আরামবাগ লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী মিতালী বাগ। নিজস্ব চিত্র।
দু’বারের সাংসদ অপরূপা পোদ্দারকে আর আরামবাগ আসনে প্রার্থী করল না তৃণমূল। মা-মাটি-মানুষের স্লোগান দেওয়া দল পরিবর্তে প্রার্থী করল এই মহকুমারই ‘ভূমিকন্যা’, মাটির বাড়ির বাসিন্দা মিতালি বাগকে। পেশায় যিনি অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী। বর্তমানে হুগলি জেলা পরিষদের সদস্য, গোঘাট ২ ব্লক মহিলা তৃণমূলের সভানেত্রী। পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যের দায়িত্বও সামলেছেন এক সময়ে। তবে, জেলা তৃণমূলে তিনি অনেকেরই ‘অপরিচিত’।
বিজেপির বাড়বাড়ন্তে তৃণমূলের কাছে আরামবাগ ‘শক্ত’ আসন। এখানে কম পরিচিত প্রার্থীকে নিয়ে দলের নেতারা দোলাচলে। ‘কমজোরি’ প্রার্থীর জয় কতটা সুনিশ্চিত, তা নিয়ে দলের এক পক্ষ সংশয়ে। অন্য পক্ষের আশা, তৃণমূল স্তর থেকে প্রার্থী তুলে আনার সিদ্ধান্তই ‘বাজিমাত’ করবে। ‘প্রতিবাদী ভাবমূর্তি’র জেরেই মিতালি টিকিট পেলেন বলেও মনে করছেন অনেকে। নিজের দলেরই নেতা এবং দল পরিচালিত হাজিপুর পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে একাধিক বার বেআইনি ভাবে গাছ কাটা, দুর্নীতি, অন্যের দলীয় কার্যালয় দখল ইত্যাদি নিয়ে সরব হয়েছেন মিতালি। নির্দিষ্ট জায়গায় লিখিত অভিযোগও করেছেন।
দলের জেলা চেয়ারম্যান স্বপন নন্দীর প্রতিক্রিয়া, ‘‘দলনেত্রী তৃণমূল স্তর থেকে সাধারণ কর্মী হিসাবে ধাপে ধাপে জেলা পরিষদ স্তর পর্যন্ত উঠে আসা জনপ্রতিনিধিকে তুলে আনায় আমরা খুশি। মানুষও খুশি হবেন।’’ একই বক্তব্য দলের জেলা যুব সভাপতি পলাশ রায়েরও। তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে মিতালির সঙ্গে দল করা গোঘাটের নেতা প্রদীপ রায়ের কথায়, ‘‘সৎ এবং প্রতিবাদী মেয়ে মিতালির কাজকর্ম এত দিন একটি নির্দিষ্ট গণ্ডিতেই সীমাবদ্ধ ছিল। এ বার পুরো লোকসভার মানুষ সুফল পাবেন।’’
তবে, তৃণমূলেরই অন্য অংশের বক্তব্য, আরামবাগ আসন বের করতে যেমন প্রার্থী দরকার ছিল, সেই স্তরের প্রার্থী মিতালি নন। আরামবাগ সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের এক নেতা বলেন, ‘‘মনে হচ্ছে আসনটা বিজেপিকে উপহার দিল আমাদের দল। এমন প্রার্থী দরকার ছিল, যাঁর নামেই কর্মীরা দলের সমস্ত অপকীর্তি, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ভুলে ভোটের কাজে ঝাঁপাবেন। সেটা হল না।’’
২০১৯ সালে অপরূপা জিতেছিলেন মাত্র ১১৪২ ভোটে। ’২১ সালের বিধানসভা ভোটে আরামবাগ মহকুমার চারটি আসনেই (পুরশুড়া, খানাকুল, আরামবাগ ও গোঘাট) জেতে বিজেপি। এ বার মিতালি নিজের জয় নিয়ে নিশ্চিত। তাঁর কথায়, ‘‘সকালে বাড়ি থেকে বেরোনোর সময়েও জানতে পারিনি, আমাকে প্রার্থী করা হবে। আমি উচ্ছ্বসিত। জয় ১০০ শতাংশ নিশ্চিত।’’
বছর আটচল্লিশের মিতালি অবিবাহিত। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে এমএ পাশ করেন ২০০১ সালে। গোঘাটের হাজিপুর পঞ্চায়েতের দাতপুর গ্রামে মাটির দোতলা বাড়িতে থাকেন। তিনি প্রার্থী হওয়ায় এবং নিজে টিকিট না পাওয়ায় অপরূপার প্রতিক্রিয়া, ‘‘দিদি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) যা করেছেন, নিশ্চয়ই দলের এবং আমার ভালর জন্যই। আরামবাগের মানুষের যেমন পাশে ছিলাম, তেমনই থাকব।’’
মিতালিকে হালকা ভাবেই নিচ্ছে বিজেপি। আরামবাগ সাংগঠনিক জেলা বিজেপি সভাপতি বিমান ঘোষের মন্তব্য, ‘‘তৃণমূল জানে, আরামবাগ বিজেপির শক্ত ঘাঁটি। তাই ভোটে আমাদের ওয়াকওভার দিল।’’ এতে তৃণমূল-বিজেপির ‘বোঝাপড়া’ দেখছে সিপিএম। দলের হুগলি জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের খোঁচা, ‘‘গত ১ মার্চ রাজভবনে বোঝাপড়া থেকেই প্রার্থী বাছাই হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy