(বাঁ দিকে) সৌমিত্র খাঁ। সুজাতা খাঁ। — ফাইল চিত্র।
গত লোকসভা নির্বাচনে প্রায় একার জোরে প্রচার করে জিতিয়েছিলেন স্বামী সৌমিত্র খাঁকে। পাঁচ বছরে বদলে গিয়েছে অনেক কিছু। বদলেছে দল। বদলে গিয়েছে সম্পর্ক। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে সেই আসনে এ বার বিজেপি সাংসদ তথা প্রাক্তন স্বামী সৌমিত্রের বিরুদ্ধে লড়তে চলেছেন সুজাতা মণ্ডল। তৃণমূল তাঁকেই টিকিট দিয়েছে বিষ্ণুপুরে। ফলে প্রাক্তন স্বামী-স্ত্রীর লড়াইয়ের সাক্ষী হতে চলেছে বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্র। এই প্রসঙ্গে সৌমিত্র জানান, তিনি পিছনে ফিরে তাকাতে চান না। এ বার ভোট হবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে দেখে।
রাজনৈতিক মহলে সুজাতা পরিচিত ছিলেন সৌমিত্রের স্ত্রী হিসাবে। ২০১৬ সালের জুলাই মাসে বড়জোড়ার বাসিন্দা সুজাতার সঙ্গে বিয়ে হয় সৌমিত্রের। তিনি তখন বিষ্ণুপুরের তৃণমূলের সাংসদ। ২০১৯ সালে সৌমিত্র যোগ দেন বিজেপিতে। তখন সুজাতাও যোগ দেন সেই দলে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময়ে আদালতের নির্দেশে নিজের এলাকায় যেতেই পারেননি সৌমিত্র। একা হাতে প্রচার সামলেছিলেন সুজাতা। জেতেন সৌমিত্র। পরে নিজের জয়ের কৃতিত্ব সুজাতাকেই দিয়েছিলেন বিজেপির সাংসদ।
২০২১ সালে রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি ছেড়ে সৌগত রায় ও কুণাল ঘোষের হাত ধরে তৃণমূলে যোগ দেন সুজাতা। সেই দিনই নিজের সল্টলেকের বাসভবনে সাংবাদিক বৈঠক করে স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদের ঘোষণা করেন সৌমিত্র। কান্নায় ভেঙে পড়তেও দেখা যায় তাঁকে। তার পরেই সুজাতা ও সৌমিত্রের বিবাহবিচ্ছেদের মামলা শুরু হয়। বিধানসভা ভোটে সুজাতাকে প্রার্থীও করে তৃণমূল। তবে হেরে গিয়েছিলেন তিনি।
গত বছরই আদালতে বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায় সৌমিত্র এবং সুজাতার। গত পঞ্চায়েত ভোটে প্রথম বার ‘খাঁ’ ছেড়ে ‘মণ্ডল’ পদবি নিয়ে লড়েন সুজাতা। জিতেওছিলেন। বাঁকুড়া জেলা পরিষদের ৪৪ নম্বর আসনে জিতে যান সুজাতা। এ বার বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী করল সুজাতাকে, যাঁর দাবি, ওই এলাকাকে তিনি হাতের তালুর মতো চেনেন। ২০১৯ সালে সৌমিত্রকে জেতাতে গোটা এলাকা প্রায় চষে ফেলেছিলেন সুজাতা। সে কথা স্বীকার করেন স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের বড় অংশ।
পরে সেই সুজাতাই বার বার আঙুল তুলেছেন সৌমিত্রের দিকে। সুজাতা দাবি করেছিলেন, সৌমিত্রের অত্যাচারে মধ্যরাতে তিনি বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন। সংসদে সৌমিত্রকে ‘বৌ পালানো’ নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন সাংসদ সৌগত রায়। তিনি বলেছিলেন, “তোমার মাথার ঠিক নেই। বৌ পালিয়ে যাওয়ায় তুমি পাগল হয়ে গিয়েছ।’’ সংসদের ভিতর সৌগতের এমন মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। এই নিয়ে যদিও সৌগতের পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন সুজাতা। বলেছিলেন, সৌগত ভুল কিছু বলেননি। তিনি তাঁকে মেয়ের মতো স্নেহ করেন বলেও জানিয়েছিলেন। সুজাতা এ-ও বলেন, সৌমিত্র ‘মানসিক বিকারগ্রস্ত’। তাঁর কথায়, ‘‘সম্পর্কে থাকাকালীন উনি অনেক কিছু করেছেন। কিন্তু সম্পর্কের খাতিরেই আমি চুপ করে থেকেছি। পাবলিক করিনি (প্রকাশ্যে আনিনি)। নানা রকম ভাবে অত্যাচার করেছেন। পরে ভেবে দেখলাম, আমি এই সম্পর্ক থেকে না বেরোলে নিজের স্বার্থে মৃত্যুবরণ করতে বাধ্য করবেন উনি। সেই কারণেই রাত সাড়ে ৩টেয় বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলাম।’’ সৌমিত্র অবশ্য সেই অভিযোগ মানেননি। তিনি জানিয়েছিলেন, উন্মাদের কথার কোনও জবাব হয়নি। সৌমিত্র এ-ও বলেছিলেন, ‘‘উনি কখনও বলেন আমি নপুংসক, সন্তান উৎপাদনে অক্ষম। আবার কখনও বলে আমি নাকি বহু নারীসঙ্গ করি। এ সবের কি উত্তর হয়?’’
তার পর থেকে একাধিক বার একে-অপরকে আক্রমণ করেছেন সৌমিত্র এবং সুজাতা। আগামী দিনে প্রচারক্ষেত্রে সেই আক্রমণের ধার আরও জোরালো হতে চলেছে, এমনটাই মনে করা হচ্ছে। রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার সঙ্গে মিশতে পারে দাম্পত্য কলহও, যার সাক্ষী থাকতে চলেছে বিষ্ণুপুর। সৌমিত্র সাফ বলেছেন, ‘‘কে প্রার্থী, আমি দেখি না। ভোট হবে মোদীজিকে দেখে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy