Advertisement
Back to
Lok Sabha Election Results 2024

ভোট মিটতেই হিংসা জেলায় জেলায়! কোথাও মার খেল বিজেপি, কোথাও তৃণমূল, উত্তেজনা গোষ্ঠীকোন্দলেও

রাজ্যের দক্ষিণের অধিকাংশ জেলা থেকে এসেছে ভোট পরবর্তী অশান্তির খবর। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও হুগলিতে তৃণমূলের হাতেই আক্রান্ত হয়েছে তৃণমূল।

হিংসা-চিত্র। ছবিতে বাঁ দিকে পূর্ব বর্ধমানে বিস্ফোরণ। ডান দিকে ঘাটালে দুর্ঘটনাগ্রস্ত বাইক।

হিংসা-চিত্র। ছবিতে বাঁ দিকে পূর্ব বর্ধমানে বিস্ফোরণ। ডান দিকে ঘাটালে দুর্ঘটনাগ্রস্ত বাইক। — নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০২৪ ২৩:০১
Share: Save:

ভোটের ফলপ্রকাশের পরে রাজ্য জুড়ে শুরু হয়েছে বিক্ষিপ্ত অশান্তির ঘটনা। কোথাও তৃণমূল কর্মীকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তো কোথাও সিপিএম সমর্থকের দোকানে চালানো হচ্ছে যথেচ্ছ ভাঙচুর। এমনকি, স্বয়ং রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও বাদ যাননি। বৃহস্পতিবার তাঁর গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ দেখানো হয় বসিরহাটের মিনাখায়। এ ছাড়া হাওড়া, হুগলি দুই দিনাজপুর, দুই বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ, বাঁকুড়া, বীরভূম, দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকেও এসেছে ভোট পরবর্তী বিক্ষিপ্ত অশান্তির খবর। অধিকাংশ এলাকাতেই দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও হুগলিতে তৃণমূলের হাতেই আক্রান্ত হয়েছে তৃণমূল।

হাওড়ায় বিজয় মিছিলে ত্রাস!

জয়ের আনন্দে বেসামাল তৃণমূল কর্মীরা হামলা চালাচ্ছেন বিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মী এবং সমর্থকদের উপর। হাওড়ায় একই ধরনের এমন তিনটি ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ। বুধবার রাতে হাওড়ার বাঁকড়া, জগৎবল্লভপুর এবং সাঁকরাইলে আলাদা আলাদা বিজয় মিছিল করেছিল রাজ্যে সদ্য লোকসভা ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া তৃণমূল। অভিযোগ, মিছিলে যোগদানকারীরাই হামলা চালান এলাকার সিপিএম এবং আইএসএফ কর্মী উপর। জগৎবল্লভপুরের ইছানগরী এলাকার এক আইএসএফ কর্মীর অস্থায়ী দোকান ভেঙে নয়নজুলিতে ফেলে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। বাঁকড়ার সানাপাড়ায় সিপিএমের বুথ এজেন্টের দোকানে ভাঙচুর চালানো হয়। সাঁকরাইলে কোরোলাতেও সিপিএম বুথ এজেন্টের বাড়িতে দেড়শো-দু’শো তৃণমূল কর্মী চড়াও হন বলে অভিযোগ। ভাঙচুর চালানোর পাশাপাশি তাঁরা মহিলাদেরও অসম্মানও করেন বলে অভিযোগ।

বর্ধমানে শংসাপত্রও নিয়ে গেল তৃণমূল!

পূর্ব এবং পশ্চিম বর্ধমানের সবক’টি লোকসভা আসনেই জয়ী হয়েছে তৃণমূল। তার পর থেকেই নানা রকম অশান্তির খবর আসতে শুরু করেছে জেলা থেকে। বৃহস্পতিবার পূর্ব বর্ধমানে বিজেপির জেলা অফিসে ইট এবং লাঠি নিয়ে হামলার অভিযোগ ওঠে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। অন্য দিকে, পশ্চিম বর্ধমানের বিজেপি নেতাদের অভিযোগ, ফল প্রকাশের পর থেকেই তৃণমূলের সমর্থক এবং কর্মীরা যথেচ্ছাচার শুরু করেছেন বিভিন্ন এলাকায়। আসানসোলের বরাবনিতে বিজেপির যুব মোর্চার নেতা খোকন মহারাজকে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। পুলিশকে খোকন জানিয়েছেন, দুষ্কৃতীদের বাধা দিতে এলে তাঁকেও মারধর করা হয়। অন্য দিকে, দুর্গাপুরের আর্টারিয়াল রোডে বিজেপি বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘড়ুইয়ের কার্যালয়ে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগও ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। লক্ষ্মণ জানিয়েছেন, তাঁর অফিসের তালা ভেঙে ল্যাপটপ, কম্পিউটার সেট, প্রিন্টার-সহ বিধায়কের স্বাক্ষর করা বিভিন্ন শংসাপত্রও নিয়ে পালায় তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা। তাঁর হুঁশিয়ারি, শংসাপত্র না পেলে তিনি বড় আন্দোলনের পথে হাঁটবেন! তৃণমূল অবশ্য সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে। থানায় গিয়েছে দু’পক্ষই।

দিনাজপুরে মার খেল তৃণমূল

উত্তরের দুই দিনাজপুরে দুই চিত্র। দক্ষিণ দিনাজপুরে বিজেপি কর্মীর দোকানে হামলা হল, উত্তরে মার খেলেন তৃণমূল কর্মী। দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর পুরসভা এলাকার নিউ মার্কেটে একটি চশমার দোকানে ঢুকে ভাঙচুর চালায় দুষ্কৃতীরা। দোকানদারকেও টেনে বাইরে বার করে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। ওই ব্যক্তি বিজেপির সমর্থক। অভিযোগ, দুষ্কৃতীরা মারধর করার সময়ে তাঁকে প্রশ্ন করে, বিজেপিকে কেন ভোট দিয়েছেন তিনি। এই ঘটনায় পুলিশে অভিযোগ দায়ের হয়েছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। এ দিকে, দক্ষিণ দিনাজপুরের চোপড়ায় তৃণমূল কর্মীদের বেধড়ক মারধর করে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেছে তৃণমূল। দু’জন তৃণমূল কর্মীকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়। পরে পুলিশ পৌঁছয় ঘটনাস্থলে। বিজেপি যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে।

মেদিনীপুরে জ্বলল চায়ের দোকান

বুধবারের অশান্তি এবং বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার পরে অপেক্ষাকৃত শান্ত ছিল পূর্ব মেদিনীপুর। তবে পশ্চিম মেদিনীপুরে বৃহস্পতিবারও জারি রইল অশান্তি। এই জেলার দু’টি আসন ঘাটাল এবং মেদিনীপুরে জিতেছে তৃণমূল। বৃহস্পতিবার অশান্তির অভিযোগ এসেছে ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত সবং এবং মেদিনীপুরের নারায়ণগড় থানার যমুনা গ্রাম থেকে। যমুনাগ্রামে বিজেপি করার ‘অপরাধে’ বিজেপির দুই কর্মী সমর্থক দম্পতির বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুর চালায় দুষ্কৃতীরা। তাঁদের চায়ের দোকানেও আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। এই ঘটনায় অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সবংয়ে এক বিজেপি কর্মীকে রড এবং লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়। বিজেপি কর্মী পুলিশকে জানিয়েছেন, তাঁর স্ত্রী তাঁকে বাঁচাতে এলে তাঁকেও মারধর করা হয়। পুলিশ এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।

মুর্শিদাবাদে পটকার আগুন

মুর্শিদাবাদে তৃণমূলের বিজয় মিছিল থেকে কংগ্রেস নেতার বাড়িতে গিয়ে পড়়ল পটকাবাজি। তাতে বাড়ির পাটকাঠির ছাদে দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে আগুন। অল্পের জন্যে প্রাণে বাঁচে ২ শিশু সহ ১ মহিলা। সুতির সাহাপাড়ায় ঘটেছে এই ঘটনা।

উপপ্রধানের স্বামীকে মার নদিয়ায়

ভোটের ফল প্রকাশের পরে নদিয়ায় খুন হয়েছেন এক তৃণমূল কর্মী। বোমা হামলার শিকার হয়েছেন বিজেপির বুথ সভাপতি। বৃহস্পতিবার পানিঘাটায় বিজেপি উপপ্রধানের স্বামীকে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক লাঠিপেটা করার অভিযোগ উঠল তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে। আহতকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলেও গ্রেফতার করেনি কাউকে।

বাঁকুড়ায় গুঁড়িয়ে গেল বিজেপির কার্যালয়

লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকেই দফায় দফায় উত্তেজনা বিষ্ণুপুর লোকসভার অন্তর্গত পত্রসায়েরে। মঙ্গলবার রাতে আচমকাই একদল দুষ্কৃতী হামলা চালায় বিজেপির নারায়ণপুর অঞ্চল কার্যালয়ে। নির্বিচারে ওই দলীয় কার্যালয়ের অ্যাসবেস্টসের চাল ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় কার্যালয়ের ভেতরে থাকা আসবাব, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম এমনকি, বিজেপির নেতা-নেত্রীর ছবিও। পরে কাঁকরডাঙ্গা এলাকাবাসী বিজেপির প্রাক্তন মন্ডল সভাপতি তথা বর্তমান বিজেপির বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সম্পাদক তমাল কান্তি গুঁই-এর বাড়ি ইটবৃষ্টি করার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে।

বীরভূমে বন্ধ হল জল

বীরভূমের দুই লোকসভা কেন্দ্র বোলপুর এবং বীরভূমের দু’টিতেই জিতেছেন তৃণমূল প্রার্থী অসিতকুমার মাল এবং শতাব্দী রায়। শতাব্দীর জয়ের খুশিতে যেখানে অনুব্রত মণ্ডলের ভক্তেরা গুড়-বাতাসা-নকুলদানা নিয়ে আনন্দে মেতেছেন, সেখানে অসিতের সমর্থকদের দেখা গিয়েছে বোমা বাঁধা এবং বোমা ফাটানোর ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে প্রকাশ করতে। এ দিকে রামপুরহাটের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে জল পরিষেবা। এলাকাবাসীদের অভিযোগ, ওই পুর এলাকায় বিজেপি বেশি ভোট পেয়েছে বলেই এই ব্যবস্থা। বীরভূমের কীর্ণাহারে আবার ভোট পরবর্তী হিংসার আশঙ্কায় রুট মার্চ করানো হয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে। তাতেও আতঙ্ক ছড়িয়েছে এলাকায়।

হুগলিতে তৃণমূল বনাম তৃণমূল

দলের প্রার্থী জিতেছেন। তা সত্ত্বেও হুগলিতে দুই তৃণমূল নেতার মধ্যে ধুন্ধুমার। ঘটনাটি ঘটেছে কোন্নগরে। বুধবার রাতে কোন্নগর পুরসভার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের মাস্টার পাড়ার একটি ক্লাবে খাওয়াদাওয়ার আয়োজন করা হয় তৃণমূল নেতৃত্বের পক্ষ থেকে। সেখানেই দুই তৃণমূল কর্মী থালা আনতে বেরিয়ে রাস্তার মধ্যে বচসায় জড়ান। এক জন আর এক জনকে ধাক্কা মেরে স্কুটি থেকে ফেলে দিয়ে বন্দুকের বাঁট দিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেন বলে অভিযোগ। অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের কাউন্সিলের বিশ্বরূপ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে। আক্রান্ত হয়েছেন তৃণমূল নেতা দিব্যেন্দু ভট্টাচার্যের অনুগামী দুই জন। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিশ্বরূপ।

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election Results 2024
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy