোট শালবাড়ির ২৮৬ নম্বর বুথে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের হাতাহাতি হয়। দু’পক্ষের বেশ কয়েক জন অল্পবিস্তর জখম হন বলে খবর। শীতলখুচির গোঁসাইহাট গ্রাম পঞ্চায়েতের বড় ধাপের চত্রা এলাকায় এক বিজেপি কর্মীকে মারধরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। আহত ওই বিজেপি কর্মীকে মাথাভাঙা মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। জানা গিয়েছে ওই বিজেপি কর্মীর নাম সুরেন্দ্র বর্মণ। তৃণমূল অভিযোগ অস্বীকার করে। কোচবিহারের মাথাভাঙা ১ নং ব্লকের নয়ারহাট গ্রাম পঞ্চায়েতের ৫/৫৩ নং গেন্দুগুড়ি বুথে তৃণমূলের ক্যাম্প অফিস খোলা নিয়ে ঝামেলা। তৃণমূলের পোলিং এজেন্টকে মারধরের অভিযোগ। বিজেপি সমস্ত অভিযোগই অস্বীকার করে। মধ্য ফলিমারির ৪/৩৭ বুথ সংলগ্ন এলাকা থেকে ন’টি তাজা বোমা উদ্ধার ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়ায়। কে রাখল বোমা? জানা যায়নি।
এ ছাড়াও আরও বিভিন্ন অভিযোগ শোনা গিয়েছে কোচবিহার লোকসভার অন্তর্গত বিভিন্ন অঞ্চল থেকে। তবে বড় কোনও অঘটন এড়ানো গিয়েছে বলেই মত কমিশনের। উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহকে প্রায় দিনভরই ‘ভোট করাতে’ ব্যস্ত থাকতে দেখা গিয়েছে। ভেটাগুড়িতে রাজ্যের উদয়নকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান গ্রামবাসীদের একাংশ। বিক্ষোভকারীদের দাবি, উদয়নের মদতেই বিজেপির এক পঞ্চায়েত সদস্য গ্রেফতার হয়েছেন। উদয়নের বক্তব্য, সাজানো লোকেদের নিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছে বিজেপি। উদয়নের দিন ব্যস্ততায় কাটলেও দুপুর ১টার আগে দেখা মেলেনি বিজেপি প্রার্থী নিশীথ প্রামাণিকের। তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে প্রথমে কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। তার পর নিজের ভোট দেন। প্রকাশ্যে বিশেষ দেখা না গেলেও, নিশীথ ঘরে বসে মোবাইলেই ‘ভোট করিয়েছেন’ বলেই দাবি তাঁর অনুগামীদের। সব মিলিয়ে কোচবিহারে বিভিন্ন অশান্তি, গোলমালের অভিযোগ থাকলেও মোটের উপর নির্বিঘ্নেই ভোট দিতে পেরেছেন মানুষ। বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত কোচবিহারে ভোটদানের হার ছিল ৭৭.৭৩ শতাংশ।
আলিপুরদুয়ার
নির্বিঘ্নেই আলিপুরদুয়ারে মিটে গেল গণতন্ত্রের শ্রেষ্ঠ উৎসব। এ বার অপেক্ষা ফল গণনার। চা-বাগান আর পাহা়ড়, জঙ্গলে ঘেরা এই জেলা সৌন্দর্যে পাল্লা দিতে পারে ইউরোপের যে কোনও জায়গাকে। আলিপুরদুয়ারে তৃণমূল বিজেপির মুখোমুখি লড়াই হলেও যুদ্ধে রয়েছেন বাম প্রার্থীও। তবে গোটা দিন ধরে এই লোকসভা এলাকা থেকে হাতেগোনা দু’একটি অভিযোগ এলেও তা নিয়ে বিশেষ হইচই করতে দেখা যায়নি রাজনৈতিক দলগুলিকেও। মনোরম আবহাওয়ায় ভোটকেন্দ্রের সামনে লম্বা লাইন দেখা গিয়েছে প্রায় সারা দিনই। কয়েকটি জায়গায় দেখা গিয়েছে, লাইনের বহর ভোটকেন্দ্র ছাড়িয়ে ঢুকে পড়েছে চা-বাগানের মধ্যে। যে ছবি আলিপুরদুয়ারের একান্ত আপন। মোটের উপর শান্তিতেই মিটে গিয়েছে রাজ্যের অন্যতম নবীন এই জেলার লোকসভা আসনের ভোট।
জলপাইগুড়ি
ঐতিহাসিক ভাবেই ভোটের দিন বিশেষ অশান্তি দেখতে অভ্যস্ত নয় জলপাইগুড়ি। এ বারও তার ব্যতিক্রম দেখা গেল না। যদিও শিলিগুড়ি লাগোয়া এলাকা থেকে কিছু বিক্ষিপ্ত অশান্তির খবর এসেছে প্রায় দিনভর। তা বাদে, জলপাইগুড়ির ভোট মিটেছে রেওয়াজ বজায় রেখেই, কার্যত নিঃশব্দে। তবে ইতিউতি অভিযোগ যে একেবারেই ওঠেনি, তা নয়। তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভোটারদের প্রভাবিত করার অভিযোগ তুলেছেন জলপাইগুড়ির বিজেপি প্রার্থী তথা বিদায়ী সাংসদ জয়ন্ত রায়। পাল্টা তোপ দাগে তৃণমূলও। তবে, সবচেয়ে বড় গোলমালটি হয়েছে ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি বিধানসভা এলাকায়। যার কিছুটা অংশ ভৌগোলিক ভাবে শিলিগুড়ি শহরের মধ্যে পড়ে। সেখানকার বিধায়ক শিখা চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে একাধিক বার পুলিশের বচসা হয়। তার আরম্ভটা অবশ্য শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেবের নিজের পাড়া শিলিগুড়ি পুরসভার ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে। সেখানে পুলিশ শিখাকে ঢুকতে বাধা দেয়। বাধা পেয়ে পুলিশের সঙ্গে বচসায় জড়ান শিখা। পুলিশকে তাঁকে গ্রেফতারির চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন। তা নিয়ে পুলিশের সঙ্গে বিজেপি কর্মীদের ধস্তাধস্তির পরিস্থিতি তৈরি হয়। সেই সময় শিখাকে গাড়িতে করে বার করে দেওয়া হয় অন্যত্র। একটিয়াশাল এলাকাতেও একটি স্কুলে গোলমাল শুরু হয় শিখা আসার পর। তাঁকে লক্ষ্য করে স্লোগান দিতে থাকেন উপস্থিত তৃণমূল কর্মীরা। পাল্টা স্লোগান দেন বিজেপি কর্মীরাও। দু’পক্ষ মুখোমুখি চলে আসার আশঙ্কা তৈরি হয়। সেই সময় কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং পুলিশ দু’পক্ষকে সরিয়ে দেয়। গোলমাল চলাকালীন গাড়িতে এলাকা ছাড়েন শিখাও।
জলপাইগুড়ির ধূপগুড়িতে ভোটকেন্দ্রের বাইরে দলের ক্যাম্পে বসে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয় এক সিপিএম কর্মীর। সিপিএম সূত্রে খবর, মৃতের নাম প্রদীপ দাস। তাঁর বয়স ৫৮। কী ভাবে প্রৌঢ়ের মৃত্যু হল, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
গণনার আগেই ‘বিজয় মিছিল’
ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে সদ্য। ইভিএম বাক্সবন্দি হয়ে তখনও ফেরেনি স্ট্রংরুমে। তার মধ্যেই কোচবিহারে ‘বিজয় মিছিল’ করে ফেলল বিজেপি এবং তৃণমূল। দু’পক্ষেরই দাবি, দেওয়ালের লিখন পরিষ্কার, জয় এ বার তাদেরই করায়ত্ত হচ্ছে। বিজেপি এবং তৃণমূলের কর্মী- সমর্থকেরা ভোটগ্রহণের দিনই আগাম জয়ের খুশিতে একে অপরকে মিষ্টিমুখ করালেন। পুড়ল আতশবাজিও। যা দেখে অবাক রাজার শহর কোচবিহারের বাসিন্দারা। তাঁদের বক্তব্য, গণনা পর্যন্ত অপেক্ষা করলে হত না? তৃণমূল সূত্রে খবর, কোচবিহারের পাশাপাশি, জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ারেও ‘বিজয় মিছিল’ করে আগাম জয়ের উদ্যাপন করা হয়েছে।
কী বলল কমিশন
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, উত্তরবঙ্গের তিন কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ৭৭.৫৭ শতাংশ। প্রথম দফায় ভোট শতাংশের হারে দেশের অন্য রাজ্যগুলির থেকে এগিয়ে রয়েছে বাংলা। কিন্তু আসল প্রশ্ন হল, কেমন হল ভোট? সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক আরিজ় আফতাব জানান, শুক্রবার মোট ৫৮১৪ বুথে ভোটগ্রহণ হয়েছে। ১০০ শতাংশ বুথেই কেন্দ্রীয় বাহিনী ছিল। সব বুথের ওয়েব কাস্টিং হয়েছে। ২৭ হাজার ৯০৭ জন ভোটকর্মী কাজ করেছেন। ৫৮১ মাইক্রো অবজ়ার্ভার ছিলেন। তিন আসনে মোট ৩৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। নির্বাচন হয়েছে শান্তিপূর্ণ ভাবেই। যদিও কয়েকটি বিক্ষিপ্ত ঘটনার খবর এসেছে। যে কয়েকটি বিক্ষিপ্ত ঘটনার খবর এসেছে, তার জেরে ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সবাইকে গ্রেফতার করা হয়েছে কোচবিহার থেকেই। কোচবিহার থেকে উদ্ধার হয়েছে ১০টি তাজা বোমা।
কমিশন জানিয়েছে, ন্যাশনাল গ্রিভেন্স অ্যাড্রেসাল সিস্টেমে মোট ৩৭১টি অভিযোগ জমা পড়েছিল। এর মধ্যে আলিপুরদুয়ারে ৯৯, কোচবিহারে ১৬৯ এবং জলপাইগুড়িতে ১০৩টি। সি-ভিজিল অ্যাপে দায়ের হয়েছে ১০৩টি অভিযোগ। এর মধ্যে আলিপুরদুয়ারে ৫৯, কোচবিহারে ২৬ এবং জলপাইগুড়িতে ১৮টি। ইমেল বা ফোন মারফত কমিশনের কাছে অভিযোগ এসেছে ৮২টি। এর মধ্যে আলিপুরদুয়ার থেকে ৪টি, কোচবিহার থেকে ৭৪টি এবং জলপাইগুড়ি থেকে ৪টি অভিযোগ এসেছে। যে রাজনৈতিক দলগুলির তরফে অভিযোগ কমিশনের কাছে এসেছে, তাদের মধ্যে শীর্ষে সিপিএম। শুক্রবার ভোট সংক্রান্ত মোট ৩৭টি অভিযোগ দায়ের করেছে তারা। দ্বিতীয় স্থানে তৃণমূল। দলীয় ভাবে মোট ২০টি অভিযোগ দায়ের করেছে তারা। অভিযোগ করেছে কংগ্রেসও। উত্তরবঙ্গে ভোট সংক্রান্ত মোট দু’টি অভিযোগ দায়ের করেছে তারা। আর উত্তরবঙ্গে শক্ত ঘাঁটি যে বিজেপির, তারা দায়ের করেছে ১৪টি অভিযোগ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy