—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
জঙ্গলমহলের রাজনীতিতে জাতিসত্তার দাবি ঢুকেছে আগেই। এই আবহে লোকসভা ভোটে কি তবে শাসক-বিরোধীর অন্যতম অস্ত্র হয়ে উঠছে তফসিলি ও জনজাতি নিপীড়ন প্রতিরোধ আইন! মঙ্গলবার দুপুরে ঝাড়গ্রামের সাঁকরাইল ব্লকের রগড়ার ঘটনার পর রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের আশঙ্কা এমনই।
ওই ঘটনায় বিজেপি ও তৃণমূলের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে সাঁকরাইল থানায় পৃথক দু’টি মামলা রুজু হয়েছে। দু’টি মামলাতেই ভীতিপ্রদর্শন, মারধর, খুনের চেষ্টা, বেআইনি আটক, মহিলাদের শ্লীলতাহানির ধারার পাশাপাশি, তফসিলি ও জনজাতি নিপীড়ন প্রতিরোধ আইনের ধারা দেওয়া হয়েছে।
তফসিলি ও জনজাতিদের উপর নিপীড়ন প্রতিরোধে ১৯৮৯ সালে ওই বিশেষ আইন প্রণয়ন হয়। আইনজীবী মহলের একাংশ মানছেন, অনেক সময় আইনের অপপ্রয়োগ হয়। উল্লেখ্য, গত বছর গড়শালবনিতে মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদার গাড়িতে হামলার মামলাতেও এই ধারাটি যুক্ত করা হয়েছিল। কুড়মি আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা প্রায় দেড় মাস জেলবন্দি ছিলেন।
মঙ্গলবার দুপুরে রগড়ার কাঠুয়াপালের রাস্তায় পদ্মপ্রার্থী প্রণত টুডুর উপর তৃণমূলের লোকজন হামলা চালায় বলে অভিযোগ। বুধবার সকালে ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল থেকে প্রণতকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ওই ঘটনায় বিজেপির জেলা সভাপতি তুফান মাহাতো সাঁকরাইল থানায় যে অভিযোগ করেছেন তাতে দাবি, হামলা, মারধর, খুনের চেষ্টা, মহিলা কর্মীদের শ্লীলতাহানির পাশাপাশি বিজেপি প্রার্থীর জাত তুলে গালিগালাজ করে তৃণমূলের লোকেরা। সাঁকরাইলের হাড়পড়্যা গ্রামের তৃণমূল কর্মী পটল টুডু পুলিশে অভিযোগ জানিয়ে পাল্টা দাবি করেছেন, তাঁরা তৃণমূলের পতাকা লাগানোর সময় বিজেপির লোকজনই প্রথম হামলা চালিয়েছে, তৃণমূল প্রার্থী কালীপদ সরেনের নাম করে জাত তুলে গালিগালাজ করেছে। পটল- সহ জনজাতি তৃণমূল কর্মীদের জাত তুলে গালিগালাজও নাকি করা হয়।
ঝাড়গ্রাম আদালতের প্রবীণ আইনজীবী কৌশিক সিনহার মতে, ‘‘রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিশেষ আইনটির অপপ্রয়োগ হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে এই আইনটি তফসিলি ও জনজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষের কল্যাণে প্রণীত হয়েছিল। সদর্থক প্রয়োগের অভাবে বিচারাধীন মামলাগুলিতে প্রমাণের অভাবে অভিযুক্তরা বেকসুর খালাস হচ্ছেন।’’ ঝাড়গ্রাম আদালতের সরকারি আইনজীবী অনিল মণ্ডলের কথায়, ‘‘বিশেষ আইনের অপপ্রয়োগ হয়েছে কি-না সেটা তদন্ত সাপেক্ষ। তবে তফসিলি ও জনজাতি নিপীড়ন আইনে দায়ের হওয়া মামলায় কেবলমাত্র ডিএসপি পদমর্যাদার অফিসারই তদন্তকারী অফিসার হন। এছাড়া বিশেষ আদালতে মামলার বিচার হয়। গ্রেফতারের পর অভিযুক্তদের বিশেষ আদালতে তোলা হয়।’’
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের মতে, বিশেষ আইনের ধারা প্রয়োগের ক্ষেত্রে সকলেরই সতর্ক থাকা প্রয়োজন। তবে এ নিয়ে চাপানউতোর চলছে। বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য সুখময় শতপথী বলছেন, ‘‘প্রকৃত ঘটনা আড়াল করতে তৃণমূল ভুয়ো অভিযোগ দায়ের করেছে।’’ জেলা তৃণমূলের সভাপতি দুলাল মুর্মুর দাবি, ‘‘বিজেপি বরাবর জাতপাতের রাজনীতি করে। ভোটের মুখেও ওরা আগুন নিয়ে খেলতে চাইছে। এতে ওদেরই হাত পুড়বে।’’ সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য পুলিনবিহারী বাস্কে আবার বলেন, ‘‘সন্দেশখালিতে নির্যাতনে এই বিশেষ আইন প্রয়োগ হয়নি। মণিপুরেও বিশেষ আইনের ধারা প্রয়োগ করা হয়নি। আসলে বিশেষ আইনকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করছে বিজেপি ও তৃণমূল।’’
এ দিকে, বিজেপির অভিযোগের ভিত্তিতে বুধবার সকালে সত্যবান ঘোড়াই ও হেমন্ত পাতর নামে দুই তৃণমূল কর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ দিন রামনবমীর ছুটি থাকায় অভিযুক্তদের বিশেষ আদালতো তোলা যায়নি। ঝাড়গ্রাম সিজেএম আদালতে হাজির করা হলে তাদের জেলহাজতে পাঠান বিচারক। জেলা পুলিশ সুপার অরিজিৎ সিনহা বলেন, "বৃহস্পতিবার দুই অভিযুক্তকে বিশেষ আদালতে হাজির করে তদন্তের স্বার্থে হেফাজতে নেওয়ার আবেদন করা হবে।’’ হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে ঝাড়গ্রামের বাড়িতে বিশ্রামে রয়েছেন প্রণত। ফোনে তিনি বলেন, ‘‘জ্বর আছে। তাই রামনবমীর শোভাযাত্রায় যেতে পারিনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy