Advertisement
Back to
Lok Sabha Election 2024

বিদ্যুৎহীন দ্বীপে ভোটগ্রহণ জেনারেটরে ভর করে

প্রায়শই নদী গিলে খেতে আসে এই দ্বীপকে। ভাঙনের কবলে পড়ে ক্রমশ ছোট হচ্ছে দ্বীপটি। মূল ভূখণ্ড থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন ঘোড়ামারা দ্বীপকে ঘিরে রয়েছে নদী ও সমুদ্র।

ঘোড়ামারায় যাচ্ছেন ভোটকর্মীরা। নিজস্ব চিত্র 

ঘোড়ামারায় যাচ্ছেন ভোটকর্মীরা। নিজস্ব চিত্র  samareshmmm@gmail.com

সমরেশ মণ্ডল , নবেন্দু ঘোষ 
হিঙ্গলগঞ্জ, ঘোড়ামারা শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০২৪ ০৮:২১
Share: Save:

প্রযুক্তির ছোঁয়া এখনও পায়নি সুন্দরবন এলাকায় রাজ্যের অন্যতম ছোট দ্বীপ ঘোড়ামারা। শেষ দফার লোকসভা নির্বাচনে ভোট গ্রহণ কেন্দ্র হয়েছে এখানে। ভোট করানো এখানে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ প্রশাসনের কাছে।

চিরাচরিত বিদ্যুৎ ব্যবস্থা নেই গোটা দ্বীপে কোথাও। সৌর বিদ্যুতের সাহায্যে কেউ কেউ বাড়িতে আলো, পাখা চালান। সে-ও বর্ষার সময়ে টিম টিম করে চলে। কোনও বৈদ্যুতিন সরঞ্জামের বালাই নেই। ফ্রিজ, মাইক্রোওয়েভ তো দূর অস্ত। বিদ্যুৎ না থাকায় ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া কী ভাবে চলবে, তা নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে প্রশাসন জরুরি বৈঠকও সেরেছে। অবশেষে, ঘোড়ামারার ৩ হাজার ৬৭৮ জন ভোটারের ভোট দেওয়া নিশ্চিত করতে বিকল্প ব্যবস্থা নিয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন।

ঘোড়ামারা দ্বীপের নামেই একটি মাত্র গ্রাম পঞ্চায়েত ঘোড়ামারা। ওই পঞ্চায়েতের চারটি বুথ রয়েছে। জনসংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজারের কাছাকাছি। দ্বীপের চারটি বুথে ভোট গ্রহণ নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে চালানোর জন্য জেনারেটর ভাড়া করা হয়েছে। ভোটের দিন এবং তার আগের দিন এক নাগাড়ে চলবে জেনারেটরগুলি। শুক্রবার সাগরের চৌরঙ্গী হাই স্কুলের ডিসিআরসি সেন্টার থেকে চারটি বুথের ভোট কর্মীরা লঞ্চে করে ঘোড়ামারা দ্বীপে পৌঁছে গিয়েছেন। যাওয়ার সময়ে ভারী বৃষ্টি হলেও খুব একটা সমস্যা হয়নি বলে জানান ভোটকর্মীরা।

প্রায়শই নদী গিলে খেতে আসে এই দ্বীপকে। ভাঙনের কবলে পড়ে ক্রমশ ছোট হচ্ছে দ্বীপটি। মূল ভূখণ্ড থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন ঘোড়ামারা দ্বীপকে ঘিরে রয়েছে নদী ও সমুদ্র। এক দিকে বটতলা, মুড়িগঙ্গা ও হুগলি নদী। অন্য দিকে, বঙ্গোপসাগর। ঘোড়ামারার একটি অংশ লোহাচরা তলিয়ে গিয়েছে আগেই। খাসিমারাও অনেকটা ছোট হয়ে গিয়েছে। স্রোতের আঘাতে ক্রমশ ছোট হয়ে যাচ্ছে পাত্রপাড়া, গিরিপাড়া, মাইতিপাড়া, চুনপুরির মতো গ্রামগুলি। সরকারি তথ্য বলছে, লোকসংখ্যাও কমে গিয়েছে আগের থেকে অনেকটাই। বর্তমানে ১১২৫টি পরিবারের বাস ওই দ্বীপে।

নিত্য দিন আতঙ্ক নিয়ে বাস করেন বাসিন্দারা। এই দ্বীপে বিদ্যুতের সমস্যা নিয়ে বিস্তর অভাব অভিযোগ আছে। কিন্তু তবুও ভোট দিতে কখনও পিছপা হননি গ্রামবাসীরা। তাঁরা জানান, বছরের বেশিরভাগ সময়ে দুর্যোগ মাথায় নিয়ে বসবাস করতে হয়। কিন্তু ভোট তো পাঁচ বছরে এক বার আসে। নাগরিক অধিকার প্রয়োগের এই সুযোগ হাতছাড়া করতে চান না কেউই।

প্রশাসন সুত্রে জানা গিয়েছে, আইআইটি খড়গপুর থেকে সোলার প্যানেল গ্রিড বসানো হয়েছে। কিন্তু সেটা এখনও চালু হয়নি। বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা এখানে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে পারছে না। ভৌগোলিক অবস্থান ও অন্যান্য কারণে খুঁটি বা তার টানা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানা গিয়েছে। তাই ভোটের দিন জেনারেটরই একমাত্র ভরসা।

সাগরের বিডিও কানাইয়াকুমার রায় বলেন, ‘‘৩১মে ভোটকর্মীরা ভোটকেন্দ্রে পৌঁছে গিয়েছেন। শুক্রবার সন্ধ্যা থেকেই জেনারেটর চালু করা হয়েছে। আজ, শনিবার দিনভর চলবে ভোট। তাই সে সময় বিরামহীন ভাবেই জেনারেটর চলবে। তবে শুধু বিদ্যুতের সমস্যা নয়, এখানে মোবাইল নেটওয়ার্কও ঠিক মতো নেই। ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থাও বিচ্ছিন্ন।

আগের নির্বাচনগুলিতে প্রিসাইডিং অফিসারকে পঞ্চায়েত অফিসে এসে প্রতি ঘণ্টার ভোটদানের সংখ্যা জানাতে হয়েছে। সব মিলিয়ে এই দ্বীপে সুষ্ঠু ভাবে ভোট করানো এক প্রকার চ্যালেঞ্জ বলেই মনে করছে প্রশাসন।

সুন্দরবনের আর এক প্রান্ত সন্দেশখালি-সহ আশপাশের দ্বীপগুলিতে চিরাচরিত বিদ্যুৎ ব্যবস্থা থাকলেও লো-ভোল্টেজের সমস্যা আছে মারাত্মক ভাবে। ভোটের দিন এই সমস্যায় বা লোডশেডিং হলে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে নজরদারি যাতে জারি থাকে, সে জন্য জেনারেটরের ব্যবস্থা থাকছে সব বুথে। সুন্দরবনের প্রান্তিক এলাকার বুথগুলিতে বিদ্যুতের সমস্যায় ভোট থমকে যাচ্ছে কিনা বার বার, সেক্টর অফিসার সেই খোঁজ রাখবেন বলেও জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর। বসিরহাট লোকসভার রিটার্নিং অফিসার আকাঙ্খা ভাস্কর বলেন, ‘‘সব বুথে জেনারেটর ব্যবস্থা থাকছে। বিদ্যুতের অভাবে যাতে সিসি ক্যামেরায় নজরদারিতে কোনও বিঘ্ন না ঘটে, তা দেখা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2024 Ghoramara Sundarbans
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE