অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ফেসবুক।
‘‘কথা আমি দিয়ে যাচ্ছি। আমি এক কথার ছেলে। আপনার অধিকারের জন্য আপনি লড়াই করুন। বাড়ি নিয়ে চিন্তা করবেন না। মা-মাটি-সরকার দেবে (আবাস)। শুধু পাশে থাকুন।’’
‘‘অনেক হয়েছে। এদের দয়া এবং দাক্ষিণ্যে আর বাঁচব না। এঁদের কাছে আর কিছু চাইবেন না। এঁদের কাছে মাথা নীচু করে বেঁচে থাকবেন না। প্রতি বছর ২৫ হাজার কোটি টাকা খরচ করছে বাংলার মহিলাদের জন্য। এর ১০ পয়সা মোদী সরকারের নয়। তাই ১০০ দিনের কাজও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিতে পারবেন। তাই বাংলাকে জেতান। মেদিনীপুরে জুন মালিয়াকে জয়ী করুন। আবাসের জন্য কারও উপর নির্ভর করতে হবে না। আমরা করব।’’
‘‘আমাদের বিবেকে বাধবে ছ’মাস কাজ করিয়ে কাউকে পারিশ্রমিক না-দিয়ে বার করে দিতে। এরা ১০০ দিনের কাজের বেলা তাই করেছে।’’
‘‘দিলীপ ঘোষ বার বার নারীশক্তিকে আক্রমণ করেছেন। মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে অসম্মানজনক কথা বলেছেন। তিনি কুড়মি সম্প্রদায়কে অসম্মান করেছেন।’’— ভিডিয়োয় মেদিনীপুরের বিদায়ী সাংসদকে আক্রমণ তৃণমূলের।
‘‘এদের বলার ক্ষমতা নেই। খালি মিথ্যে কথা বলবে। ২০১৮ সালে জুলাই মাসে প্রধানমন্ত্রী সভা করতে এসে মেদিনীপুরে কত মিথ্যা কথা বলেছেন! একটা কাজ করেনি— দেখুন ভিডিয়ো।’’ জায়ান্ট স্ক্রিনে পাঁচ মিনিটের ভিডিয়ো চালিয়ে মোদীকে আক্রমণ অভিষেকের।
‘‘দিলীপ ঘোষ কী পরিষেবা দিয়েছে আপনারা দেখেছেন। সকালবেলা খালি মর্নিং ওয়াক ওঁর কাজ। খালি মর্নিং ওয়াক করছেন। চা খান। চায়ে আপত্তি নেই। শরীরচর্চা আর মর্নিংওয়াক যিনি করছেন তাঁকে সাংসদ করবেন না কি যে মেয়ে রাস্তায় লড়বেন, তাঁকে সংসদে পাঠাবেন? শপথ নিন, মর্নিং ওয়াক করা দাদা পার্কে থাক, বাংলার মেয়ে দিল্লি যাক।’’
‘‘আমরা ত্যাগ করছি। ওরা গ্রহণ করছে। কোনও ভদ্রলোক বিজেপি করে না। দেখুন না এদের চরিত্র। সব চোর, চিটিংবাজ, দু’নম্বরি, দুর্নীতিগ্রস্ত, পাতাখোর, মাতাল— সব বিজেপিতে। এরা সব সিপিএমের প্রোডাক্ট। মদের বোতলটা নতুন। মদ পুরনো।’’
‘‘দিলীপ ঘোষ যে জিতেছিলেন, তার পর পাঁচ বছরে সাত বিধানসভা কেন্দ্রে যদি একটা উন্নয়নমূলক বৈঠক হয়েছে বলে দেখাতে পারেন, তা হলে আমি আর ভোট চাইতে আসব না। এত বড় কথা বলে দিয়ে যাচ্ছি। অন্য দিকে দেখুন মুখ্যমন্ত্রীকে। কথা দিয়ে কথা রেখেছেন।’’
‘‘একটা ভোটের দাম কী? আমি বলি, যাকে ইচ্ছা ভোট দিন। কিন্তু ভোটটা দিন।’’
‘‘আজ আপনাদের বলি, দু’মাস রাস্তায় ছিলাম। এক দিন বাড়ি যাইনি। ঘর-পরিবার-স্ত্রী-সন্তান সবাইকে ছেড়ে রাস্তায় ছিলাম। ১০০ দিনের কাজের টাকার জন্য আন্দোলন করেছিলাম। আপনারা টাকা পেয়েছেন কি না বলুন?’’
‘‘গণতন্ত্রে মানুষ ভুল করে না। মানুষ যদি বিজেপিকে ভোট দেন, সেই রায় আমরা মাথা পেতে নেব। শুধু নিজের অধিকার সামনে রেখে ভোট দেবেন।’’
‘‘আমি বলছিলাম, বাংলা মাথা ঝোঁকাবে না। আজকের এই সভা সেটাই প্রমাণ করছে। ২০১১ সালে মা-মাটি-মানুষের সরকার তৈরি হয়েছে। তার আগে মেদিনীপুরের মানুষ সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। আত্মবলিদান দিয়েছেন।’’
‘‘বলেছিলাম, নারায়ণগড় দিয়ে প্রচার শুরু করব। শুরু করলাম। আমি আগে থেকে জানতাম না যে, আজই নির্বাচন ঘোষণা হবে। কী করে জানব, যে দিন নির্ঘণ্ট প্রকাশ হবে, সে দিনই আন্দোলনের পীঠস্থান মেদিনীপুরে থাকব! এটা সৌভাগ্যের।’’
বেলদা স্টেডিয়াম মাঠের সভা থেকে অভিষেক বলেন, ‘‘মায়েরা যাঁরা বাড়ির কাজকর্ম ছেড়ে আমাদের সভায় এসেছেন, তাঁদের প্রণাম। মাতৃশক্তি না-জাগলে এ পৃথিবী জাগে না। নবজোয়ারের সময় আমি যখন অবিভিক্ত মেদিনীপুরে এসেছিলাম, প্রত্যেক বিধানসভায় পৌঁছে যাওয়ার চেষ্টা করেছি।’’
মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রে মোট ৭টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে রয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশিয়াড়ি, দাঁতন, নারায়ণগড়, মেদিনীপুর, খড়্গপুর সদর, খড়্গপুর গ্রামীণ এবং পূর্ব মেদিনীপুরের এগরা। ওই লোকসভা কেন্দ্রে ২০১৯ সালে সাংসদ হন বিজেপির দিলীপ ঘোষ। এ বার সেখানে তৃণমূল প্রার্থী করেছে বিধায়ক জুন মালিয়াকে।
২০১৯ সালে মেদিনীপুর সদর থেকে লোকসভা ভোটে জিতে সাংসদ হন দিলীপ ঘোষ। এ বার ওই কেন্দ্র থেকে এখনও প্রার্থী ঘোষণা করেনি বিজেপি। তবে এ বারও যিনি তিনিই প্রার্থী হবেন, তা নিশ্চিত করেছেন বিদায়ী সাংসদ দিলীপ নিজেই। তিনি তৃণমূলের তারকা প্রার্থী তথা বর্তমান বিধায়ক জুন মালিয়াকে ২ লক্ষ ভোটে হারানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। জুনও চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে বলেছেন, ‘‘যুদ্ধক্ষেত্রে লড়াই হবে। খেলা হবে। হাসি হবে। কান্না হবে। মাইন্ড করবেন না দিলীপদা।’’
জুন মালিয়ার সমর্থনে সভা থেকে অভিষেক যে কেন্দ্রের বাংলার প্রতি বঞ্চনার কথাই তুলে ধরবেন তা আগেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন মন্ত্রী শশী পাঁজা। তিনি বলেন, ‘‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেছিলেন কেন্দ্র ১০০ দিনের কাজ ও আবাস প্রকল্পে টাকা দেয়নি। এ নিয়ে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি করেছিলেন। বিজেপি যুব নেতৃত্বকে পাঠানোর দাবি করলেও এখন কেউ আসেনি। সুতরাং চ্যালেঞ্জ বেলদার সভাতেও থাকবে।’’
বাংলার ৪২টি লোকসভা আসনের প্রচার মেদিনীপুর থেকে শুরু করলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার বেলদা স্টেডিয়ামে সভা করেন অভিষেক। মেদিনীপুরের তৃণমূল প্রার্থী জুন মালিয়ার হয়েই পশ্চিম মেদিনীপুরে প্রথম প্রচার শুরু করছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy