(বাঁ দিকে) দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী গোপাল লামা। তৃণমূলের সভা (ডান দিকে)
ভোটে লিড দাও, পুরস্কার নাও। দলীয় নেতাদের উদ্দেশে এমনই বার্তা দিচ্ছেন তৃণমূল জেলা নেতৃত্ব। কোথাও ব্লক সভাপতিকে বলা হচ্ছে, তাঁর বুথে বেশি লিড পেলে উপহার দেওয়া হবে মোটরবাইক। কোথাও আবার সাইকেল দেওয়ার প্রতিশ্রুতি। দার্জিলিং জুড়েই এ রকম প্রচার চালাচ্ছেন তৃণমূল জেলা নেতৃত্ব। যা নিয়ে কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছে বিজেপি। তবে তা গায়ে মাখতে নারাজ রাজ্যের শাসকদল। জেলা নেতৃত্বের বক্তব্য, ভোটের লড়াইয়ে সহযোগীদের উদ্বুদ্ধ করতেই এ সব করছেন তাঁরা। তবে বিজেপি বলছে, বিষয়টি নিয়ে তারা নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে।
সম্প্রতি উত্তরবঙ্গ সফরে এসেছেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘কেন্দ্রীয় বঞ্চনা’কে হাতিয়ার করে তাঁরা প্রচার চালিয়েছেন। জেলা নেতৃত্বও বিজেপির বিরুদ্ধে সেই প্রচার করছেন। তার সঙ্গে দলীয় নেতাদের জন্য থাকছে উপহারের ‘টোপ’।
দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী গোপাল লামাকে নিয়ে মহকুমার ফাঁসিদেওয়ার একাধিক জায়গায় প্রচার করেন দার্জিলিং জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি পাপিয়া ঘোষ। ছিলেন ফাঁসিদেওয়া সাংগঠনিক-২ ব্লকের সভাপতি তথা এসজেডিএ-এর সদস্য কাজল ঘোষ। সেখানে তাঁরা ঘোষণা করেছেন, দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রে জয়ী হলে বুথ সভাপতি থেকে অঞ্চল সভাপতিদের বাইক থেকে দামি সাইকেল উপহার দেওয়া হবে। একই কথা শোনা যাচ্ছে দার্জিলিং জেলা তৃণমূলের সভানেত্রী পাপিয়া ঘোষের মুখেও। তিনি অবশ্য নির্দিষ্ট করে কিছু বলছেন না। শুধুমাত্র উপহারের কথাই ঘোষণা করছেন।
তৃণমূল নেতা কাজলের কথায়, ‘‘গ্রাম পঞ্চায়েতের অঞ্চল সভাপতিদের মধ্যে যিনি সব থেকে বেশি ভোট লিড দিতে পারবেন তাঁকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে একটি মোটরবাইক দেওয়া হবে।’’ একই ভাবে সংশ্লিষ্ট চারটি অঞ্চলের সব বুথ সভাপতির মধ্যে যিনি সব থেকে বেশি ভোটের লিড আনতে পারবেন, তাঁকে একটি ‘ভাল মানের সাইকেল’ উপহার দেওয়া হবে। জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভানেত্রী পাপিয়ার ঘোষণা, ‘‘এই নির্বাচনে ফাঁসিদেওয়া সাংগঠনিক-১ ব্লকের যে বুথ সভাপতি সব থেকে বেশি ভোট আনতে পারবেন তাঁকে মহম্মদ আখতার আলি (সেই অঞ্চলের তৃণমূলের দায়িত্বে রয়েছেন) বিশেষ উপহার দিয়ে পুরস্কৃত করবেন।’’
ভোটের লড়াইয়ে নেমে দলীয় নেতাদের এ ভাবে উপহার দেওয়ার ঘোষণা কি ঠিক? কাজলের জবাব, ‘‘আমি দীর্ঘ দিন ধরে রাজনীতির ময়দানে আছি। সহকর্মীরা ভাল-মন্দ সবটাই জানান। আমরা সবাই আশা করি যে যার জন্য কাজ করছি, তার কাছ থেকে যদি একটা মিষ্টি বা সিঙাড়া পাই। এতে ভাল লাগা থাকে। আমি নিজে এক জন ব্যবসায়ী। আমার দুটো কারখানা রয়েছে। ভোটের বাজারে দলের নেতাদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য ব্যক্তিগত উদ্যোগে এই কাজ করেছি।’’ তিনি জানান, মোট ৯৮টি বুথ, চারটি অঞ্চল রয়েছে। চারটি অঞ্চলের বুথ সভাপতিদের মধ্যে যিনি বেশি ভোটের লিড দেবেন, তাঁকে একটি রেঞ্জার সাইকেল উপহার দেবেন। চারটি অঞ্চলের সভাপতির দায়িত্বে যাঁরা রয়েছেন, তাদের মধ্যে যিনি বেশি ভোটের লিড দেবেন, তাঁকে একটি বাইক উপহার দেবেন। একই কথা বলছেন জেলা তৃণমূল সভাপতি পাপিয়াও। তিনি বলেন, ‘‘আমরা বাড়িতেও আমাদের ছেলেমেয়েদের রেজাল্ট ভাল করতে এ সব বলি। এটাও সে রকমই। এটা একেবারেই আমার দলের অন্দরের বিষয়। ব্যক্তিগত বিষয়।’’ কিন্তু উপহার প্রদানের মতো এই ‘দলীয় বিষয়’ কেন খোলা মাঠে নির্বাচনী প্রচারে ‘আলোচনা’ হচ্ছে? তৃণমূল নেত্রীর জবাব, ‘‘খোলা মাঠেই সভা ছিল। কিন্তু দলীয় কর্মীদের নিয়ে বৈঠক ছিল। দলীয় কর্মীদের নিয়ে আমরা কী মিটিং করছি সেটা যদি কেউ রেকর্ড করে তা হলে আর কিছু বলার নেই।’’
এ নিয়ে শিলিগুড়ির বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ বলেন, ‘‘ব্যক্তিগত স্তরে কারও কিছু দেওয়ার থাকলে দেবেন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, প্রার্থী তো পাঁচ লক্ষ ভোটে হারবেন। আর এই ব্যাপারে নির্দিষ্ট ভাবে নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ জানাব আমরা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy