শনিবার শিলিগুড়ির মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে কলকাতা হাই কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় । ছবি: ফেসবুক।
প্রধানমন্ত্রী পশ্চিমবাংলায় প্রবেশ করার অনেক আগেই শিলিগুড়ি পৌঁছে গিয়েছিলেন প্রাক্তন বিচারপতি তথা নবীন বিজেপি নেতা অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। বাগডোগরা বিমানবন্দর থেকে স্বাগত জানিয়ে অভিজিৎকে মঞ্চে নিয়ে যান শিলিগুড়ির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। নরেন্দ্র মোদী মঞ্চে আসার আগে রাজ্য বিজেপির অন্যান্য নেতার মতো তিনিও কিছুক্ষণ বক্তৃতা করার সুযোগ পান। তবে অনভ্যাসের সেই বক্তৃতায় তেমন ‘ঝাঁজ’ ছিল না। যদিও তৃণমূলকে ‘দুর্নীতিপরায়ণ’ বলে আক্রমণ করেন তিনি।
তবে অভিজিতের আসল অপেক্ষা ছিল মোদীর জন্য। প্রথম বার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছাপূরণ হয়েছে তাঁর। কাছাকাছি বসার সুযোগও পেয়েছেন। মোদীর বাড়ানো হাত নিজের দু’হাতে ধরে নিজের কপালে ছুঁইয়েছেন। আর একেবারে সভার শেষে মোদীর কাছ থেকে সাহসের শংসাপত্রও পেলেন কলকাতা হাই কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি।
শনিবার অসম এবং অরুণাচল সফর সেরে শিলিগুড়ি পৌঁছতে কিছুটা দেরি হয় মোদীর। এর পরে সরকারি কর্মসূচির আগে ১২ কিলোমিটার রোড শো হয় শিলিগুড়ি শহরে। মোদী পরে বলেন, ওই রোড শোয়ের তেমন কোনও পূর্ব পরিকল্পনা ছিল না। ঠিক ছিল, বিমানবন্দরে নেমে তিনি সড়কপথে কাওয়াখালিতে কর্মসূচির মঞ্চে আসবেন। কিন্তু রাস্তার পাশে মানুষের উৎসাহ দেখে তিনিই চালককে বলেন, ধীরে গাড়ি চালাতে।
সরকারি কর্মসূচির মঞ্চ থেকে নেমে শেষে প্রধানমন্ত্রী যখন বিজেপির দলীয় মঞ্চে ওঠেন, তখন সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়েছে। সেই অস্তগামী সূর্যই সাক্ষী থাকল একটি দৃশ্যের। মঞ্চের মধ্যমণি মোদীর বাঁ দিকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ডান দিকে বসেছিলেন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। সুকান্তের পাশের আসনেই অভিজিৎ। মোদী নিজের আসনে বসতেই শুভেন্দু প্রধানমন্ত্রীর পরিচয় করিয়ে দেন অভিজিতের সঙ্গে। মোদী হাত বাড়িয়ে দেন করমর্দনের জন্য। অভিজিৎ শুধু হাত মিলিয়ে ক্ষান্ত থাকেননি। আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে দু’হাতে মোদীর বাড়ানো হাত ধরে নিজের কপালে ছোঁয়ান।
বিজেপিতে তিনি যোগ দিয়েছেন সবে বৃহস্পতিবার। তিন দিনের মাথায় মোদীর সভায় ডাক পেয়ে নতুন সাজেই গিয়েছিলেন অভিজিৎ। সাদা পাজামার উপর গেরুয়া পাঞ্জাবি। তার উপরে মোদী জ্যাকেট এবং ঘিয়ে রঙের উত্তরীয়। সকালেই সভায় যাওয়ার পথে আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেছিলেন, ‘‘আমি অভিভূত, আমার শিহরন হচ্ছে। এই প্রথম ওঁকে আমি কাছ থেকে দেখব।’’ মোদীর সঙ্গে কথা বলবেন? অভিজিৎ বলেছিলেন, ‘‘অবশ্যই কথা বলার চেষ্টা করব। বিজেপি যে ভাবে আমাকে বুকে টেনে নিয়েছে তাতে আমি অভিভূত।’’
শিহরন যে বাস্তবিকই তাঁর মধ্যে ছিল, তা অভিজিতকে মঞ্চে দেখে বোঝাও গিয়েছে। সভার শুরুতে মোদী ওই ভাবে যে তাঁর দিকে হাত বাড়িয়ে দেবেন, সেটা সম্ভবত তাঁর ভাবনার মধ্যে ছিল না। কিন্তু তখন কথা বলার সুযোগ পাননি। সেই সুযোগ এসে গেল সভা শেষের পরে। মঞ্চ থেকে নামার আগে মঞ্চাসীনদের নমস্কার জানাতে জানাতে এগিয়ে যাওয়ার সময়ে দলের ‘বিক্ষুব্ধ’ সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জন বার্লার পিঠে হাত দিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। এর পরেই অভিজিতের হাত দু’টি ধরে তাঁর সঙ্গে কথা বলেন মোদী। কী বললেন মোদী? কাছেই দাঁড়িয়ে থাকা বিজেপি নেতারা জানিয়েছেন, মোদী অভিজিতের সাহসের প্রশংসা করেছেন। বলেছেন, ‘‘আপনে বহত হিম্মত দিখায়া।’’ অর্থাৎ, বিচারপতি থাকার সময়ে অভিজিৎ প্রচুর সাহস দেখিয়েছেন বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। শনিবার শিলিগুড়িতে আরও একটি দৃশ্য নজর কেড়েছে। মোদী তাঁর বক্তৃতায় যখন রামমন্দির তৈরির ‘গৌরব’ নিয়ে কথা বলছিলেন, তখন বাকিদের সঙ্গে অভিজিৎকেও দু’হাত তুলে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দিতে দেখা গিয়েছে।
তবে অভিজিৎ বক্তৃতা করার সময়ে ঘটনাচক্রে একটু বিভ্রাটও ঘটে মঞ্চে। পোডিয়ামের সামনে বিজেপির প্রতীক থার্মোকলের পদ্ম দিয়ে সাজানো ছিল। অভিজিৎ বলতে শুরু করার পরেই সেটি খসে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গেই পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ফালাকাটার বিধায়ক তথা রাজ্য সাধারণ সম্পাদক দীপক বর্মণ সেটি লাগিয়ে দেন। কিন্তু তাতেও পদ্ম পোডিয়ামে লেগে থাকেনি। অভিজিতের বক্তৃতার সময়ে ফের খসে পড়ে। শেষে অবশ্য দু’জন নেতা দু’দিক থেকে সেটিকে ধরে রেখেছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy