অরবিন্দ কেজরীওয়াল। ফাইল চিত্র।
কাজে এল না আম আদমি পার্টির (আপ) প্রধান অরবিন্দ কেজরীওয়ালের ‘সহানুভূতির’ কার্ড! সাতে সাত আসন জিতে আবারও পদ্মের জয়ধ্বজা উড়ল দিল্লিতে। দেশ জুড়ে যেখানে গেরুয়া ঝড় ‘স্তিমিত’, সেখানে দিল্লিতে আবারও সাতটি আসনই জিতে নিল বিজেপি। তবে ভোট শতাংশ ২০১৯ সালের লোকসভার নির্বাচনের তুলনায় সামান্য কমেছে। এ বার তাদের প্রাপ্ত ভোটের হার ৫৪ শতাংশেরও বেশি। সেখানে ২০১৯ সালে তাদের প্রাপ্ত ভোটের হার ছিল ৫৬.৯ শতাংশ। দেশের বেশির ভাগ রাজ্যে ‘ইন্ডিয়া’ ভাল ফল করলেও দিল্লিতে কিন্তু দাঁত ফোটাতে পারেনি তারা।
এ বার দিল্লিতে ৪-৩ সমীকরণে আসন সমঝোতা হয়েছিল আপ এবং কংগ্রেসের মধ্যে। তা-ও আবার একেবারে শেষ মুহূর্তে। ছাড়বে না, ছাড়বে না করেও আপ শেষমেশ কংগ্রেসকে ৩টি আসন দিয়েছিল। আপ লড়েছিল ৪টি আসনে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল আপ এবং কংগ্রেস কেউই খাতা খুলতে পারল না। সবক’টি আসনে জয়ের ধারা অব্যাহত রাখল বিজেপিই।
‘জেল কা জবাব ভোট সে’!
এই স্লোগানকে ‘হাতিয়ার’ বানিয়ে এ বার দিল্লিতে লোকসভা নির্বাচনের ময়দানে নেমেছিল ‘ইন্ডিয়া’র শরিক আম আদমি পার্টি (আপ)। ভোটের আগেই আবগারি দুর্নীতি মামলায় মুখ্যমন্ত্রী তথা আপ প্রধান অরবিন্দ কেজরীওয়ালের জেলযাত্রা রাজধানীতে এ বারের নির্বাচনী লড়াইকে আরও বেশি আকর্ষণীয় করে তুলেছিল। ১৬ মার্চ নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণার পরে ২১ মার্চ আবগারি মামলায় এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেট (ইডি) গ্রেফতার করে কেজরীকে।
কেজরীর গ্রেফতারি নিয়ে এককাট্টা হয়েছিল বিরোধী দলগুলি তথা ‘ইন্ডিয়া’র শরিকেরা। কী ভাবে কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলিকে বিরোধী দলগুলির বিরুদ্ধে কাজে লাগাচ্ছে মোদী সরকার, কেজরীর গ্রেফতারিকে তার আরও একটি দৃষ্টান্ত হিসাবে খাড়া করে ‘সহানুভূতি’ তাস খেলার চেষ্টা করেছিল আপ। আপ এবং কংগ্রেস যেমন রাজধানীতে বিজেপির বিরুদ্ধে নেমেছিল, তেমনই বিজেপি পাল্টা নরেন্দ্র মোদীর উন্নয়ন মন্ত্র, ‘বিকশিত ভারত’ এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই নিয়ে প্রচার চালিয়েছিল। সেই প্রচারে কেজরীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগকেই বেশি করে তুলে ধরেছিল তারা।
দিল্লির সাতটি লোকসভা আসনে রফা নিয়ে শুরুর দিকে কংগ্রেসের সঙ্গে টানাপড়েন চললেও শেষমেশ একটা রফাসূত্র বেরিয়েছিল। আপ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিল, কংগ্রেসকে একটি আসন ছাড়বে তারা। কংগ্রেস আরও বেশি আসন চেয়েছিল। অবশেষে কংগ্রেসকে তিনটি আসন ছাড়তে রাজি হন কেজরী। আপ বাকি চারটি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল। চাঁদনি চক, উত্তর-পূর্ব দিল্লি এবং উত্তর-পশ্চিম দিল্লিতে প্রার্থী দিয়েছিল কংগ্রেস। আপ লড়েছিল নয়াদিল্লি, দক্ষিণ দিল্লি, পশ্চিম দিল্লি এবং পূর্ব দিল্লি আসনে।
প্রসঙ্গত, আগের দু’টি লোকসভা নির্বাচনের মতোই বিজেপি এ বারও দিল্লির সবক’টি আসনেই প্রার্থী দিয়েছিল। উল্লেখ্য, তার মধ্যে ছ’টি আসনে বিদায়ী সাংসদদের কাউকেই টিকিট দেয়নি তারা। একমাত্র উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে মনোজ তিওয়ারিকে তৃতীয় বারের জন্য প্রার্থী করেছিল পদ্মশিবির। ২০১৪ এবং ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে জিতেছিলেন মনোজ। এই কেন্দ্রেই ‘ইন্ডিয়া’র তরফে কানহাইয়া কুমারকে প্রার্থী করেছিল কংগ্রেস। নয়াদিল্লি আসনে প্রয়াত প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের কন্যা বাঁশুরি স্বরাজকে প্রার্থী করেছিল বিজেপি। এই আসনে আপের প্রার্থী ছিলেন সোমনাথ ভারতী। ঘটনাচক্রে, এই আসন থেকেই ২০১৯ সালে জিতেছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মীনাক্ষী লেখি।
চাঁদনি চকে বিজেপির প্রার্থী ছিলেন প্রবীণ খান্ডেলওয়াল। তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন কংগ্রেসের জেপি আগরওয়াল। ২০১৯ সালের নির্বাচনে এই কেন্দ্রে জিতেছিলেন বিজেপি নেতা তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হর্ষ বর্ধন। দক্ষিণ দিল্লিতে বিজেপির রামবীর সিংহ বিধুরির বিরুদ্ধে সাহিরাম পহেলওয়ালকে প্রার্থী করেছিল আপ। এই কেন্দ্রটি গুর্জর-অধ্যুষিত। ফলে দু’দলই গুর্জর সম্প্রদায় থেকে প্রার্থী দিয়েছিল বিজেপির এই ‘শক্ত ঘাঁটি’-তে। এর আগে রমেশ বিধুরি পর পর দু’টি লোকসভায় জিতেছিলেন এই কেন্দ্রে।
পশ্চিম দিল্লি আসনে কমলজিৎ শেরাওয়াতকে প্রার্থী করেছিল বিজেপি। ঘটনাচক্রে, কমলজিৎ ২০০৯ সালে কংগ্রেসের টিকিটে এই আসন থেকে জিতেছিলেন। পরে বিজেপিতে যোগ দেন। দিল্লির মেয়রের পদেও ছিলেন তিনি। এই কেন্দ্রে কমলজিতের বিরুদ্ধে আপ প্রার্থী করেছিল মহাবল মিশ্রকে। আবার উত্তর-পশ্চিম দিল্লিতে বিজেপি প্রার্থী করেছিল যোগেন্দ্র চান্দোলিয়াকে। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন উদিত রাজ। এই আসনটি তফসিলি জাতি সংরক্ষিত। ২০১৯ সালে এই আসনে জিতেছিলেন গায়ক-রাজনীতিক হংস রাজ হংস। এই আসনেই আবার ২০১৪-তে জিতেছিলেন উদিত রাজ।
পূর্ব দিল্লিতে ২০১৯ সালে বিজেপির প্রার্থী ছিলেন প্রাক্তন ক্রিকেটার গৌতম গম্ভীর। জিতেওছিলেন। কিন্তু এ বার আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সের ‘মেন্টর’ পদে যোগ দেওয়ায় তিনি দলকে জানিয়ে দিয়েছিলেন, নির্বাচনে লড়তে চান না। ফলে এই আসনে তাঁর জায়গায় বিজেপি প্রার্থী করেছিল হর্ষ মলহোত্রাকে। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আপের কুলদীপ কুমার।
২০১৪ এবং ২০১৯ সালে দিল্লির সাতটি আসনেই জিতেছিল বিজেপি। ২০১৪ সালে পদ্মের প্রাপ্ত ভোট ছিল ৪৬.৬ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে ছিল আপ। তারা পেয়েছিল ৩৩.১ শতাংশ ভোট। তৃতীয় স্থানে ছিল কংগ্রেস। তাদের প্রাপ্ত ভোট ছিল ১৫.২ শতাংশ। ২০১৯ সালের নির্বাচনেও প্রথম স্থানে ছিল বিজেপি। সে বার ২০১৪ সালের তুলনায় তাদের প্রাপ্ত ভোট ১০ শতাংশেরও বেশি বেড়েছিল। তারা পেয়েছিল ৫৬.৯ শতাংশ ভোট। তৃতীয় স্থান থেকে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছিল কংগ্রেস। তারা পেয়েছিল ২২.৬ শতাংশ ভোট। তুলনামূলক ভাবে আপের প্রাপ্ত ভোটের হার অনেকটাই কমে গিয়েছিল। তারা পেয়েছিল ১৮.২ শতাংশ ভোট।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy