—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
এ বারের ভোট যেন ওঁদের কাছে দুর্গাপুজোর চেয়েও বেশি আনন্দের, বেশি ‘অর্থবহ’।
প্রচার চলছে পুরোদমে। লক্ষ্মীলাভ হচ্ছে উত্তর ২৪ পরগনার মহিলা ঢাকিদের। এতদিন তাঁরা মূলত শারদোৎসবেই বায়না পেয়ে আসছিলেন। এ বারই প্রথম জেলায় প্রায় সব রাজনৈতিক দলের প্রচারেই (মূলত রোড শো) তাঁদের বেশি করে ডাক পড়ছে। তীব্র গরমের মধ্যেও হাসি ফুটেছে অসংখ্য মহিলা ঢাকির মুখে। আঁচল ভরছে তাঁদের। দুর্গাপুজোর সময় তাঁদের মূলত পাঁচ দিন বায়না থাকে। কিন্তু ভোটের মরসুমে ইতিমধ্যেই তাঁরা ১০-১৫ দিন করে ঢাক বাজিয়ে ফেলেছেন। আরও বায়না আসছে।
জনপ্রিয় ঢাকি শিবপদ দাসের ঢাক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে মছলন্দপুরে। নাম— ‘মহিলা কাহারবা ঢাকি সমিতি’। শিবপদর সঙ্গে প্রায় ৬০ জন মহিলা ঢাকি রয়েছেন। শিবপদ মানছেন, ভোটের প্রচারে মহিলা ঢাকিদের বায়নাপ্রাপ্তির কথা। তাঁর কথায়, ‘‘আগে প্রচারে মহিলা ঢাকিদের তেমন চাহিদা ছিল না। এ বার রাজনৈতিক দলগুলির কাছে ওঁদের চাহিদা প্রচুর। মনে হয় সাধারণ মানুষের কাছে মহিলা ঢাকিদের ঢাক বাজানো তুলনায় বেশি পছন্দের। পুরুষদের বাদ্যযন্ত্র এখন মহিলারা কাঁধে নিয়ে নাচতে নাচতে বাজাচ্ছেন, এটা দেখতে বেশি মানুষ পছন্দ করছেন।’’
কাহারবা ঢাকি সমিতি সূত্রে জানা গিয়েছে, ভোট ঘোষণার পর থেকে ৬০ জন মহিলা ঢাকির সোমবার পর্যন্ত ১৫ দিন করে বায়না হয়ে গিয়েছে। ভোট শেষ হতে এখনও বেশ কিছু দিন বাকি। মহিলা ঢাকিরা ইতিমধ্যেই দমদম, পাটুলি, গড়িয়াহাট, কেষ্টপুর, ব্যারাকপুর, বারাসত, বনগাঁ-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় বিভিন্ন দলের হয়ে প্রচারে গিয়ে ঢাক বাজিয়েছেন।
শিবপদ জানান, একদিন ঢাক বাজিয়ে এক জন মহিলা ঢাকি ৭০০-৮০০ টাকা রোজগার করছেন। দুর্গাপুজোর সময় পাঁচ দিন ঢাক বাজিয়ে এক জন মহিলা ঢাকি রোজগার করেন ৮-১০ হাজার টাকা। জেলার বাইরে, ভিন্ রাজ্যে বা বিদেশে বাজাতে গেলে আয় কিছুটা বাড়ে। পুজোর মরসুম বাদ দিলে মাসে গড়ে একজন মহিলা ঢাকি ৪ হাজার টাকা আয় করেন। তাঁদের অনেকেই রাজ্য সরকারের ‘শিল্পী ভাতা’ পান বলে জানালেন।
মহিলা ঢাকিদের মধ্যে সুলতা মালি মিস্ত্রি, বাসন্তী বিশ্বাস গাইন, মিতা বিশ্বাস, অঞ্জনা নন্দীরা জানান, সাধারণত, তীব্র গরমের সময় বায়না তেমন থাকে না। কিন্তু এ বার ভোটের মরসুমে তাঁদের চাহিদা বাড়ায় আয় হচ্ছে। তাঁদের কথায়, ‘‘ঢাক বাজিয়ে স্বামীর পাশাপাশি আমরাও সংসারের হাল ধরেছি। ছেলেমেয়ের পড়াশোনার খরচ থেকে সংসারের নানা প্রয়োজন মেটাতে পারছি। এককালীন কয়েক হাজার টাকা আয় করতে পারছি।’’
সুলতা, বাসন্তীদের এখন নাওয়া-খাওয়ার ফুরসত নেই। রোজই কোনও না কোনও দলের প্রচার কর্মসূচিতে তাঁদের যেতে হচ্ছে ঢাক কাঁধে। কেন এ বার তাঁদেরও প্রচার কর্মসূচিতে নেওয়া হচ্ছে?
সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সত্যসেবী কর বলেন, ‘‘জেলায় প্রচুর মহিলা ঢাকি রয়েছেন। তাঁরা ব্রাত্য থাকেন। সে কারণে তাঁদের প্রচারে যুক্ত করেছি। এর ফলে তাঁদের আয় বাড়বে।’’ বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি দেবদাস মণ্ডল বলেন, ‘‘আমরা বাংলার কৃষ্টি-সংস্কৃতি প্রচারে তুলে ধরতে জোর দিয়েছি। সে জন্য মহিলা ঢাকিদের যুক্ত করা হচ্ছে।’’ তৃণমূলের বনগাঁ লোকসভার প্রার্থী বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ‘‘তৃণমূল মহিলাদের সম্মান করে। মানুষ পছন্দ করেন বলেই ওঁদের আনা হচ্ছে প্রচারে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy