—প্রতীকী চিত্র।
একশো দিনের কাজের বকেয়া টাকার দাবি নিয়ে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে টানা সরব হয়েছে শাসক দল তৃণমূল। রাজ্য সরকার মেটানোর পর সেই টাকা মারধর করে ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠল সেই শাসক দলের দুই কর্মীর বিরুদ্ধেই। রামপুরহাটের আয়াস অঞ্চলের পানিসাইল গ্রামের ওই ঘটনায় শাসক দলকে বিঁধেছে বিরোধীরা। ‘পরিস্থিতি সামলাতে’ মঙ্গলবার কোর কমিটির বৈঠকের পরে অভিযুক্তদের বহিষ্কার করেছে তৃণমূল।
গত ১৪ মার্চ পানিসাইল গ্রামের নুরজামান শেখ নামে এক জবকার্ডধারী রামপুরহাট থানায় অভিযোগ করেন, গ্রামেরই দুই তৃণমূলকর্মী আকাশ শেখ ও কাজিরুল ইসলাম তাঁর বাড়িতে ঢুকে মারধর করেন। তাঁর কাছ থেকে একশো দিনের মজুরির দু’হাজার টাকাও ছিনিয়ে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ দায়ের করেন নুরজাহান। তাঁর দাবি, বাকি টাকাও দেওয়ার জন্য হুমকি দেওয়া হয়।
স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব প্রথমে ঘটনার কথা জানা নেই বলে দাবি করেছিলেন। পরবর্তীতে সোমবার পানিসাইল গ্রামের মহিলারাও বিডিওর (রামপুরহাট ১) কাছে অভিযোগে জানান, তাঁদেরও একশো দিনের টাকা থেকে কাটমানি দেওয়ার জন্য হুমকি দেওয়া হয়েছে। বিডিওর কাছে মহিলাদের অভিযোগ জমা পড়ার পরে তৃণমূলের আয়াস অঞ্চলের সভাপতি আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘‘ঘটনায় দলের কেউ জড়িত থাকলে পুলিশ তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক।’’
এ দিন মঙ্গলবার সিউড়িতে কোর কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে রামপুরহাটের বিধায়ক তথা তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যান আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "অভিযুক্তরা তৃণমূলেরই কর্মী বলে জানা গিয়েছে৷ কিন্তু আমরা কোনও রকম দুর্নীতি বরদাস্ত করছি না। তাই অভিযোগ হওয়ার পরেই আমরা পুলিশকে কড়া ব্যবস্থা নিতে বলেছি। আকাশ শেখ এবং কাজিরুল ইসলাম নামে ওই দুই কর্মীকে বরখাস্ত করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোর কমিটি।’’ পুলিশ ঘটনায় অভিযুক্তদের এখনও গ্রেফতার করেনি। প্রশাসন সূত্রে দাবি, ঘটনা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানান, অভিযুক্তদের নোটিস পাঠানো হয়েছে।
ঘটনা হল, আয়াস এলাকা নিয়ে তৃণমূলের মাথাব্যথা চলছে বেশ ক’মাস ধরেই। পঞ্চায়েত নির্বাচনে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে তৎকালীন অঞ্চল সভাপতি আকবর আলমকে তাঁর পদ থেকে অপসারিত করে দল। তখনও মাথাচাড়া দিয়েছিল গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। সেই আকবরের এ বারও বলছেন, ‘‘দলের বদনাম করার জন্য কেউ কেউ এই সমস্ত করছে। যে সমস্ত মহিলারা বিডিওর কাছে অভিযোগ করেছেন তারা কেউই ১০০ দিনের কাজে যুক্ত নন। তাঁরা মিথ্যে অভিযোগ করছেন।’’
তবে দলের অন্দরের খবর, আয়াসের ঘটনা জেলা তৃণমূলকে নেতৃত্বকে কিছুটা হলেও অস্বস্তিতে ফেলেছে। তড়িঘড়ি অভিযুক্তদের বহিষ্কারই তার প্রমাণ বলে দাবি বিরোধীদের। আয়াস অঞ্চলের ঘটনার পরে অন্য অঞ্চল নেতৃত্বও দলের কর্মীদের সতর্ক করে দিয়েছেন বলে তৃণমূল সূত্রে দাবি। নারায়ণপুর অঞ্চলের তৃণমূল সভাপতি মিলন শেখ বলেন, ‘‘আমরা এই ধরনের ঘটনাকে প্রশ্রয় দিই না। এমন কোনও ঘটনা ঘটলে উপভোক্তাদের সরাসরি পঞ্চায়েতে অভিযোগ জানাতে বলা হয়েছে। পঞ্চায়েত আইন অনুযায়ী পুলিশ প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।’’
কাটমানি বিতর্কে শাসক দলকে বিঁধেছে বিরোধীরা। সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য সঞ্জীব বর্মণ বলেন, ‘‘পানিসাইলের মতো অন্য গ্রামেও এ ভাবে তৃণমূলের লোকজন গরিব খেটে খাওয়া মানুষদের কাছ থেকে কাটমানি নিচ্ছে। এর মধ্যে কিছু অভিযোগ সামনে আসছে কিছু সামনে আসে না।’’ বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য শুভাশিস চৌধুরী বলেন, ‘‘তৃণমূল যে লুটেরাদের দল তা আয়াসের ঘটনায় বড় প্রমাণ।’’
আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা এমন ঘটনা কোনও দিন বরদাস্ত করি না। যেই জড়িত থাকুক তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে বলা হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy